অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বাড়ছে ভোগান্তি, নিরসনের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ : ডিসি ট্রাফিক
জরিমানা ১৩ কোটি, তবুও নৈরাজ্য সড়কে!
চট্টগ্রামে সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাস্বরূপ গত ৯ মাসে ৬৭ হাজার মামলায় প্রায় ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ৪টি জোন। আবার ১৭৮৮ মামলায় ৪৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা আদায় করেছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালত। তবুও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন গাড়িতো আছেই, সাথে আছে ভুয়া নাম্বার ব্যবহার করা সিএনজি, অনটেষ্ট/আবেদিত গাড়ি। চালকদের আইন না মানার প্রতিযোগীতা, যত্রতত্র পার্কিং করে যাত্রী ওাঠানামা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পরিবহন শ্রমিক নেতাদের চাঁদাবাজির ফলে যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যানজট যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে আছে নগরবাসীর ফলে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা। বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। তবে এসব বিশৃঙ্খলার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়নকেই দুষছেন পুলিশ।
সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী নাম্বারবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানোতো দুরের কথা ডিলাররা গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করাই কঠোরভাবে নিষেধ আছে। এছাড়া নির্ধারিত রুটে নির্ধারিত গাড়ির সংখ্যা, কালার, ফিটনেস, নির্ধারিত স্থানে পাকিং, দুরত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়াও ঠিক করা আছে অথচ এসব আইনগুলো না মানার ফলে বিচার বা জরিমানায় আনার জন্য নির্ধারিত বিভাগকে দায়িত্বও দেওয়া আছে। যার ফলে সিএমপিত ট্রাফিকের ৪ টি জোন ও বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করছে প্রতিনিয়ত।
নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৯ মাসে সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ জোন ১২,১০৪ টি মামলা ও ১০,৬৬৭টি গাড়ি আটকের মাধ্যমে ৩,৬৯,৩৬,১৫০ টাকা, ট্রাফিক উত্তর বিভাগ ৮,৩৮৩ মামলা ও ৮,১৯০টি গাড়ি আটকের মাধ্যমে ৩.১২,৭৯,১৭৫ টাকা, ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ ৬,০২৮টি মামলায় ও ১০,৩৪৫ টি গাড়ি আটকের মাধমে ৩,৫০,৯১,১৫০ টাকা এবং ট্রাফিক বন্দর বিভাগ ৫,১৩৭টি মামলায় ও ৬,২৭৬ টি গাড়ি আটকের মাধমে ২,৩০,০৩,০৫০ টাকাসহ সর্বমোট ৩১,৬৫২টি মামলা ও ৩৫,৪৭৮ টি গাড়ি আটকের মাধমে ১২,৬৩,০৯,৫২৫ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। অপরদিকে একই সময়ে ১,৭৮৮ মামলায় ৪৮,৭৯,১০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালিত মোবাইল কোর্ট। এসবের সাথে মাঝে মাঝে র্যাবের অভিযানেও আটক করা হয়েছে নাম্বারবিহীন গাড়ি, আবার পরিবহনে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত অনেককেই আটকও করেছেন, কিন্তু এসবের পরেও থামছেনা সড়কের নৈরাজ্য।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির বক্তব্য : এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, শুধু জরিমানা আদায় করে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবেনা। এর জন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। আর জনসচেতনতা বাড়াতে হলে নিজেকে সততার সাথে কাজ করতে হবে, রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, কেউ যদি কারো কাছ থেকে অনৈতিক সুবধা আদান প্রদান করে তাহলে সে আইন মানবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই চাঁদাবাজি বন্ধ করে আইন প্রয়োগে আরো কঠিন হওয়া জরুরী বলে আমি মনে করছি। রাস্তায় নাম্বারবিহীন গাড়ি পাওয়া গেলে চালক,মালিকের পাশাপাশি ডিলারদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিবহন মালিক সমিতির বক্তব্য: এব্যপারে চট্টগ্রাম মহানগরী অটোরিকশা (সিএনজি) অটোটেম্পু মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেট্রো আরটিসির সদস্য টিটু চেীধুরী বলেন, ট্রাফিক ঠিকমতো মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করলে আরো অনেক টাকা আদায় করতে পারবে। কিন্তু তাদের পক্ষপাত আচরণে নিষ্পেসিত হয় বৈধ মালিক চালক, আর সুবিধা নেয় অবৈধ চালক মালিক। চট্টগ্রাম শহরে হাজার হাজার সিএনজি আছে, যেগুলো ভুয়া নাম্বার ব্যবহার করে চলে এবং গ্রামের সিএনজি শহরে চলে, তাদের সাথে ট্রাফিকের অনৈতিক সম্পর্কের কারনে তাদের বিরুদ্ধে তেমন একটা মামলা হয়না, আর আমাদের সব ঠিক থাকার পরেও রাস্তার পাশে একটু দাঁড়ালেই মামলা দিয়ে দেয়। আসলে ট্রাফিকই চায়না সড়কে শৃঙ্খলা বজায় থাকুক, কারন আইন মেনে চললে সুশৃঙ্খল থাকবে সড়ক, তবে অসৎ ট্রাফিকের ধান্দা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই তারা বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রেখে ফায়দা নেয়। আর ট্রাফিক অফিসে একশ্রেণির দালাল আছে যারা মামলা তুলতে গেলে টাকা কম নেয় আবার প্রকৃত মালিক গেলে টাকার পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
পরিবহন শ্রমিক নেতার বক্তব্য : বাংলাদেশ ট্র্যাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উল্যাহ বলেন সড়ক বা নগররের ক্যাপাসিটি বিবেচনা না করেই সড়ক পরিবহন ২০১৮ এর ২৩ এবং ৩৩ ধারা লঙ্ঘন করে গাড়ি নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত, আবার অনিবন্ধিত গাড়িও আছে অনেক, এগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া, সড়কে নৈরাজের প্রধান কারন। সড়কে নৈরাজ ঠেকাতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দ্রুত গতি ও ধীর গতির গাড়ির জন্য আলাদা লেইন চালু করা জরুরী।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম অটো রিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, নগরীতে যানজট কমাতে হলে প্রথমে পার্কিং ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, অনেক বড় রাস্তা আছে, ফুটপাত আছে। অবৈধ দখলদারেরা ফুটপাত দখল করে রাস্তার একটি বড় অংশও দখল করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না, এর ফলে প্রশস্ত রাস্তার সুফল পাচ্ছেনা জনসাধারণ, আর আমাদের কোন গাড়ি ২/৪ মিনিট দাঁড়ালেই রং পার্কিয়ের মামলা দিয়ে দেওয়া হয়, যা অমানবিক। রাস্তায় অবৈধ যানবাহন চলে বীরদর্পে, এসব যানবাহনের সাথে যুক্ত ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা বা বিভিন্ন মালিক শ্রমিক সংগঠনের আড়ালে মধ্যস্থতাকারীদের চিহ্নিত করে ফৌজদারি আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না করে এলোপাথারি রং পার্কিং প্রতিবন্ধকতার নামে মামলা দেওয়া বা ডাম্পিং -এ পাঠিয়ে জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে মালিক শ্রমিকদের হয়রানি করে, সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বা নগরকে যানজট মুক্ত করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
পুলিশের বক্তব্য : এ ব্যাপারে সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণের উপ পুলিশ কমিশনার এন এম নাসিরুউদ্দিন বলেন কাউকে শাস্তি দেওয়া বা জরিমানা আদায় করা আমাদেও মূল লক্ষ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে সচেতন করা, যাতে সবাই আইন মানে এবং সড়কে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। আর সেজন্য আমরা বরাবরই চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদেরও সীমাদ্ধতা আছে, শৃঙ্থলা বজায় রাখতে শুধু আমরা চাইলেও হবে না প্রয়োজন সমন্বি^ত উদ্যোগ। আমাদের সমস্যা একদিনের নয়, যুগযুগ ধরে আমরা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে আসছি, আর পাবলিক শুধু আমাদেরই দোষটা দেখছে, অথচ আমরা জনস্বার্থে আমরা আমাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও কাজ করছি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে জ্যাম পরিষ্কার করা ট্রাফিকের কাজ নয়, পৃথিবীর কোথাও এমনটি করেনা। প্রত্যেকটি মোড়ে ট্রাফিক বক্স থাকবে , তারা বক্সে বসে কাজ করবে। কিন্তু আমাদেও সেই সুযোগ নেই, রাস্তায় জ্যাম থাকলে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করাও একটা বড় ঝামেলা তাই অনেক ক্ষেত্রেই আইন ভঙ্গকারীরা পার পেয়ে যায়। আসলে সেবার ক্ষেত্রে আমাদের সাথে আরো অনেক দফতরই জড়িত, সকলের সহযোগীতা ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। নগরীতে চোখ ঘুরালেই প্রথমে দেখতে পাবেন অপরিকল্পিত নগরায়ন। মার্কেট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল,বাসা/বাড়ি প্রচুর পরিমানে হয়েছে কিন্তু সেই তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমানে পার্কিং ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যত্রতত্র পার্কিং কওে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এটি একটি কারন। এসব ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেনা। যত্রতত্র ভবন নির্মাণ হচ্ছে ১০ বছর পরে সেই জায়গার কি অবস্থা হবে তা বিবেচনা না করেই নগর উন্নয় করা হচ্ছে। ফুটপাত আছে কিন্তু হাটার জায়গা নেই, হকারদের দখলে রয়েছে আবার হকার উচ্ছেদ করাও যাচ্ছেনা, তারা যাবে কোথায় সেই পরিকল্পনা নেই, হকার এবং গ্রাহকের কথা চিন্তা করে তাদের জন্য একটা জোন করা দরখার ছিল কিন্তু সেটা করা হয়নি ফলে চাপ বাড়ছে সড়কে। সড়ক আছে কিন্তু পার্কিং নেই, নির্দিষ্ট টার্মিনাল নেই কিন্তু আমরা সবসময় সব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। এসব সমস্যা থেকে বের হতে আমাদের সুদূর প্রসারী সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয় প্রকল্প গৃহিত হলে আশা করি জনগণ তার সুফল পাবে।
সিডিএ’র বক্তব্য: নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন নগরবাসী সচেনত না হলে, সুন্দর নগর কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের নগরের মানুষ আইন না মানার প্রতিযোগীতা করে, আইনকে অসম্মান করেনা, যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভবনে ছেয়ে গেছে নগরী, আবার যাদের প্ল্যান পাশ করা আছে তারাও ভবন করার পর আইন মানেনা। এসব অপরাধের সাথে অপরিচ্ছন্ন রাজনীতি অনেকটা দায়ী আর বাকীটা অজ্ঞতা। নগর পরিকল্পনায় অনেক ত্রুটি আছে ঠিকই, কিন্তু নানা কারনে সবকিছু শুধরানো সম্ভব হয়না।
বিআরটিএ’র বক্তব্য: এব্যপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল হোসেন বেেলন গেজেট অনুযায়ী নির্ধারিত সিলিং এর বাইরে আমরা কোন গাড়ি নিবন্ধন দিচ্ছিনা। আর রাস্তায় যেসব অনিবন্ধিত গাড়ি চলাচল করছে তা দেখার জন্য ট্রাফিক রয়েছে, আমাদেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণেরা আছেন, সড়কে নৈরাজ্য ঠেকাতে তারাই ব্যবস্থা নিবেন।##
জামান / এমএসএম
থামছেই না ছড়াও, দখল করে ভবন নির্মাণ কাজ
বাঁশখালীতে রিক্সা চালক শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভা
নোয়াখালীতে যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ সভা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ এ,ধানের শীষের কান্ডারী ইঞ্জি: মাসুদ'কে চায় সাধারণ মানুষ ও বিএনপি'র নেতাকর্মীরা
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ
কাউনিয়ায় মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টায় পিতা পুলিশের হাতে
বাঁশখালীতে জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত, গ্রেপ্তার-৩
নন্দীগ্রামে সিএনজি চালককে অপহরণ ও মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ
সুবর্ণচরে আশার আলো সমাজ কল্যাণ সংগঠনের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি
সহকারী এটর্নি জেনারেল হলেন পেকুয়ার কেএম সাইফুল ইসলাম
৭ই নভেম্বর উদযাপন ও খন্দকার নাসিরের মনোনয়ন এর দাবিতে মধুখালী বিএনপির জরুরী সভা
ভোলা-১ আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে বিজেপি, নির্বাচনি প্রচার ও র্যালী অনুষ্ঠিত