পাচারের অর্থ ফেরানোর ক্ষমতা দুদকের নেই

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষমতা আমাদের এখনো নেই। কারণ ওই অর্থ যেসব দেশে পাচার হয় সেসব দেশে সরাসরি যোগাযোগের এখতিয়ার আমাদের নেই। কিন্তু আশার কথা হলো সম্প্রতি ৮ দেশের সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সোমবার দুদকের ১৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বলা হয়, চলতি বছরের (২০২২ সাল) সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুদকে তিন হাজার ৮৭৪টি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন এবং এক হাজার ৫২১টি মামলার তদন্ত চলছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুই হাজার ৭৮৯টি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এ সময়ে দুদকে অভিযোগ জমা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৪৬টি অভিযোগ। একই সময়ে বিচারাধীন রয়েছে তিন হাজার ৩৫৮টি মামলা। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৯৮টি মামলার বিচার কার্যক্রম বর্তমানে চলমান।
সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মূলত অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে সাতটি প্রতিষ্ঠান। আমরা করি এই সাত ভাগের এক ভাগ। তারপরও আমরা অর্থ পাচার ঠেকাতে কাজ করছি। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটাও দীর্ঘ। মতবিনিময় সভায় দুদকের দুই কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান ও জহুরুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুদকের অপর দুই কমিশনারও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থপাচারসহ সম্পৃক্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং অপরাধ দুদকের আওতায় রেখে বাকিগুলোর অনুসন্ধান-তদন্তেরর জন্য সরকারের পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ কাস্টমস, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পরিবেশ অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ফলে দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার, জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অন্য সব অপরাধ দুদকের এখতিয়ারের বাইরে চলে যায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। কেবল ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অর্থপাচারের পরিমাণ বাড়ছে।
এসব কারণে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত সব অপরাধ তদন্তে আগের ক্ষমতা আবার ফিরে পেতে আইন ও বিধি সংশোধনের তোড়জোড় শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যত দ্রুত সম্ভব মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় দুদকের তফসিলভুক্ত যেকোন অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন চায় সংস্থাটি। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি মামলায় দুদক সব মানি লন্ডারিং অপরাধের তদন্ত করবে মর্মে রায় দেয়া হয়। কিন্তু আইন ও তফসিলে শুধুমাত্র ঘুষ ও দুর্নীতির অপরাধকে দুদক তদন্ত করতে পারে, ফলে সেই রায় বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দুদক।
দুদকের ক্ষমতা না থাকায় পানামা পেপারস; প্যারাডাইস পেপারস; প্যান্ডোরা পেপারস; মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্প; কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থপাচারের মতো অনুসন্ধান-তদন্ত করতে পারছে না দুদক। ফলে বিষয়গুলো তদন্তে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ফাইল পাঠিয়ে দিতে হয়েছে।
২০০২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্ত করতে পারতেন। এরপর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০০২ বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ- ২০০৮ জারি করা হয়। ওই অধ্যাদেশের অধীন ১৭টি প্রেডিকেট অফেন্স থেকে উদ্ভূত সব মানি লন্ডারিং এককভাবে শুধু দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য ছিল। পরে অধ্যাদেশটি বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০০৯ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইনেও সব মানি লন্ডারিং এককভাবে শুধু দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য ছিল। কিন্তু মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯ বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০১২ জারি করা হয়। যা পরবর্তীতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ হিসেবে জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১২ সালের সংশোধিত আইনে ১৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের পরিবর্তে ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধ প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এসব অপরাধ এককভাবে দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য করা হয়। অর্থাৎ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের শুরুতে সব সম্পৃক্ত অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র সংস্থা ছিল দুদক।
২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করা হয়। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু একটি (ঘুষ ও দুর্নীতি) অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদককে। ২০১৬ সালের ২১ জুন এটি দুদক আইনে তফসিলভুক্ত করা হয়।এরআগে আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা সম্পত্তি ক্রোকের ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নেই বলে রায় দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ২৫ আগস্ট বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, সম্পত্তি ক্রোক বা ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে চাইলে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সিনিয়র স্পেশাল জজ বা বিচারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আদেশ দিলে তখন ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা সম্পত্তি ক্রোক করার সুযোগ পাবে। এমনকি সেই সম্পত্তি যদি অপরাধলব্ধও হয়ে থাকে। রায়ে আরও বলা হয়, দুদকের কোনো তদন্ত কর্মকর্তা কারো ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিতে পারেন না। তবে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আদালতের আদেশে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার সুযোগ রয়েছে।
দুদকের ১৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আরও উপস্থিত ছিলেন, দুদক কমিশনার জহুরুল হক, ড. মোজাম্মেল হক খান ও দুদক সচিব মাহবুব হোসেন। এরআগে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় মিলনায়তনে সোমবার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুদক চেয়ারম্যান অংশ নেন। আলোচনা সভায় দুদকের বিগত দিনের কার্যক্রম মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা হয়। সভায় দুদক কমিশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএসএম / এমএসএম

ভুয়া লাইসেন্সে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন লেলিন মুন্সি

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে
