ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে


বিশেষ প্রতিবেদক photo বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৭-১১-২০২২ দুপুর ১২:২৫

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপে ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে ঢাকায় এসেছিলেন এনরিক মোরা। সফর শেষে শুক্রবার তিনি ঢাকা ছাড়েন। ঢাকা ছাড়ার আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্তর ও গুণগত মান বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।  

ইইএএস উপমহাসচিব এনরিক মোরা বলেন, সমুদ্র নিরাপত্তার জন্য তাঁদের একটি উদ্যোগ আছে। সেখানে তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে আরো ভালো সহযোগিতার জন্য পারস্পরিক  বোঝাপড়ার ওপর জোর দেন ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) উপমহাসচিব এনরিক মোরা। 

ইইএএস উপমহাসচিব এনরিক মোরা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে সমুদ্র নিরাপত্তা খাতে সম্পৃক্ততায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক দ্রুত বিকশিত ও সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং আগামী বছর উভয় পক্ষ তাদের সম্পর্কে ৫০ বছর পূর্তি করবে। সম্পর্কের মধ্যে আরো শক্তি সঞ্চার করার জন্য এটি একটি ভালো মুহূর্ত।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এনরিক মোরা বলেন, এটা বাংলাদেশের একার ইস্যু নয়। আবার এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুও নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে।

আমরা অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা এবং উন্নয়ন সহায়তা স্থগিতের মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছি। আমাদের বার্তা খুবই স্পষ্ট। আর তা হলো মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্তরণ দরকার। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয়  দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের অব্যাহত উদার ভূমিকা ও পদক্ষেপের জন্য ইইউ তার কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মোরা বলেন, বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমইপি) একটি প্রতিনিধিদল। কিভাবে নিরাপত্তার মানের উন্নতি এবং কাজের পরিবেশ আধুনিকীকরণ করা হয়েছে, তা তারা দেখেছেন। তাঁরা সন্তুষ্টি নিয়ে ব্রাসেলসে ফিরে গেছেন। এ দেশে কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার ভালো মান বলে জানিয়েছেন ইইউ প্রতিনিধিদল। তাঁরা স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। এখন এমনকি ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইনের (এলইইডি)’ সনদ পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘গ্রিণ ফ্যাক্টরির’ কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।  

মোরা বলেন, ‘সামাজিক ও পরিবেশগত সম্মতিতে উন্নতি খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশের শিল্প ভবিষ্যতের জন্য নিজের অবস্থান তৈরি করছে। স্পষ্টতই শিল্পের ভবিষ্যৎ পরিমাণের চেয়ে মানের ওপর বেশি নির্ভর করবে। পোশাক কিভাবে তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। ইউরোপের অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড এটি বুঝতে পেরেছে এবং সেই অনুযায়ী তাদের পণ্য বাজারজাত করেছে।

এনরিক মোরা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ-খাওয়ানো এবং নবায়নযোগ্য উপায়ে পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে ইইউ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈধ চাহিদাগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু অর্থায়নে বৃহত্তম জোগানদাতা। ২০২১ সালে ইইউ এ খাতে ২৩ বিলিয়নের ইউরো দিয়েছে।  

কপ২৭ জলবায়ু সম্মেলনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল নিশ্চিত করতে ইইউর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন এনরিক মোরা। বলেন, বাংলাদেশে প্রশমন ও অভিযোজন প্রচেষ্টায় ইইউ সহায়তা করছে। আমরা ঋণ এবং অনুদানের মাধ্যমে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের জন্য বড় ধরনের সহায়তা  দেব। 

এছাড়াও সমুদ্র নিরাপত্তা, সন্ত্রাস মোকাবেলা, সাইবার নিরাপত্তা, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ও ইইউ একসঙ্গে কাজ করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) উপমহাসচিব এনরিক মোরা। 

৫০ বছর আগে বাংলাদেশ যখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন পৃথিবীর মনোযোগ আকর্ষণ না করলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়ন, গণতন্ত্র এবং ভূরাজনীতির আলোচনায় বাংলাদেশ যে উল্লেখ্য, সেটা অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা অর্জনের অল্প কিছুদিন পরই বাংলাদেশকে একটি আন্তর্জাতিক ‘বাস্কেট কেস’ এবং উন্নয়নের পরীক্ষাগার হিসেবেই চিত্রিত করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরের কয়েক দশক বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত ছিল মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সামরিক অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং দুর্নীতির মতো নেতিবাচক সংবাদের মাধ্যমে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয় ভূরাজনীতির কারণেই।

বিশ্বরাজনীতির অন্যতম শক্তি চীন ও আঞ্চলিক শক্তি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নৈকট্য এবং দক্ষিণ এশিয়াসহ এ অঞ্চলে এ দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনায় এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তির কাছে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তা-ও আন্তর্জাতিক সমাজের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এখন অপরিসীম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নের রোল মডেল তথা ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময়’ হিসেবে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পা রেখেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর ২৫তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র যা নিশ্চিত করবে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ।

একটু গভীরে ভাবলে বোঝা যায়, বাংলাদেশ তিন দিকেই ভারতের সীমান্ত দ্বারা ঘেরা বিধায় উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় রাজ্যগুলোর বিভিন্ন আর্থিক সংযোগ, জনযোগাযোগসহ পরিবহন সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশ অতিগুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ভারতের তীক্ষè দৃষ্টি রয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতার রদবদল ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসহ ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন-রাজনীতি কৌশলের ওপর। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সরাসরি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে যা কৌশলগতভাবে শুধু তিন দেশ নয়, বিশে^র পরাশক্তিধর দেশগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ভৌগোলিক কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে আশিয়ান ও সার্কভুক্ত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি।

প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ গত এক দশকে শুধু অর্থনৈতিক নয় ভূ-রাজনৈতিকভাবে অনেকটা গুরুত্বহীনতার আবেশ কাটিয়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশ আজ এশিয়ার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের মূল কে›ন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিগণিত হয়ে উঠছে। এ কারণে বাংলাদেশকে অত্যন্ত দক্ষতা ও অতি সুচতুরতার সঙ্গে নিজের গড়ে ওঠা গুরুত্বকে কাজে লাগানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধাসহ উন্নয়ন রথযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হবে।  

সে লক্ষ্যে বাংলাদেশকে অবশ্যই নিজস্বার্থসহ পার্শ্ববর্তী দেশ চীন ও  কোয়াডভুক্ত দেশ : ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে সতর্ক ও সচেষ্ট থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ অতি সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে সাউথ ও সাউথ-ইস্ট এশিয়াতে আঞ্চলিক সৌহার্দ রক্ষা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে আঞ্চলিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

বর্তমান বাইডেন সরকার বাংলাদেশ ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা আমাদের জন্য খুবই সহায়ক বলে মনে হয়। তার পরও এতদঞ্চলে আমেরিকার ভূমিকাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন এবং তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক এবং এমন কৌশলগতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক যার মাধ্যমে আঞ্চলিক সমন্বয় ও উন্নয়নে বাংলাদেশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট বৈশি^ক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বীয় স্বার্থ বজায় রাখতে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় আরও বেশি মনোযোগী ও  কৌশলী হওয়া আবশ্যক। সর্বোপরি, ২০২৪-এর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণ অনুসন্ধান করা ও তা মোকাবিলার কৌশল অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। 

 

প্রীতি / প্রীতি

অধরায় গৃহায়ণের প্রশাসক

অনিশ্চয়তায় নির্বাচন

পায়রা বন্দর সংযোগ সড়ক প্রকল্পে উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

দুর্নীতির টাকায় কোটিপতি চসিকের মোরশেদ

রকিবুল হাসান রনি ও তার পরিবারের ভয়ঙ্কর প্রতারণার জাল

পাপ্পীর কানাডা ও আমেরিকার ভিসা বাতিলের আবেদন

আপিল বিভাগের নিদের্শনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ

ঘুষ কেলেংকারীতে ১৫ দিন খালি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের চেয়ার

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমডির বিচার চেয়ে ফের দুদকে আবেদন

উৎপাদন বেড়েছে, খরচ কমেছে, নতুন প্রকল্পে আশার আলো

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সকল সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন করবে : জননেতা অধ্যাপক মামুন মাহমুদ

কারা অধিদপ্তরে সক্রিয় বদলী বাণিজ্য সিন্ডিকেট, মূলহোতা রিয়াল

দুদকের ফাঁদে ফেঁসে গেলেন এম এ কাশেম