ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

হৃদয়ের রক্তে লেখা বন্ধুর জন্য প্রার্থনা


স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া photo স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া
প্রকাশিত: ১৪-১-২০২৩ দুপুর ১১:৫৫
এই বিশাল ঢাকা শহর। এখানে কোটি কোটি মানুষ। এই মানুষের ভিড়ে থাকে কিছু মনের মানুষ। প্রাণের মানুষ। সেই মানুষের মাঝে আছে কিছু কাছের মানুষ। যাদের আমরা বলি বন্ধু। তেমন একজন প্রাণের বন্ধু, প্রিয় বন্ধু মানস বিশ্বাস। ১৯৯৪ সালে ঢাকা আসা আমার আর বন্ধু শাওনের। হতে চেয়েছিলাম অভিনেতা। থিয়েটার এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া আমাদের ১৯৯৫ সালে ঢাকায়। প্রথমে নবধারা, তারপর কালিক হয়ে নাট্যজন। এই তিনটি থিয়েটার দলের হয়ে অনেকগুলো মঞ্চনাটক ও পথনাটকে অভিনয় করি। সেই রঙিন রঙিন দিনগুলোতে কিছু বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়, পরিচয় থেকে ভালোলাগা এরপর বন্ধুতা, একসাথে দিনযাপন, শিল্পযাপন, কবিতাযাপন চলে অনেক দিন। সেই বন্ধুদের মধ্যে আছে সর্বাগ্রে কবি মানস বিশ্বাস, শাওন, উষ্ণিশ কিশোর চক্রবর্তী,, দুর্জয় রায়, নির্মাল্য তালুকদার বাপ্পী, প্রণয় পণ্ডিত, আরিফ,কবি সেলিম বালা ও ছোটভাই মাসুদ আলম সংগ্রাম।এই যে বন্ধুতার সার্কেল, এটা কিন্তু একদিনে গড়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিনের একটা শিল্পযাত্রার মধ্যদিয়ে এটা গড়ে উঠেছে। জীবিকার প্রয়োজনে আমরা অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি নানা জীবন সংগ্রামে। কিন্তু আমাদের কবি বন্ধু মানস বিশ্বাস ছিল শুধুমাত্র কবিতাযাপন নিয়ে। কবিতাই ছিল তার একমাত্র আরাধ্য, কবিতাই ছিল তার জীবন। একসময় শাহবাগ পাড়ায় ‘কপোতাক্ষ সাহিত্য পরিষদ’ নামে একটা সাহিত্য সংগঠন প্রায় প্রতি মাসেই সাহিত্যসভা করতো। এবং এই সভাগুলো হতো শাহবাগ কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরীর সেমিনার রুম ও বড় হলে। এরপর কিছু সভা হয় জাতীয় জাদুঘরের নীচের মিলনায়তনে। আবার কিছু কিছু সাহিত্যসভা হতো জাতীয় জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে। সেই সাহিত্য আসরে দেশের গুণী, বিখ্যাত সাহিত্যিকদের মিলনমেলা বসতো। কবি নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, রফিক আজাদ, ফয়েজ আহমদ, কবি আসাদ চৌধুরী, সমুদ্র গুপ্ত,, কবি মুহম্মদ সামাদ, কাজী রোজী, আসলাম সানী থেকে শুরু করে এমন কোন নবীন প্রবীণ সাহিত্যিক কবি বাকি ছিলেন না যাঁরা এই আসরগুলোতে আসতেন না। সেই সাহিত্যসভাগুলোর কাণ্ডারি ছিলেন আমাদের বন্ধু কবি মানস বিশ্বাস। বয়স তখন অল্প হলেও মেধা ও প্রজ্ঞায় ছিলেন কবি মানস বিশ্বাস অগ্রজ কবিদের মতো। একটা সত্যিই দারুণ কবিতাও সাহিত্যময় দিনছিল সেইদিনগুলো। তারপর মানস বিশ্বাস গঠন করলেন আরেকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অগ্নিবীণা সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ’। সেটাও দীর্ঘদিন চালিয়ে নিলেন একার আগ্রহে। তার দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় একটি ‘কাচপাত্র’ ও অন্যটি গতবছর বইমেলায় প্রকাশিত হয় ‘কাঙ্খিত বিসর্জন’। দুটি কাব্যগ্রন্থই ছিল আধুনিক ও কাব্যময়।আমরা একসাথে চলেছি টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী পার্ক, রমনা, পাবলিক লাইব্রেরী, শাহবাগ, আমতলা, পিজির বটতলা, বইমেলা, থিয়েটার পাড়া থেকে পুরো ঢাকা শহর। সেই অলস বিকাল থেকে রাত অবধি নানা কথার মালা গেঁথে বন্ধুরা কাটিয়ে দিতাম রমনার কালী মন্দিরের ঘাটে ও পিজির বটতলায়। কত স্মৃতি, কত কথা আজিজ মার্কেটের বই মেলায় ঘুরছে এখনো। শাহবাগ কবিপাড়ায় আমাদের কত কবিতা উড়ে বেড়াতো সেই দিনগুলো মনে পড়ে। আজ আমার বন্ধু, মানস বিশ্বাস গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের বেডে। বলতে পারছে না কথা, দিতে পারছে না ধমক বন্ধুদের। আহা এমন জীবন তো চাইনি আমরা, কমলা লেবুর মতো একটি সজীব পেলব প্রাকৃতিক সুগন্ধময় জীবন চেয়েছিলাম। কিন্তু বন্ধু তুই তো আর কথা বলছিস না। তবুও তুই ভালো হয়ে উঠে আমাদের ধমকে দে, কেন আমরা আর শিল্প যাপন করি না। কেন আমরা কবিতা যাপন করিনা তা বলে। বন্ধু তুই ভালো হয়ে ওঠ, আমরা শুধু এই প্রার্থনা করি। আবার তুই কবিতা লিখ হাজার হাজার....তোর কবিতায় জীবন সুন্দর হোক আগামীর। শুধু এই প্রার্থনা। 
 
লেখক- নির্বাহী প্রযোজক, মাছরাঙা টেলিভিশন

এমএসএম / এমএসএম