ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫

দু:খের রাত ফুরাতে চায়না ফুটপাতবাসীর


এসএম পিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো photo এসএম পিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত: ১৮-১-২০২৩ দুপুর ১২:৫১

কথায় বলে কষ্টের সময় দীর্ঘ হয়, যেন শেষ  হয়েও হয়না এমন অবস্থা। ঝড় বৃষ্টি ও মশার সাথে যাদের বসবাসের নিয়মিত অভ্যাস হলেও শীতটা একটু ব্যাতিক্রম। এযেন এক অসহ্য যন্ত্রনা। আর এই যন্ত্রনা নিয়ে দুঃখের রাত শেষ হতে চায়না ফুটপাতবাসীদের। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ছে।
রাত এগারোটা। কোতোয়ালী থানার মোড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ব্যানার গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন চারজন। ব্যানার পুরো শরীর ঢাকতে পারেনি। পা বেরিয়ে আছে। ওখানে তখন ঠান্ডাও বেশ। কথোপকথনের আওয়াজ শুনে চোখ মেলে থাকান রফিক নামের এ ব্যক্তি। নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী। এ যুবকের বাড়ি নোয়াখালী। সারাদিন ভিক্ষা করে সে এবং তাঁর সঙ্গীরা। সারাদিন শেষে আয় হয় দুইশ' তিন’শ  টাকা। এর মধ্যে প্রায় পুরোটই চলে যায় খেতে। তিন বেলার খাবার ছাড়াও পান বিড়ির বদ অভ্যাস আছে বলে জানায় সে। শীত লাগে না? জানতে চাইলে বলেন, লাগলে কি করুম।  বাড়ি থেইক্যা কিছু আনি নাই। আবার সব জায়গাও চিনি না। প্রায় এক মাস ধরে এখানেই রাত কাটান তিনি। অন্য কোথাও যাওয়ার পথ নেই তাঁর। তাঁর পাশে শুয়ে থাকা আল আমিন সরকার (৫৫)। তাঁর মুখে দুঃচিন্তার ছাপ। মশা তাড়ানোর জন্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে থাপ্পর দিতে দিতে বলল, ‘মশার খুব কষ্ট ভাই'। এভাবে ঘুম আসে? জানতে চাইলে বলেন, 'মেলা খাটনির পর আর জাইগ্যা থাকন যায় না। যখন ঘুম আসে না, তখন পরিবারের কথা ভাবি শুইয়্যা শুইয়্যা।
ঠান্ডায় গান বন্ধ হয়ে গিয়েছে শিবলী পাগলা ও কাশেমের। চট্টগ্রাম জেল রোডের ফুটপাতের এক পাশে বসে গত ১৫ দিন আগেও গলা ছাড়িয়ে গান করতো তাঁরা। ইদানিং রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না তাদের অনেককেই। ঠান্ডা যত নামছে ততই নিজেদের  গুটিয়ে গিয়েছেন ভবঘুরেরা। ট্রেনের কামরা থেকে বাসস্ট্যান্ড, রাস্তার ফুটপাত, ওভারব্রীজের নীচে ঠান্ডায় জড়সরো হয়ে রয়েছেন ভবঘুরেরা।

কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ ছক্কা হাঁকিয়ে ঠান্ডা  নামিয়ে কনকনে শীত এনেছে চট্টগ্রামে। সঙ্গে কুয়াশা ঘন মেঘলা আবহাওয়ায় ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকায় কাঁপুনি বাড়তে থাকে। প্রচন্ড শীতে নগরের  ভবঘুরেদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। 

চট্টগ্রাম মেডিক্যালের করিডরেই আস্তানা অন্তত ২০/২৫ জন ভবঘুরের। বর্ষা এবং ঠান্ডার সময়টাই তাদের সমস্যা। সব চেয়ে বেশি কষ্ট ঠান্ডায়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর কয়েকটি শীতবস্ত্র, কম্বল দিয়ে থাকে। সেটাই ভরসা। কাশেম, সাহেদ, রফিক, রহিমা, পান্নাসহ কয়েকজন জানান, ঠান্ডার সময়টা খুবই সমস্যা। কনকনে বাতাসে ফাঁকা করিডরে বসা যায় না। তখন ওয়ার্ডের কাছাকাছি একটা নিরাপদ জায়গা বাছতে হয়।
চেরাগি পাহাড়ের গলির রাস্তায় ঠান্ডার মধ্যে দিনভর বসে রয়েছেন  বৃদ্ধ এক মহিলা। কয়েকদিন আগেও শীতের পোশাক একেবারেই ছিল না। সম্প্রতি তাঁকে একটি কম্বল দিয়ে গিয়েছেন সহৃদয় কোনও ব্যক্তি। তা মুড়িয়েই ভিক্ষা করতে বসে রয়েছেন রাস্তার একধারে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা, সাড়ে সাতটা পর্যন্ত গলি রাস্তাতেই বসে ভিক্ষা করেন। তারপর তাঁর রাত কাটে জামালখান মোড়ের খোলা আকাশের নিচে। তিনি বলেন, রাতে হিম শীতল ঠান্ডায় শরীর অবস হয়ে যায়। 
শীতের রাতে সবচেয়ে বেশি ভবঘুরের ঠাঁই হয় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন, ষোলশহর রেলস্টেশন ও ওভারব্রীজগুলোর নিচে। 
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, একদল ভবঘুরে শিশু শুকনো পাতা, প্লাস্টিক হাতের কাছে যা পায় তা পুড়িয়ে ওম নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। কথা হয় সেলিম, নেওয়াজ, লাকি, তমাল, সাহেদ, রুবেল ও ফাতেমার সাথে। রাতে তারা কেউ দোকানের বারান্দায় আবার কেউ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকেন। তারা জানান, রাতে কুয়াশার চাদরে কাটে তাদের রাত। 
বহদ্দারহাট মোড় থেকে বাঁ দিকে রাস্তা চলে গিয়েছে চকবাজারের দিকে। সেই রাস্তার পাশে জঙ্গী শাহ মাজারের সামনে বসে রিনা। বাসিন্দারা জানালেন, গত কয়েকদিন ধরে গান গেয়ে ভিক্ষে করছে না রিনা। বাসিন্দারা জানেন তাঁর নাম রিনা বৈরাগী। চোখে মুখে বলিরেখা দেখে বোঝা যায় বয়স ষাটের কোঠায়। কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলেন না। দিনভর রাস্তায় ঘুরে গান গেয়ে ভিক্ষে করেন। কনকনে ঠান্ডায় আপাতত রিনার গান বন্ধ। এলাকার এক মিষ্টির দোকানের মালিক একটি কম্বল দিয়েছেন তাঁকে। সেই কম্বল গায়ে জড়িয়েই রাস্তার পাশে বসে থাকেন।

জিইসি মোড় এলাকায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা দোকানের বারান্দায় থাকেন। রাতে পাতলা কম্বল মুড়িয়ে বেহুশের মতো পড়ে থাকতে দেখা যায় গত সোমবার রাতে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরামের মহাসচিব আকতার উদ্দিন রানা বলেন, আশ্রয়হীন ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালকদের কম্বল ও শীতবস্ত্র দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। সবার এগিয়ে আসা দরকার।

চট্টগ্রাম নগরে ভবঘুরেদের নিয়ে চিন্তা করেন এমন দুইজন হলেন প্রত্মত্বত্তবিদ ও ইতিহাস গবেষক সোহেল মোহাম্মদ ফখরু-দ্দীন ও ইসলামি ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করিম তালুকদার বলেন,  ফুটপাত থেকে বারান্দা সম্বল বলতে একটা কাপড়ের পুঁটলি, যার ভিতরে নোংরা জামা-কাপড়ের পাশাপাশি রয়েছে পুরনো অথবা ছেঁড়া একটা কম্বল বা কাঁথা। কনকনে ঠান্ডায় একমাত্র সেটাই ভরসা চট্টগ্রামের বেশিরভাগ ফুটপাতবাসীর। গরমের রাতে শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে তাদের ঠাঁই নিতে দেখা যায় তাদের। কিন্তু ঠান্ডায় বেকায়দায় পড়া সেই ভবঘুরেদের অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন রেল স্টেশনে বা বাস স্ট্যান্ডের কোন সেডের নীচে, তো কেউ বা হাসপাতালের প্রতীক্ষালয়ের এক কোণে। সেখান থেকে অনেক সময় দারোয়ান  বা মানুষের তাড়াও খেতে হচ্ছে তাদের, তখন আবার তাদের ঠাঁই হচ্ছে কোন বন্ধ দোকানের সাটারের নীচে। তাঁদের সহযোগিতায় রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকা দরকার।

এমএসএম / এমএসএম

থামছেই না ছড়াও, দখল করে ভবন নির্মাণ কাজ

বাঁশখালীতে রিক্সা চালক শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভা

নোয়াখালীতে যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ সভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ এ,ধানের শীষের কান্ডারী ইঞ্জি: মাসুদ'কে চায় সাধারণ মানুষ ও বিএনপি'র নেতাকর্মীরা

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ

কাউনিয়ায় মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টায় পিতা পুলিশের হাতে

বাঁশখালীতে জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত, গ্রেপ্তার-৩

নন্দীগ্রামে সিএনজি চালককে অপহরণ ও মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

সুবর্ণচরে আশার আলো সমাজ কল্যাণ সংগঠনের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি

সহকারী এটর্নি জেনারেল হলেন পেকুয়ার কেএম সাইফুল ইসলাম

৭ই নভেম্বর উদযাপন ও খন্দকার নাসিরের মনোনয়ন এর দাবিতে মধুখালী বিএনপির জরুরী সভা

ভোলা-১ আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে বিজেপি, নির্বাচনি প্রচার ও র‍্যালী অনুষ্ঠিত

বগুড়ায় চালককে হত্যা করে অটোরিক্সা ছিনতাই