তাজমিনা আক্তার রুমা
ঘরে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শতরঞ্জি
বুনন শিল্পের মধ্যে শতরঞ্জি সবচেয়ে প্রাচীনতম শিল্প। মজার ব্যাপার হলো এ শিল্পে কোনো যন্ত্রের ব্যবহার হয় না। কেবলমাত্র বাঁশ ও রশি ও মাটির ওপর সুতা টানা দিয়ে হাতে বুনে তৈরি করা হয় শতরঞ্জি। বয়ন কৌশলের দিক দিয়ে এটি চমকপ্রদ একটি শিল্প। এক সময় বিত্তবানদের আভিজাত্যের প্রতীক শতরঞ্জি এখন সাধারণ মানুষের ঘরে ব্যবহৃত হয়েছে হরহামেশা। আগে অভিজাত বাড়ির ঘরে সাধারণ আসন, শয্যা, বিছানা, সভা, মজলিস বা জলসায় বসার জন্য ব্যবহার করা হতো শতরঞ্জি। এখন সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে তাঁদের ঘরে।
১৯১২ সালে প্রকাশিত রংপুর গেজেটিয়ারে ইতিহাসবিদ হান্টার এটার উল্লেখ করেন । ১৮৮০ সালে রংপুরের জেলা কালেক্টর নিসবেত এ অঞ্চলের শতরঞ্জির নির্মাণ-শৈলী দেখে মুগ্ধ হন এবং এ শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশ শাসনামলে সমগ্র ভারত, শ্রীলঙ্কা, বার্মা (মিয়ানমার), ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ নানা দেশে প্রচুর শতরঞ্জি বিক্রি হতো। ভারত বিভক্তির পর শতরঞ্জি শিল্পের সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে শুধুমাত্র রংপুরে ক্ষুদ্র পরিসরে টিকে আছে শিল্পটি। নানা প্রতিবন্ধকতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে আবহমান কাল ধরে নিজস্ব ঢঙে শতরঞ্জি শিল্পীরা সহজাত শিল্প প্রতিভায় শতরঞ্জি তৈরি করে যাচ্নছে। শতরঞ্জি তৈরির মূল উপকরণ হলো সুতলি। স্থানীয় বাজার থেকে কটন সুতা, পাট, শ্যানালসহ বিভিন্নরকম ফাইবার কিনে নিজেদের পছন্দমত রং করে নেয় তাঁতিরা। সুতা টানা দেয়া হয় বাঁশের ফ্রেমে। এসব টানার দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ৩৫ ফুট হয়ে থাকে। সুতার বান্ডিল তৈরি করে মেঝেতে বিছিয়ে হাতে বোনা হয় শতরঞ্জি। নকশা হিসেবে শতরঞ্জিতে থাকে নারীর মুখ, পশু পাখি, রাখাল বালক, কলসি কাঁখে নারী, রাজা রানী, দেব দেবী, পৌরানিক চরিত্র, প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদি। এছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শতরঞ্জির ডিজাইনে ভিন্নতা দেখা যায়। এসব ডিজাইনে লাল, নীল, কালো রঙের প্রাধান্য বেশি দেখা যায়।
Sunny / Sunny