বড় হবার প্রেরনা একজন নরীকে করেছে উজ্জীবিত পৌছে দিয়েছে সপ্ন বাস্তবায়নের কন্খিত স্থানে

দ্বীপজেলা ভোলায় চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট এই মেয়েটির জন্ম হয় ১৯৮৯ সালের ৬ জুন। পরিবারের ছোট হওয়ায় সবার মধ্যমনি সে এবং বাবার আদুরে। মা ছিলেন সরকারি চাকরীজিবি এবং বাবা ব্যবসায়ী।ছোটো বেলা থেকেই ছিলেন ভীষন চঞ্চল। শিখেছেন মার্শাল আর্ট। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন দুরন্তপনার জন্য তার বা হাত ভেঙে গিয়েছিলো। কিন্তু তাকে দমিয়ে রাখার সাধ্য কার! চঞ্চলতা যেনোই বেড়েই চলছে।
লেখালিখির হাত ও ছিলো বেশ। পত্রিকায় মাঝে মধ্যে লেখা ছাপা হতো তার। এস এস সি শেষ করে চ্যানেল আইয়ের সেরা রাধুনী-তে অংশগ্রহন করলেন। তার উদ্দেশ্য ১ম,২য়,৩য় হওয়া নয়, উদ্দেশ্য হলো অংশগ্রহণ করা।
এভাবেই শেষ হলো তার স্কুল জীবন। বাবা চাইতেন সে ডাক্তার হবে আর মা চাইতেন ভাল একটা সরকারি চাকরি করুক তিশা। কিন্তু তিশার স্বপ্ন ছিলো আকাশ ছোঁয়া যা সে কাউকে বলতে পারেনি।এইচএসসি শেষ হতে না হতেই পরিবারের অমতে বিয়ে করলেন ভালবাসার মানুষটিকে। কিন্তু সময়টা তার পক্ষে ছিলোনা। সংসার জীবনটাও ছিলো ঝামেলাময়। সাধারন বাংগালী মেয়েরা মনে করে বিয়ের পর সন্তান আসলেই সংসারের অশান্তি কমে যাবে, আর তিশা ও ঠিক তাই করলেন। কিন্তু হলো তার উল্টো।
হিসাব বিজ্ঞান এ অনার্সে ভর্তি হয়ে ও শেষ করতে পারলো না পড়াশুনা। নিজের প্রয়োজনে ২০১২ সালে শুরু করলো হ্যান্ডিক্রাফটের ব্যবসা আর নিজের উপার্জনে আবার পড়াশুনা শুরু করলেন। পাস কোর্স করতে হলো কারন ততদিনে আর অনার্স করার সুযোগ নেই।এইদিকে, প্রথম সন্তানের ২ বছর পরেই এলো তার ২য় সন্তান। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন নেই।এরমধ্যে তার স্বপ্ন এসে ধরা দিয়েছিলো হাতে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেছিলেন কাতার এয়ারওয়েজে। ইন্টারভিউ'র জন্য মেইল আসলো। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু সুযোগ থাকা সত্বেও সে চাকরিটা করতে পারলেন না পরিবারের জন্য। সুযোগ এসেছিলো নির্বাচন কমিশনে চাকরি করার ও কিন্তু তাও পারলেন না।
২০১৫ সালে এসে তাকে হ্যান্ডিক্রাফটের ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হলো। পারিবারিক অশান্তি যেনো বেড়েই চলছে। কোনোভাবেই তার সংসার টিকলো না। ২০১৭ সালে বিচ্ছেদ হলো। তিনি তার বিচ্ছেদের জন্য কাউকে দোষ দেন না, বিচ্ছেদ মানেই কাউকে খারাপ হতে হবে কেন! তিনি মনে করেন সৃষ্টিকর্তা যা ভাগ্যে রেখেছে তাই হবে, কারন তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী। বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি পুরোপুরি নিঃস্ব। দুটি সন্তান নিয়ে পুরোপুরি একা। বাবার বাড়ির লোকজন ও পাশে ছিলোনা তার। কিন্তু তিশা তো থেমে যাওয়ার পাত্র নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যারা আজ তার যোগ্যতা নিয়ে আঙুল তুলেছে তারাই যেনো একদিন অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয় তাকে, এইভাবেই তিনি নিজেকে গড়ে তুলবেন। দুই সন্তান নিয়ে একটা বাসা ভাড়া নিলেন কিন্তু মাস শেষে ভাড়া কোথা থেকে দিবেন তা জানা ছিলো না। জানতেন না সেদিন দুপুরে কি রান্না হবে।
৬/৭ দিন ভেবে ফেসবুকে একটা পেইজ এবং গ্রুপ করে পার্লার ব্যবসা শুরু করলেন নিজের বাসায়। কোনো ডেকোরেশন নেই, শুধু নামেই পার্লার। মফস্বল শহরের মেয়ে বলে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিলো। অনেক অনেক বাধা আসলো, সমালোচনা হলো। কিন্তু তিশা সব কিছু কে তুচ্ছ করে তার মত করে জীবনযুদ্ধ শুরু করলেন। তিশার বিশ্বাস আমি যখন সফল হবো তখন এরাই আমাকে নিয়ে গর্ব করবে, আমার কাছের লোক বলে নিজের পরিচয় দিবে। যেই সমাজ আমার বিপদে আমার পাশে নেই সেই সমাজের জন্য কেন আমি থেমে যাব। কেমন আছি তো দুরের কথা, বেঁচে আছি কিনা জিজ্ঞেস করার যার কেউ নেই সে কেন থেমে যাবে। নিজের এই জেদ কে শক্তি হিসেবে নিলেন তিশা এরমধ্যেই পেলেন ব্রাইডাল সাজের অর্ডার। কিন্তু সাজানোর মত তেমন কোনো উপকরন তার ছিলোনা। নিজের সাজের উপকরন দিয়েই বউ সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার বিশ্বাস তার হাতের জাদুতে সাজ নিশ্চয় সুন্দর হবে এবং হলো ও তাই। শুন্য হাতে ব্যবসা শুরু করে বউ সাজিয়ে প্রথম উপার্জন হলো ২৯০০ টাকা। এরপর আস্তে আস্তে পথ চলা শুরু। বছরখানেক পরেই বুটিক হাউজ দিলেন পার্লারের সাথে।
এরপর বিভিন্ন কোর্স করতে প্রায়ই ঢাকা যেতেন নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বড় করতে।
তিশাবিশ্বাস করেন দুনিয়াতে অসাধ্য বলতে কিছু নেই। আমি পারি, আমি পারবো এবং আমাকে পারতেই হবে। প্রবল আত্নবিশ্বাস আর ইচ্ছাশক্তি নিয়ে তার সামনে এগিয়ে চলা অব্যাহত রইলো।২০১৭ সালে তার বাম এবং ২০১৮ সালে ডান পা ভেঙে গিয়েছিলো অসাবধানতা বশত। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে তিনিই এগিয়ে চলছেন।
কাজ ভাল হওয়াতে প্রায়ই পত্র পত্রিকার, ম্যাগাজিনের ফটোশ্যুটের জন্য ডাক পেতেন। এরপর ২০১৯ সালে বেস্ট বিউটিশিয়ান এওয়ার্ড এর জন্য নমিনেশন পেলেন এবং এওয়ার্ড ও পেলেন। এরপর বেগম রোকেয়া সম্মাননা, জাতীয় নারী উদ্যোক্তা সম্মাননা সহ অনেক অনেক পুরস্কার পেলেন।
এর মধ্যে শুরু করলেন খাবারের ব্যবসা। প্রথমবারের মত ভোলার মানুষকে হোম ডেলিভারি সার্ভিস-এর সাথে পরিচিত করালেন, শুরু হলো তার রসুইঘরের যাত্রা। খুব অল্পদিনেই রসুইঘর এর খাবার সবার মন জয় করলো। সাথে শুরু করলেন Tirans নামে অনলাইন শপ। বুটিক হাউজের নাম পরিবর্তন করে দিলেন Tiran's heaven. ২০২০ এ এসে শুরু করলেন T20 food নামে আরেকটি খাবারের ব্যবসা। তিশা স্বপ্ন দেখেন, বাংলাদেশের ৬৪ টা জেলায় তার Tirans Ltd এর কম হলেও একটা করে আউটলেট থাকবে।
আর........যারা সমালোচনা করেছেন তারাই এখন তিশা কে নিয়ে গর্ব করেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিশাকে নিয়ে লেখার পেপার কাটিং সংগ্রহ করেন তারা শখের বশে, টিভিতে তিশার প্রোগ্রাম দেখে তাকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
২০২০ এর ২৩ সেপ্টেম্বর শুরু করলেন ভোলা ট্যুরিস্ট ক্লাব। এইবার তিনি চান নিজের জেলা কে ব্র্যান্ডিং করতে। ভোলার সব দর্শনীয় স্থান গুলোর পরিচয় করিয়ে দিতে চান বাংলাদেশের মানুষের সাথে।ভোলা ট্যুরিস্ট ক্লাব নিয়ে লক্ষ্য একটাই দ্বীপের রানী ভোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র।
২০২০ শ্রেষ্ঠ জয়ীতা এওয়ার্ড ও দখল করলেন। ২০২১ এবং ২০২২ সালে ও best women entrepreneurs এর বেশ কয়েকটা এওয়ার্ড তিনি অর্জন করেছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন সরকারি প্রোগ্রামে এটেন্ড করার আমন্ত্রনপত্র আসেন প্রায়ই। দুবাইতে best diplomats হিসেবে ও আমন্ত্রন পেয়েছেন কিন্তু তিনি দুবাইতে না যেয়ে মালয়েশিয়ার এই প্রোগ্রামে এটেন্ড করবেন বলে ঠিক করেছেন।
আর এভাবেই এগিয়ে চলছে এক হার না মানা নারী। আর তার লক্ষ্য একটাই সে...... ভবিষ্যতে অসহায় মেয়েদের জন্য কিছু করবে।
এমএসএম / এমএসএম

ব্যতিক্রমী ধারার আলো নেভার পথে

টেকসই কৃষির জন্য চাই জৈব বালাইনাশক

ঈদযাত্রা হোক দুর্ঘটনামুক্ত

রমজানে ভ্রমণে যে বিষয় মেনে চলা জরুরি

সুস্থ থাকার জন্য কেমন পানির ফিল্টার নির্বাচন করবেন

সাপের ক্ষিদে মেটাতে পাখিশূন্য দ্বীপ

একদিনের ট্যুরেই ঘুরে আসুন চীনামাটির পাহাড়ে

আধ্যাত্মিকর যাত্রা পথে সুফি মেডিটেশন এর গুরুত্ব

খাজা ওসমান ফারুকীর কুরআন দর্শন

খাজা ওসমান ফারুকীর সুফি তত্ত্বের নিদর্শন

'আরএনএস রাজিম একজন সফল ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তার গল্প'

প্রাক্তনের খোঁজ নেওয়ার দিন আজ

বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ১০ দেশ
Link Copied