ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য পোল্ট্রি ও গবাদী পশু খাতে সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি


সৈয়দ আককাস উদদীন, সাতকানিয়া  photo সৈয়দ আককাস উদদীন, সাতকানিয়া
প্রকাশিত: ২১-৮-২০২৩ বিকাল ৫:৬
‘ইসলামী ব্যাংক কেরানীহাট শাখা থেকে দেড় কোটি টাকা লোন নিয়ে মৎস্য খামার গড়ে তুলি। আমার প্রায় ৪০ কানি জায়গায় ৫০টির মত ছোট-বড় মৎস্য খামার ছিল। বড় মাছ যেমন, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, মৃগেল মাছ ও সাদা মাছ ৮৫ লাখ টাকা, ২৫ লাখ টাকার পোনা ও ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মৎস্য খামার ভেঙে সব মাছ চলে গেছে। এখন বলতে গেলে আমি একেবারে নিঃস্ব। আমার মাথায় কাজ করছে না। কিভাবে লোনগুলো পরিশোধ এবং ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব’। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের মৎস্য খামারি মো. সেলিম উদ্দিন এভাবে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ২০০৪ সালের এসএসসি পাশ করার পর মৎস্য খামারে বাবাকে সময় দিতাম। ২০০৫ সালে পুরোপুরি এ ব্যবসায় নিজেকে নিয়োগ করি। প্রথমে বাবার পুঁজি, এতে যোগ করা হয় ব্যাংক লোন। এভাবে ১২ বছর উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে চললেও ২০১৬ সালের বন্যায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০১৯ সালের বন্যায় ক্ষতি হয় দেড় কোটি টাকা। তবুও ক্ষতি পুষিয়ে ব্যাংক লোন ও ধার নিয়ে চালিয়ে যায় ব্যবসা। তবে, ২০২৩ সালের এবারের বন্যায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। এখনও লোন রয়ে গেছে। অতীতের মত সেই সামর্থ্য এখন আমার তেমন নাই। জানিনা কিভাবে ঘুরে দাঁড়াব? মাথায় কাজ করছে না। এবারের বন্যায় শুধু সেলিম উদ্দিনই নয়, পানিতে ডুবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে অনেক খামারি পথে বসেছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে কেঁওচিয়া ব্যবসায়ী পাড়া এলাকার মৎস্য খামারি মো. সেলিম বলেন, আমার অন্য কোন ব্যবসা নাই। শুধু মৎস্য খামারের আয়ের উপর আমার সংসার চলে। এবারের বন্যায় আমার পরিবারের নির্ভরতার একমাত্র সম্বল দুটি মৎস্য খামার সম্পূর্ণ ডুবে গিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। কিভাবে ক্ষতি পুষিয়ে উঠব তা বলা মুশকিল। ঢেমশা ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকার অপর মৎস্য খামারি জাফর আহমদ বাবুল বলেন, তাঁর ১৯টির মত ছোট-বড় মৎস্য খামার রয়েছে। পানিতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার অধিক মাছ চলে গেছে। আর মৎস্য খামারিদের নিকট খাদ্য বিক্রি বাবদ ২০ লাখ টাকার অধিক পাওনা রয়েছে। সে বাকী টাকা গুলোও পাব কিনা সন্দেহ পোষন করেন।
 
বাবুল আরও বলেন, এবারের বন্যায় মো. এহসান, মো. বাবুল, জাফর আহমদ, হাবিবুর রহমান, মো. ইয়াছিন, মো. মহসিন মেম্বার ও বাবুল দাশ সহ অন্ততঃ ৫০ জনের অধিক মৎস্য খামারি রয়েছে। সবার কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। পুরো উপজেলায় সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমান আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা হবে।
 
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈকত শর্মা ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইউএনওর নিকট পাঠানো ক্ষতির তালিকায় দেখা যায়, ৩ হাজার পুকুর ডুবে ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
 
কৃষিঃ-
উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের দক্ষিণ ছদাহা এলাকায় বারোমাসি তরমুজ চাষ করেন, আবুল হাশেম। তিনি এবার ৫ কানি জমিতে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেছেন। কিন্তু এবারের বন্যার পানিতে তরমুজ পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এব্যাপারে আবুল হাশেম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আইয়ুব এর সাথে পরামর্শ করে বারোমাসি তরমুজ চাষ করেছিলাম। কিন্তু পানিতে পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। যদি সমস্যা না হত তাহলে সাড়ে ৭ লাখ টাকার মত লাভবান হতাম। একইভাবে হাশেমের আপন ভাই আবুল কাশেমও ৪ কানি জমিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ করে পানিতে ওই তরমুজ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায় বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। শুধু তরমুজ চাষই নয়, দু’ভাই মিলে ৮ কানি জমিতে চাষ করেছিলেন পেঁপে। পুরো ক্ষেতই পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ৫ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। কিন্তু তরমুজ নষ্ট না হলে উৎপাদন খরচের অর্ধেক লাভ হতো। এব্যাপারে ছদাহার এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আইয়ুব বলেন, ছদাহা এলাকায় শুধু আবুল হাশেম ও আবুল কাশেম নয়, আমির হোসেন, আবুল হোসেন ও আবুল ফয়েজ স্মার্ট কৃষক। তাঁরা লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কাকরোল, বরবটি ও বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করে এবারের বন্যার পানিতে ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছেন।
 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইউএনও’র নিকট পাঠানো তালিকা থেকে জানা যায়, এবারের বন্যায় সাতকানিয়ার ২৬ হাজার ২৯৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সর্বমোট ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমান দেখানো হয়েছে ২৮ কোটি ৬৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে আমন বীজতলা, আউশ, শাক-সবজি, পান, পেঁপে বাগান, তরমুজ, রোপা আমন, অন্যান্য ফসলি ক্ষেতের মধ্যে ফল বাগান, মসলা, মিশ্র বাগান এবং আখও রয়েছে। এ ফসলি ক্ষেতগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমান ১ হাজার ৭৪২ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতির পরিমান ৪২২ হেক্টর। মোট ফসলী জমির ক্ষতির পরিমান ৬৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
 
এব্যাপারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত) শম্ভুনাথ দেব বলেন, এবারের বন্যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে সাতকানিয়ায় ফসলী ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকার কর্তৃক দেওয়া সার ও বীজ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব।
 
প্রাণী সম্পদঃ-
সাম্প্রতিক বন্যায় বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন পোল্ট্রি শিল্প। এদের মধ্যে অনেকেই শুধু পোল্ট্রি ব্যবসার উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের মধ্যে কথা হয় উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের মৌলভীর দোকান এলাকায় অবস্থিত হযরত শাহ্ পরান পোল্ট্রি ফার্ম এর ম্যানেজার সুব্রত দাশের সাথে। তিনি বলেন, তাঁর মালিক আবদুর রহিমের কালিয়াইশ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫টি ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১টিসহ মোট ৬টি ব্রয়লার মুরগীর খামার রয়েছে। এ খামারগুলোতে ৩০ হাজারের মত ছোট-বড় মুরগী ছিল। যে মুরগীগুলো বিক্রি করতে পারলে ৪০ লাখের কাছাকাছি লাভবান হতাম। এখন সব লাভ বানের জলে ভেসে গেছে। শুধু আবদুর রহিম নয়, এভাবে কালিয়াইশে আইয়ুব আলীর ৩ হাজার ৬০০ মুরগিতে ৮ লাখ ও মফিজুর রহমানের বাচ্চা মুরগীতে দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্রয়লার ও লেয়ার খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখী হয়েছেন। শুধু পোল্ট্রি নয়, অন্যান্য গবাদি পশু ও পাখিরও ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বন্যা কবলিত গবাদি পশুর খামারের সংখ্যা ৭৫টি। এর মধ্যে গবাদি পশুর সংখ্যা ১ হাজার ২২০ টি। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। হাঁস-মুরগীর খামারের সংখ্যা ১২০টি। হাঁস-মুরগীর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার। ক্ষতি ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার। এর মধ্যে ১৩টি গরু, ৫টি ছাগল, ৫৮ হাজার ৮০০ টি মুরগী ও ২০টির মত হাঁস মারা যায়। প্লাবিত চারণ ভূমির পরিমান ১২০ একর। এছাড়া দানাদার খাদ্যে ১ লাখ ২০ হাজার, বিনষ্ট খড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার ও বিনষ্ট ঘাসে ১ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২ কোটি ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। সাতকানিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, গবাদি পশু ক্ষতি বাবদ ২ হাজার ১০০ টাকা, হাঁস-মুরগী বাবদ ৭ হাজার ৪০০ টাকা প্রদান এবং ৬৪০ টি গবাদি পশু ও ৭ হাজার ৩০০টি হাঁস-মুরগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

এমএসএম / এমএসএম

রাজবাড়ীতে বাড়ি থেকে মাকে বের করে দিল ছেলে-পুত্রবধূ!

ডাকসুর নির্বাচনে শামসুন্নাহার হলের জিএস নির্বাচিত হয়েছেন নরসিংদীর সামিয়া

জুড়ীতে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার

জয়পুরহাটে কারাতে প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান

বাকেরগঞ্জে দূর্গোৎসব উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ১৬০০ কেজি পলিথিন জব্দ

মাতৃভূমি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বিজ্ঞান উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠিত

কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিজিবির অভিযান, সাত দিনে ২ কোটি ১১ লাখ টাকার মাদকসহ অবৈধ মালামাল জব্দ

ঢাকা ভাংঙা এক্সপ্রেসওয়েতে ২য় দিনের মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ, বিকল্প পথে সড়কে বেড়েছে যানজট

চিতলমারীতে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল: সড়ক অবরোধে অচল জনজীবন

রায়পুরে নিরক্ষরদের হাতে কলম তুলে দিল শিবির

ঠাকুরগাঁওয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রামদাড়া সেতুতে জীবন বিপন্নের আশংকা

জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে সিএসও