শাহানা বেগম আঁশা
অনেকেই চিনেন বাটার বন আপু হিসেবে
বাবা,মা ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছিলো মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সাধারণত সব বাবা-মা এমন ইচ্ছে করে থাকেন। তবে শাহানা একটু বড় হয়ে চেষ্টা করেছে ব্যাংকার হতে। মাস্টার্স শেষ করার পর একটি ব্যাংকে চাকরি হয়েছিল। কিন্তু, ছেলে ছোট থাকার কারণে এবং ব্যাংকের শাখা নিজ বাসা থেকে দূরে হওয়ায় চাকরিটা করা হয়নি। তবে এখন শাহানা একজন নারী উদ্যোক্তা এ পরিচয়টি তাঁকে খুব আনন্দ দেয়। শাহানার উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয় করনাকালীণ সময়। নারী উদ্যোক্তা সংগঠন ‘উই’ গ্রুপে যুক্ত হয়ে উদ্যোক্তা হবার বাসনা জাগে মনে। শাহানার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘স্বাদ ও সাধ্য বিডি’। ২০২০ সালে জুলাই মাসে যুক্ত হন উই গ্রুপে তাঁর পণ্যের প্রথম অর্ডার আসে সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ। সেদিন থেকে আজ অব্দি প্রতিদিনই তাঁর প্রতিষ্ঠানের পণ্য যাচ্ছে পুরো বাংলাদেশে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের সিগনেচার পণ্য বাটার বন। অনেকেই তাঁকে চিনেন বাটার বন আপু হিসেবে। এছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘স্বাদ ও সাধ্য বিডি’’ তৈরি করে নিজস্ব ফার্মের দুধ দিয়ে স্বরের ঘি, ৫ ধরনের পনির, ৬ ধরনের মাখন, ঘরে তৈরি নারিকেল তেল, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খাবার শন পাপড়ি, মোয়া, মতিচুরের লাড্ডু, মুরুলি, নিমকি এবং চানাচুর। এছাড়াও এক চাপের ঘানিতে ভাঙ্গানো খাঁটি সরিষার তেল, সাজনা পাতার গুঁড়া, সিয়া সিড, ঘিয়ে ভাজা কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, চিনা, পেস্তা বাদাম এবং ১১ ধরনের বিভিন্ন স্বাদের পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাখরখানি। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৩ জন কর্মী আছে। বছরে লেনদেন হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। শাহানার পণ্যের অর্ডার বেশি হয় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, বাড্ডা, গুলশান, বসুন্ধরা, ক্যান্টনমেন্ট, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, ধানমন্ডি, ওয়ারি এই এলাকা গুলোতে। প্রতিষ্ঠান বড় করা প্রসঙ্গে শাহানা বলেন, অনেক বেশি ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার যার জন্য গুটিগুটি পা করে এগোচ্ছি। কিছু সেভিংস করছি নিজে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করছি। যাতে আরো ভালো করে এগোতে পারি সেল বাড়াতে পারি এবং একটি ভালো এমাউন্ট জমিয়ে প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগিয়ে বড় আকারে কাজ করতে পারি। শাহানা আমদানি বা রপ্তানি না করেও তাঁর অনেক পণ্যই বিভিন্ন দেশে গিয়েছে লন্ডন, কানাডা, ইতালি, আমেরিকা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সৌদি আরব এই দেশগুলোতে শাহানার হাতের তৈরি ঘি, জাফরান, বাদাম মিক্স পাউডার, আখের জুস পাউডার, আমসত্ত্ব পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি এবং রিসেন্টলি ১০পিস বাটার বন গিয়েছে সৌদিতে। শাহানার মায়ের নাম নার্গিস হক এবং বাবার নাম মৃত আব্দুল হক। পুরান ঢাকার স্থানীয় মেয়ে। তাঁর বেড়ে ওঠা বংশাল। পুরান ঢাকার আহমেদ বাওয়ানী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে মাস্টার্স কমপ্লিট করেন একাউন্টিং নিয়ে। স্বামীর নাম মো: মারুফ মোর্শেদ মজুমদার। শাহানা এতদূর আসতে পেরেছে তাঁর স্বামীর সহাযোগীতায়। তাঁর স্বামী তাকে প্রতিটি কাজে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। ছেলের নাম আব্দুল্লাহ মোর্শেদ মজুমদার এবং মেয়ের নাম মুসারাৎ মোর্শেদ মজুমদার। ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে অগ্রগামী শিশু নিকেতনে। মেয়ে পড়ছে সেন্ট ফ্রান্সিস প্লে তে। বর্তমানে পুরান ঢাকায় বংশালে বাস করছেন। সব কাজ বাসা থেকেই করেন। তবে তাঁদের একটি অফিস আছে মতিঝিল দিলকুশায়।
Sunny / Sunny