ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাণীশংকৈলে জয়িতা সন্মাননা পাওয়া সফল ৫ নারীর গল্প


মাসুদ রানা লেমন, রাণীশংকৈল photo মাসুদ রানা লেমন, রাণীশংকৈল
প্রকাশিত: ১০-১২-২০২৩ দুপুর ৩:১০

সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন দেশের নারী সমাজ। দেশের  উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি বিশেষ অবদান রাখছে এদেশের নারীরা। প্রাণপণ চেষ্টা ও সংগ্রামে মধ্য দিয়ে নারীরা তাদের জীবনে সফলতা বয়ে আনছে।সকল বাঁধা ও সমাজের  প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে দেশের উন্নয়নে অগ্রনীভুমিকা পালন করছে। নারী বলতে এখন পিছিয়ে পড়া নয়। সমাজে নানা প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে যারা সফল হয়েছে তারাইতো জয়িতা। সমাজে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবদান ও ব্যক্তি জীবনে সফলতা পেয়ে এমন সংগ্রামী নারীদের ৫ টি ক্যাটাগরিতে জয়িতা সন্মাননা প্রদান করে থাকে। যা সংগ্রামী নারীদের জন্য বিরল একটি সন্মাননা, সরকার উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে এ সন্মননা প্রদান করে থাকে। সন্মাননা নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় এ বছর বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৩ জয়িতা সন্মাননা পেলেন ৫ সফল নারী। রাণীশংকৈল উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা সন্মাননা পাওয়া নারী অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে অনামিকা রাণী তিনি রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামের বিমল চন্দ্র রায়ের মেয়ে। অনামিকা রাণীর পরিবারের সাতজন সদস্য পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তার বাবা পেশায় একজন কৃষক হওয়ায় সংসারের সকল অভাব মেটানো তিনার পক্ষে খুব কষ্টসাধ্য ছিল। অনামিকা যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। নিজের পড়াশোনা খরচের জন্য নিজ এলাকায় টিউশনি করিয়ে অনেক সুনাম অর্জন করে। ২০১৪ সালে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অনামিকা। ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করে। তারপর একাদশ শ্রেণীতে রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়। এরপর তার পড়াশোনার খরচ আরো বেড়ে যায়। তখন তিনি বাড়ির পাশের একটি  বিদ্যালয়ে টিউশনি করানোর শুরু করেন।  সকাল ৭ টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিনি প্রাইভেট পড়াতেন এখান থেকে তিনি একটি উপার্জনের রাস্তা খুঁজে পাই। এবং তিনার বোনদের পড়ালেখার খরচ বাবদ কিছু টাকা সঞ্চয় করেন। পরবর্তীতে তিনি ওই টাকা দিয়ে একটি গরু ক্রয় করেন বাড়িতে আগে থেকেই চারটি গরু ছিল এখন তিনার গরু সংখ্যা হল পাঁচটি ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঠাকুরগাঁও মহিলা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়।  অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় তিনি বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করা শুরু করেন। ২০২১ সালে  সরকারিভাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ৭ দিনের গাভী প্রশিক্ষণ নেন ‌তারই সূত্র ধরে গাভী পালনে অনুপ্রাণিত হয় পরবর্তীতে তিনি আরেকটি গাভীর ক্রয় করেন। আরো চারটি বাছুর জন্ম হয়। এ নিয়ে তার গরুর সংখ্যা হয় ৯টি, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪লক্ষ টাকা এবং যুব উন্নয়নের সূত্র ধরে উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে যুব ঋণ নিয়ে সে অর্থ দিয়ে তিনি সুন্দরভাবে একটি খামার ঘর নির্মাণ করেন। খামারটি নাম দেয় অনামিকা ডেইরি ফার্ম বর্তমানে তিনার গাভী ও  বাছুরসহ মোট ১৪ টি গরু রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ভবিষ্যতে তার খামারটি আরও সম্প্রসারিত হলে সে অনেক লাভজনক হবে।  বর্তমানে তিনার পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল। বর্তমানে তিনি একজন সাফল্য অর্জনকারী নারী।

শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে জয়িতা সম্মাননা পান মেহেবুবা আক্তার। তিনি রাণীশংকৈল উপজেলার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ভান্ডারা গ্রামের মনিরুজ্জামানের স্ত্রী। তিনি অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও অক্লান্ত পরিশ্রম কঠোর মনোবল পারিবারিক উৎসাহে মধ্য দিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনার  ইচ্ছা ছিল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তাই তিনি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৯ম গ্রেডের একজন গেজেট কর্মকর্তা, সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এবং ১৯৯৯ সালে এইচএসসি ও ২০০৫ সালে বিএড অর্জন কালে তিনার বিয়ে হয়। পরে তিনি বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করার সময় বিএড কমপ্লিট করেন। অদম্য ইচ্ছাটুকু নিজের অজান্তে অন্তরে এই দিন-রাত অধ্যায়ন করে চাকরি চেষ্টায় অব্যাহত করতে থাকেন। পরবর্তীতে পরিশ্রমের ফলে ২০০৯ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার এই চেষ্টা এবং পরিশ্রম সংগ্রামী জীবনে আজ তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অদম্য ইচ্ছা শক্তি অক্লান্ত পরিশ্রম কঠোর মনোবল আর পারিবারিক উৎসাহ ও সহযোগিতায় আজ তিনি জয়িতা শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী একজন নারী।

সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে রুবিনা খাতুন তিনি রাণীশংকৈল উপজেলার নয়নপুর গ্রামের আলফাজ উদ্দিন এর স্ত্রী ১৯৬৫ সালে রুবিনা বেগমের জন্ম হয়। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার খোঁচাবাড়ি গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ৯ ভাই বোনের সংসারে বাবা ছিলেন। একজন ব্যবসায়ী রুবিনা খাতুন একজন জননী এবং পেশায় গৃহিণী সফল জননী তিনি মফ :স্বল এলাকায় থেকে সংসার চালিয়ে তার সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে আজ তিনি সফল জননী তিনার জোষ্ঠ্য সন্তান মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল ৩১ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরি করছেন। তিনার মেজো ছেলে আসাদুজ্জামান জুয়েল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান পাস করে স্বনামধন্য কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিনার তৃতীয় ছেলে আব্দুল্লাহ আল মুনিম এমবিবিএস কমপ্লিট করে ৩৯ তম বিসিএস পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনার চতুর্থ মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। আজ তিনি সংগ্রামের মধ্যে চার ছেলে মেয়ের সরকারি চাকরি করার পিছনে বিশেষ অবদান রাখছেন এক দারুণ সাফল্য এজন্যই তিনি সফল জননী।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী ক্যাটাগরিতে মোছাঃ সালেহা তিনি রাণীশংকৈল উপজেলার সন্ধ্যারই গ্রামের মৃত নরশেদ আলীর মেয়ে। ১৮ বছর বয়সে পারিবারিকভাবে দুই পক্ষের সম্মতিতে একই উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের ইয়াকুব আলীর সাথে তিনার বিয়ে হয়। বিয়ের প্রথম অবস্থায় ভালই  চলছিল তিনার সংসার  তিনার সংসারে হঠাৎ  পুত্র সন্তানের আগমন হল। এভাবেই দুই পুত্র সন্তান ও এক কন্যা সন্তান হল। এতে তিনার  পরিবারের লোক সংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচজন স্বামী একজন সামান্য দিনমজুর ছিল। সংসারে অভাবের তাড়নায় প্রায় ঝগড়ায় লেগে থাকতো। মারপিট করতো এক পর্যায়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে তার স্বামী তাকে তালাক দেয়। পরকীয়া লিপ্ত হয়ে  যশোরে এক মেয়ে মহিলার সাথে প্রেমে আবদ্ধ হয়ে বিবাহ করে। এতে সালেহার সংসারে নেমে আসে অন্ধকার দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে   বাড়ি বাড়ি সাহায্য তুলে ভরণপোষণ চালাত। ২০১৭ সালে আরডিএস বাংলাদেশ এর মাধ্যমে দর্জি প্রশিক্ষণের কোর্স সম্পূর্ণ করে কাজের মান সুন্দর হওয়ায় অনেক অনেক লোক তিনার কাছে কাপড় সেলাই করত। পরবর্তীতে এসে হাঁস মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে দশটি হাঁস ও নগদ ৬০০ টাকা পাই সালেহা একটি ক্ষুদ্র খামার গড়ে তুলে এবং স্থানীয় এনজিও ইএসডিও এর মাধ্যমে সি এল এম এস প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য থান কাপড় ওড়না এবং ভিন্ন প্রিন্টের কাপড় কিনে দেওয়া হয় সে নিজে সেলাই করে বাড়িতে কাপড় বিক্রি করতো এখন সে তার মেয়েকে স্কুলে পাঠায় এবং দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে লেখাপড়া খরচ সহ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করে নির্যাতন ও বিভীষিকাম থেকে সে এখন উদ্যমে জীবন যাপন করছে। তিনি জীবন ও আর্থিক উন্নয়ন করেছেন।

সমাজ উন্নয়নের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী হালিমা আক্তার ডলি। তিনি রাণীশংকৈল উপজেলার আলী আকবর মিয়ার মেয়ে ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয়। তিনার এক সন্তানের জননী ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস ও ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাস এরপর সংসার জীবনে পা রাখেন স্কুল কলেজে অবস্থায় তিনি বিভিন্ন কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার সমাজ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি পৌরসভার ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও প্যালেন মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। সবচেয়ে বড় অবদান নারী মুক্তি নারী শিক্ষার প্রতি তিনি জোর দেন নিরক্ষর নারী ও পুরুষদের স্বাক্ষর জ্ঞানের আওতায় আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন ।নিঃস্বার্থভাবে বয়স্ক ভাতা, বিরহ ভাতা ,প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ,অসহায় দুস্থ নারীদের হাসপাতালে চিকিৎসা করা। পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদি কাজে  ভূমিকা পালন করছেন ।এছাড়াও বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং,নারী নির্যাতন বন্ধসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে হালিমা আক্তার ডলি বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। সমাজ উন্নয়নে  অবদানের জন্য তিনি আজ জয়িতা।

রাণীশংকৈল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আবু বেলাল ছিদ্দীক সকালের সময়কে বলেন, বেগম রোকেয়া দিবসে জয়িতাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ধরনের প্রদান নারীদের জন্য এটি জাতীয় সম্মাননা এবং আত্মমর্যাদার বিষয়  তাদের প্রতি শুভকামনা।

এমএসএম / এমএসএম

মিরসরাইয়ে দাড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কায় নিহত হেলপার

জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে কুষ্টিয়ায় মাসিক রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত

রায়পুরে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা, উচ্ছেদে ধীরগতি

জমির জন্য বৃদ্ধ দম্পতিকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

শ্রীপুর পৌর শহরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান

আত্রাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অপসারণ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

জয়পুরহাটে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

মেহেরপুরে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

হাটহাজারী সাব রেজিস্টার অফিসে মূল দলিলের পাতা গায়েব করে ভুয়া পাতা সংযুক্ত

আগামী নির্বাচনে তারেক রহমানকে সংসদীয় ৫ আসনে উপহার দিতে মীর হেলাল উদ্দিনের বিকল্প নাই -গিয়াস উদ্দীন

১৪৫ কোটি টাকার ফেরিঘাটে নেই ফেরি, সরকারের নতুন চিন্তা

জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবল: স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সন্দ্বীপে কর্মশালা

টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি সংযোগ খাল কচুরিপানায় বন্ধ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী