জীবিকার কাছে হার মানে কনকনে শীত
গরিব মাইনষের কি শীত আছে বাপু? পেটে তো খাওন দেওয়া লাগে। শীতে ঘরে বইয়া (বসে) থাকলে তো পেট চইলবো (চলবো) না। তাই গৃরস্থের ক্ষেতে কাম (কাজ) করবার আইছি (আসছি)।’ কথাগুলো বলছিলেন সত্তোর্ধ কৃষি শ্রমিক জামাল উদ্দিন।
জামাল উদ্দিনের বাড়ী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে। নিজস্ব জমিজমা বলতে আছে সামান্য ভিটেমাটি। তাতে ছোট দুটো ছনের ঘর তৈরি করে স্ত্রী সন্তান ও নাতীদের নিয়ে কোন রকম বসবাস করেন। জীবিকার তাগিদে ভোরের কনকনে শীত উপেক্ষা করে কাজের জন্য বের হতে হয় তাকে। শুধু জামাল উদ্দিন একা নন, তার মতো লালচাঁন মিয়া, শহিদুল, আছর উদ্দিনসহ সবার অবস্থা একই।
তারাকান্দি গ্রামের বোরো আবাদের মাঠে কাজ করার সময় দেখা হয় জামাল উদ্দিনসহ অন্যদের সঙ্গে। আবাদের ক্ষেতে হিম শীতল ঠান্ডা পানি। সূর্য ঢাকা পড়েছে কুয়াশার চাদরে। বইছে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। এর মধ্যে বোরো ধানের চারা তুলছেন রোপণের জন্য এসব শ্রমজীবী মানুষ। যেন জীবিকার কাছে হার মানছে কনকনে শীত।
জামাল উদ্দিন জানান, হার কাপানো ঠান্ডায় শরীর চলে না। তবুও জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয় তাকে। কাজ করে প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা মজুরি পান। এ দিয়েই জীবন কাটছে তার। তিনি আরও বলেন, অনেক চেষ্টার পর একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছি। বাজার সদাইয়ের দাম বেড়ে গেছে। এ ভাতার টাকায় হয় না। গত বছর একটা কম্বল পেয়েছিলাম। এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো শীতের কাপড় পাইনি।
শেরপুরের গারো পাহাড়ের সীমান্ত ঘেষা নালিতাবাড়ীতে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ছেই। রাতভর বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরতে থাকে। সন্ধ্যা থেকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে সূর্য উঁকি দিলেও নেই কোনো তাপ। এমন অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিক ও দিনমজুর থেকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলো রয়েছেন দুর্বিষহ অবস্থায়। তীব্র শীত উপেক্ষা করেই কোয়াশাছন্ন সকালে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে জীবিকার সন্ধানে।
দিনমজুর নাজিমুদ্দিন, আতর আলীসহ কয়েকজন শ্রমিকের ভাষ্য, আমরা গরীব মানুষ কাজ না করলে পেট চলে না, যে কারণে বাধ্য হয়ে তীব্র শীতেও কাজের সন্ধানে বের হতে হয়। কয়েকদিন যে শীত পড়ছে তাতে এত কম কাপড়ে শীত যায় না।
শীত নিবারণের জন্য মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো আগাম প্রস্তুতি নিলেও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষগুলো শীতবস্ত্র সংগ্রহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। সন্ধ্যা থেকে সকাল অবধি ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা। ভোরের আলো দেরিতে এক ঝলক দেখা দিলেও ফুরিয়ে যাচ্ছে অতি সহজেই। কনকনে ঠান্ডার সাথে হিমেল হাওয়া ঠান্ডার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিশায় রিছিল জানান, সরকারিভাবে এই উপজেলায় শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যেই ইউনিয়ন পর্যায়ে বেশকিছু কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বাকি এলাকায় খুব শিগগিরই শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
এমএসএম / এমএসএম