ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স বাণিজ্যে বাড়ছে যানজট, দূর্ভোগে নারী শিশু ও বৃদ্ধ'সহ সাধারণ মানুষ


রাশেদ খান মেনন, টাঙ্গাইল photo রাশেদ খান মেনন, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ২১-২-২০২৪ দুপুর ৪:৩৫

টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স নিয়ে চলছে কয়েক সহস্রাধিক ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা (ইজি বাইক)। সারা দেশের ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা'সহ সড়ক পরিবহন বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অমান্য করে, ব্যাটারী চালিত ওই অট্রোরিক্সার লাইসেন্স দেয়ার অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল পৌরসভা কর্তপক্ষের বিরুদ্ধে। এর ফলে অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থা আর বিপুল সংখ্যক ব্যাটারী চালিত মেট্রোরিক্সা চলাচলে শহরে যেমন বেড়েছে যানজট, তেমনি দেখা দিয়েছে চরম বৈদ্যুতিক সমস্যা। এতে অসহনীয় হয়ে উঠেছে শহরবাসীর জনজীবন।

জানা যায়, ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই স্থাপিত হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। বর্তমান আয়তন ২৯.৪৩ বর্গ কিলোমিটার। ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভার মোট সড়ক সংখ্যা ৫৯০টি। ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী এ পৌরসভার জনসংখ্যা-১ লাখ ৬৭ হাজার ৪১২জন। এর মধ্যে পুরুষ-৮৪ হাজার ৭৪১ আর মহিলা-৮২ হাজার ৬৭১ জন। মোট ভোটার সংখ্যা-৯৪,৬৪৪ জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার-৪৬ হাজার ১৩০ জন আর মহিলা ভোটার সংখ্যা-৪৮ হাজার ৫১৪ জন। 
টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স বিভাগ থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটোরিক্সার সংখ্যা ৪৫০০ আর রিক্সা রয়েছে ৫০০০। অটোরিক্সা লাইসেন্স ফি-১০,৫০০ আর পায়ে চালিত রিক্সার লাইসেন্স ফি-১০০০টাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যাটারী চালিত ওই মেট্রোরিক্সা গুলোর পিছনে বা চালকের বসার সিটের নিচে সাটানো হয়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স। টাঙ্গাইল পৌরসভার বর্তমান মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বছর মেয়াদী ওই লাইসেন্স গুলো ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় অনুমোদন হয়েছে। যার ফলে কিছু রিক্সার লাইসেন্সের মেয়াদ দেখা গেছে ২০২২ থেকে ৩০ জুন ২০২৩। ওই রিক্সা গুলোর লাইসেন্সের মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। তৃতীয়  দফায় স্বাক্ষরিত রিক্সার লাইসেন্সের মেয়াদ হয়েছে ২০২৩ সাল থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত। এছাড়াও নিয়ম বর্হিভুতভাবে এর আগেও তৎকালীন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র দেন ৪০০০ হাজার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স দেন। শহর জুড়ে এ সময় লাগামহীন যানজট লেগে থাকায় ওই ৪০০০ অটোরিক্সা চলাচলে দুই সিফট পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপর থেকে প্রতি সিফটে ২০০০ করে অটোরিক্সা চলাচল শুরু করে। এর ফাঁকে সড়কে নামতে শুরু করে ব্যাটারী চালিত মেট্রোরিক্সা। বর্তমানে শহর জুড়ে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার পাশাপাশি চলাচল করছে প্রায় ৮০০০ ব্যাটারী চালিত মেট্রোরিক্সা। এছাড়াও রয়েছে লাইসেন্স প্রাপ্ত ৫৫০০ পায়ে চালিত রিক্সা। বর্তমানে অটোরিক্সা দুই শিফট পদ্ধতিতে চলাচল করলেও সাত সহস্রাধিকের উপর মেট্রোরিক্সা চলছে দিনব্যাপি। 
এছাড়াও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট বড় ১২৮টি পরিবহনসহ সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, বীমা, আদালতের যানবাহন, চিকিৎসক ও ব্যক্তি মালিকাধীন গাড়ীসহ গড়ে প্রতিদিন তিন সহস্রাধিক মোটর সাইকেল চলাচল করছে এই শহরে। যার ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের বেবীস্ট্যান্ড, শান্তিমুঞ্জ মোড়, মেইন রোড, নিরালা মোড়, পার্কবাজার মোড়, ক্যাপসুল মার্কেট, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সুপারী বাগান মোড়, কলেজ গেইট আর নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় রীতিমত বেধে থাকছে যানজট। যানজট নিরসনে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এতে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী, শিশু, বৃদ্ধ, মহিলাসহ নানা বয়সী যাত্রী আর সাধারণ মানুষ। 
চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, ইতোপূর্বে পৌরসভা নির্ধারিত ১০,৫০০ টাকা ফি এর ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমান পৌর প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর এক বছর মেয়াদী পায়ে চালিত রিক্সার ১০০০ হাজার টাকার লাইসেন্স বিক্রি করেছেন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। মেট্রোরিক্সার লাইসেন্সের কথা বলে অতিরিক্ত ওই টাকা গুলো নেয়া হয়েছে। প্রতারণা মাধ্যমে পৌর প্রশাসনের কর্তারা বিপুল পরিমাণে টাকা উপার্জন করেছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
অটোরিক্সা চালক বাবুল মিয়া বলেন, তিন বছর যাবৎ রিক্সা চালাচ্ছেন তিনি। রিক্সা ও গদি আটকে রেখে তাদের লাইসেন্স নিতে বাধ্য করা হয়েছে । লাইসেন্স ছাড়া চালানো যাচ্ছিল না বলেই তিনি লাইসেন্সটি নিয়েছেন। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, ২০/২৫ হাজার টাকায় পৌরসভা থেকে লাইসেন্স বিক্রি করা হলেও দেড় মাস আগে মুসলিমপাড়ার একজন গ্যারেজ মিস্ত্রির মাধ্যমে ১২ হাজার টাকায় লাইসেন্সটি নিয়েছেন তিনি। সুদের টাকায় রিক্সা আর লাইসেন্সটি কিনেছেন বলেও জানান তিনি।  
অটোরিক্সা চালক মো. হযরত আলী বলেন, ২০ হাজার টাকায় তিনি লাইসেন্সটি পেয়েছেন। তার লাইসেন্স নম্বর ৮২৫। টাকা গুলো নিয়েছেন পৌরসভার লোকজন। পায়ে চালিত রিক্সার লাইসেন্স কেন এত টাকা দিয়ে নিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লাইসেন্স বইয়ের মধ্যে ইজি বাইক লেখা আছে বলেই তিনি লাইসেন্সটি নিয়েছেন।
চালক রবিউল ইসলাম বলেন, পৌরসভা থেকে মেট্রোরিক্সার লাইসেন্স আর নম্বর প্লেট বিক্রি করার সুযোগে তারা এই ব্যাটারী চালিত রিক্সা চালাচ্ছেন। পৌরসভার লোকজন লাইসেন্স ও প্লেট বিক্রি করেছেন। এ কারণে এই রিক্সা বন্ধ হচ্ছেনা। এরপরও যদি সরকারিভাবে এই রিক্সা চলাচল বন্ধ করে, তাহলে অন্য কাজ করে খাবেন বলে জানান তিনি।
৪৯৯৫ নং লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেট্রোরিক্সার চালক রফিক বলেন, ৪৩ হাজার টাকায় পুরাতন এই রিক্সাটি কিনেছি। মাসে ১২০০টাকা ভাড়ায় লাইসেন্সটি নিয়েছি। লাইসেন্সটি পৌরসভা থেকে কিনেছেন আদি টাঙ্গাইল এলাকার রিক্সার গ্যারেজ মালিক আকবর।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন ও যুবদের জন্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পায়ে চালিত রিক্সা লাইসেন্স দিয়ে অবৈধ মেট্রোরিক্সার বৈধতা দেয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। দ্রুত অবৈধ ব্যাটারী চালিত রিক্সা গুলো বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব (সিডিসি)’র নাট্য সম্পাদক ও শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান সাম্য বলেন, সড়ক অনুপাতে যানবাহন দ্বিগুণ হওয়ায় শহর জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট। যানজটের অন্যতম কারণই ব্যাটারী চালিত ওই রিক্সা। পৌর কর্তপক্ষ পায়ে চালিত রিক্সার লাইসেন্সের নামে আর মোটা টাকার টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন ব্যাটারী চালিত মেট্রোরিক্সার লাইসেন্স। পায়ে চালিত রিক্সার লাইসেন্স ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, সেখানে নিচ্ছেন ২২,০০০ থেকে ২৫,০০০ হাজার টাকা। গরীবের টাকা অমানবিকভাবে নেয়া হচ্ছে। এর প্রভাবে তীব্র যানজট ভোগ করছেন সাধারণ মানুষ। টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এই কার্যক্রমের মূল হোতা বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। এর ফলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। ১২০০ টাকার লাইসেন্স ২২০০০ থেকে ২৫০০০ হাজার টাকায় বিক্রির মত বড় একটি অনিয়ম প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিবিদ'সহ সকলে জানা সত্ত্বেও এর কোন প্রতিকার নেই বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই। 

রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সবুর বলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে চলাচলের জন্য ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা (ইজি বাইক) গুলোকে পায়ে চালিত রিক্সার লাইসেন্স দিয়েছে। লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব তাদের না। পৌরসভার মেয়র সাহেব পায়ে চালিত রিক্সার লাইসেন্স দিয়েছেন অটোরিক্সায়। ব্যাটারী চালিত মেট্রোরিক্সা (ইজি বাইক) আমাদের সংগঠণের অন্তভুক্ত। এছাড়াও এই লাইসেন্স দেয়া নিয়ে আমাদের সাথে কোন মিটিং করেননি পৌর কর্তৃপক্ষ। ইজিবাইক বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্যের বিষয়টি মেয়র সাহেবের বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম. সিরাজুল হক আলমগীর এর  কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের (২০ জুন) সড়ক পরিবহন বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর সারা দেশে চলা অবৈধ ব্যাটারিচালিত ৪০ লাখ ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশসহ আমদানি ও ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আর অবৈধ ইজিবাইক আমদানি থেকে বিরত থাকতে কর্তপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন বিচারপতি মামনুন রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ।

এমএসএম / এমএসএম

নরসিংদীতে অবৈধ বালু মহোৎসব: গ্রাম-ফসলি জমি বিলীন হওয়ার শঙ্কা”

মনোহরদীতে বিশেষ অভিযানে ৩০০ লিটার চোলাই মদসহ দুই নারী গ্রেফতার

বাবুগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গর্ভবতী গাভী মৃত্যুর অভিযোগে তোলপাড়ঃ সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি

কাশিয়ানীতে মহাসড়কে গাছ ফেলে নাশকতার চেষ্টা

চাঁদপুরে আগুনে পুড়েছে সাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড প্ল্যানিং ডে উদযাপন

হাটহাজারীতে সমবায় দপ্তরের ঋণের চেক বিতরণ সম্পন্ন

শেরপুরে পুলিশ কর্মকর্তাদের মামলা ও সাজা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে শফিকুল ইসলাম রাহীর নেতৃত্বে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ

রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা

নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা

ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদারের

নরসিংদী পৌর এলাকায় অটোরিকশা–সিএনজি–ইজিবাইক তালিকাভুক্তি শুরু