বইছে স্নিগ্ধ হাওয়া, ৩২ একরে বসন্তের ছোয়া
হে বসন্ত, তুমি কি আমারে তাকাইয়া দেখো নাই! তোমার লাগি যে আমি দিনের পর দিন মাসের পর মাস চাইয়া থাকি, আইবা কবে। শীত রে আমি ধইরা রাখি, ভিজা থাকার লাইগা! যাতে তোমার রঙে আমি রংধনু হইতে পারি। তুমি যে শেষমেশ আইছো, দেখছো আমার রূপ। তোমার মৃদুল হাওয়ায় আমার মন কেমন ফুরফুর হইয়া আছে।
৩২ একর জুড়িয়া যে আমারে কইতাছে, মধুর অমৃতবানী। বেলা গেল সহজেই, মরমে উঠিল বাজি, বসন্ত এসে গেছে। থাক তব ভুবনের ধুলি মাখা চরনে।
মাথা নত করে রব...বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।
হ্যাঁ, ঠিক তাই। বংশী নদীর কোল ঘেঁষে ঘন সবুজের বুকে কোলাহলমুক্ত এই ৩২ একরের ক্যাম্পাস গণ বিশ্ববিদ্যালয় বসন্তে যেন তাঁর চিরায়ত লাবণ্যময়ী রূপ ফিরে পায়। শীতের রুক্ষ-শুষ্কতা কাটিয়ে বসন্তের ছোঁয়ায় ক্যাম্পাসে বইছে স্নিগ্ধ হাওয়া। পাতাঝরা গাছের ডালে ডালে উঁকি মারছে নতুন পাতা। চারিদিকে মুখরিত হয়ে উঠে নানান রঙের ফুল ও প্রজাপতির মেলায়। কোকিলের মধুর কন্ঠে সুরে মাতিয়ে রেখেছে বাদামতলা ও আমতলা। আমের মুকুলে ভ্রমরের গুঞ্জন আর মেঘলা রোদ্দুরের স্নিগ্ধ হাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনকে করেছে প্রাণোচ্ছল। প্রাণোচ্ছলতায় সেজেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ৩২ একরের রাণী ক্যাম্পাস।
শীতের জড়তা কাটিয়ে
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে
ঘুমন্ত প্রকৃতি উঠলো জেগে।
৩২ একর সাজলো পরী
পরলো পরী বসন্তের শাড়ি
তরুণ-তরুণী তা দেখে উম্মাদ ভারী।
মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পরে রঙিন নকশা। পায়ে পায়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে রংধনুর মায়া। লাল ইটের গঠনে ছড়িয়ে আছে তার রূপের রহস্য। কে না ভালোবাসবে রহস্যময়ী ৩২ একরের রাণীকে! ক্লাসের বিশাল আকৃতির কাচের জানালার দখিনা দুয়ার যখন খুলে দেয় তখন মিষ্টি বাতাস বয়ে যায় নিজ ছন্দে আর বলে যায়, ‘বসন্ত এসে গেছে’।
বাদামতলায় বিরাজ করেছে নতুন রূপ। ডালে ডালে উঁকি মারছে নতুন পাতা। তারই মাঝে পাখিদের খেলার সুরে ভাসছে বসন্তকে নিলাম আমরা বরণ করে। 'প্যারিস রোডের' বাদামতলায় সোনালি রোদ্দুরে বসেছে ছোট-বড় গল্পের ঝুড়ি। পাশ দিয়ে ছড়িয়ে আছে হলুদ কমলার গাদা ফুলের সারি। কেউবা পড়েছে রং বেরঙের শাড়ি পাঞ্জাবি, করছে তাদের মুহূর্ত স্মৃতিবন্দী।
ক্যাম্পাসের অদূরে দক্ষিণপাশে সবুজের বুকে বসবাস করে শিমুল গাছ। যার নেই কোনো তুলনার অভাব। বসন্ত আসবে কবে শিমুল বসে থাকে তার অধীর আগ্রহে। সবুজের মাঝে রক্তিম লাল রঙে যার রূপ শিক্ষার্থীদের মনকে করে যায় অধীর ব্যাকুল।
কুড়াচ্ছে ফুল ফুলকুমারী, তুলছে নানান ভঙ্গের ছবি। মাঠের জায়গায় জায়গায় বসেছে গানের আসর, কেউবা তুলছে গিটারের সুর, কেউবা বাড়ি মারছে ঢোল।
ফাল্গুন মাসের শুরু থেকে চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত কোকিলের মধুর কলরব, ফুলের প্রাণখোলা হাসি আর প্রকৃতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে। জানান দেয়, 'বসন্ত এসে গেছে।'
ইভা আক্তার
শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, ফার্মেসী বিভাগ
গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
এমএসএম / এমএসএম