ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

প্রতিদিন যে পরিমাণ কোরআন পড়া উচিত


সকালের সময় ডেস্ক photo সকালের সময় ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭-৪-২০২৪ দুপুর ৪:৪৭

 রমজান কোরআন নাজিলের মাস। পবিত্র এই মাসে কোরআন চর্চার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে কোরআনচর্চা রমজানে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয়, বরং বছরজুড়েই কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যক। কেননা কোরআন আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যম এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থার মূল ভিত্তি।

আর তা মুমিনের জন্য আরোগ্যস্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবতীর্ণ করি কোরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু তা অত্যাচারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)
মুমিনের জন্য কোরআন আল্লাহর অনুগ্রহ এবং সুপথের দিশা। সুতরাং যে নিয়মিত কোরআনচর্চা করবে সে আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভ করবে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য সুপথের দিশা ও রহমত।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫৭)
মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করল তার জন্য একটি নেকি। আর প্রতিটি দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)

দিন-রাতের যেকোনো সময় তা করা যায়। কেউ চাইলে কোরআন তিলাওয়াত ও চর্চার জন্য সময় নির্ধারণ করতে পারে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘সকাল-সন্ধ্যা, রাতের মধ্যভাগ ইত্যাদি সময়ে নামাজ, তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করা নবীজি (সা.)-এর সুন্নত। প্রাচীন ও আধুনিক যুগের পুণ্যাত্মা ব্যক্তিরা তা করতেন।’ (আল ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৭৭)

যাতে তিন দিন, সাত দিন ও এক মাসে কোরআন খতম করতে বলা হয়েছে। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, মানুষ তার যোগ্যতা, স্তর ও ব্যস্ততার বিচারে তিনটি বর্ণনার যেকোনো একটি অনুসারে আমল করবে। যেমন—

১. সাধারণ মানুষের তিলাওয়াত : আলেম নন, এমন ব্যক্তিরা ৩০ দিনে একবার কোরআন খতম করবে। অর্থাৎ সে দিনে এক পারা তিলাওয়াত করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে বলেছিলেন, তুমি এক মাসে কোরআন তিলাওয়াত সম্পন্ন করো। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৮৮)

২. আলেমদের জন্য তিলাওয়াত : যারা আলেম বা কোরআন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে, তারা সপ্তাহে একবার কোরআন খতম করবে। কেননা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রহ.) যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিজের সামর্থ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন, তখন তিনি বলেন—তুমি সাত দিনে কোরআন তিলাওয়াত শেষ কোরো। এর থেকে বেশি তাড়াহুড়া কোরো না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৮৮)

৩. বিশেষ দিনে তিলাওয়াত : ফকিহ আলেমরা বলেন, সাত দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করা অনুচিত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বিষয়টিতে নিজের অপছন্দের কথা জানিয়েছেন। তবে রমজান ও মক্কায় অবস্থানের দিনগুলোর মতো বিশেষ সময়ে এর থেকে বেশি তিলাওয়াত করা যাবে। কেননা মহানবী (সা.) তিন দিনেও কোরআন খতম করার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করে, সে কোরআনকে হূদয়ঙ্গম করতে পারেনি। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৯০)

কোরআনের একাধিক আয়াতে কোরআন পরিত্যাগকারীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার কাছ থেকে তোমাকে দান করেছি উপদেশ। যে এটা (কোরআন) থেকে বিমুখ হবে সে কিয়ামতের দিন মহাভার বহন করবে। তাতে তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন এই বোঝা তাদের জন্য হবে কত মন্দ।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ৯৯-১০১)

মহানবী (সা.) কোরআন পরিত্যাগকারীদের ব্যাপারে অনুযোগ করে বলেছেন—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো এই কোরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৩০)

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘মক্কার কুরাইশরা কোরআন তিলাওয়াতের সময় শোরগোল ও হৈচৈ করত এবং তা শ্রবণ করত না—এটা কোরআন পরিত্যাগ। কোরআনের ওপর আমল ছেড়ে দেওয়া এবং তা মুখস্থ না করাও কোরআন পরিত্যাগ। কোরআনের প্রতি ঈমান ত্যাগ করা, তা সত্যায়ন না করা, কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করা, কোরআনের আদেশ ও নিষেধ অনুসরণ না করাও কোরআন পরিত্যাগ করা। কোরআনের পরিবর্তে কবিতা, গদ্য, গান, হাসি-কৌতুক, গালগল্প ইত্যাদির প্রতি ঝুঁকে যাওয়াও কোরআন পরিত্যাগ।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

আল্লাহ সবাইকে কোরআনের সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দিন। আমিন।

 

Israt / Israt