মক্কায় প্রবেশের পর প্রথম কাজ ওমরাহ করা

মক্কায় প্রবেশের পর আপনার প্রথম কাজ হলো ওমরাহ পালন করা। তাই অনেকেই মক্কায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ওমরাহ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। সেটি করবেন না। আগে হোটেলে উঠুন, কিছুটা সময় বিশ্রাম নিন, কিছু খাবার খেয়ে নিন। এরপর আপনার এজেন্সির লোকদের সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও জায়গায় মিলিত হয়ে ওমরাহর জন্য রওনা হোন। বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করতে থাকুন।
মক্কার হারাম শরিফ অনেক বড়। তাই এখানে হারিয়ে যাওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। হোটেলের আশপাশের কিছু বিশেষ ল্যান্ডমার্ক (যেমন ক্লক টাওয়ার) বা বিল্ডিং চিনে নিন এবং এগুলো মনে রাখুন, ফিরতে সুবিধা হবে।
সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনারা বিমানবন্দর থেকে অথবা হোটেলের আশপাশ থেকে একটি সৌদি আরবের সিম কার্ড কিনে নিতে পারেন। অনেক সময় অনেক মোবাইল অপারেটর বিমানবন্দরেই ফ্রি সিম কার্ড দিয়ে থাকে, যা পরে টপআপ করে নিতে হয়। সঙ্গে মুঠোফোন থাকলে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। হোটেল থেকে ঠিকানাযুক্ত কার্ড নিন; আপনার আইডি কার্ডটিও নিন। এবার এগুলো আপনার বেল্টের পকেটে সাবধানতার সঙ্গে সংরক্ষণ করুন।
রওনা হওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন, কোন জায়গাটিতে আবার মিলিত হবেন (যদি কেউ হারিয়ে যান)। ক্লক টাওয়ার বা গেট নম্বর ১ বা কিং আবদুল আজিজ গেট হলো বেশ কমন। এগুলো আপনাদের মিটিং পয়েন্ট হতে পারে অথবা হোটেলও হতে পারে।
মসজিদুল হারামে রয়েছে চারটি ফ্লোর—বেজমেন্ট, গ্রাউন্ড, মিডল ও ছাদ। আবার একটি অংশে ওপরে ওঠার জন্য রয়েছে অ্যাকসেলেটর ও এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) এলাকা। মসজিদে ঢোকার সময় সব হাতব্যাগ চেকিং হয়। বড় কোনো হাতব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না, কোনো খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। অবশ্য ছোট্ট পানির বোতল নিতে পারবেন যাতে পরে জমজমের পানিও ভরে নিয়ে আসতে পারেন।
মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ আদায় অন্য মসজিদে এক লাখ রাকাত নামাজ আদায়ের সমান সওয়াব পাওয়া যায়; আর মদিনার মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজ আদায় অন্য মসজিদে এক হাজার রাকাত নামাজ আদায়ের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।
মসজিদুল হারামে ঢোকার আগে প্রথম তাওয়াফে পুরুষদের তাঁর ইহরামের কাপড় একটু অন্যভাবে পরতে হয়। শুধু ইহরামের ওপরের অংশটি (রিদা) ডান কাঁধের ওপর থেকে সরিয়ে হাতের নিচে থেকে নিয়ে নিতে হবে—এই অবস্থাকে বলা হয় ‘ইদতিবা’।
মসজিদে ঢোকার সময় দোয়া পাঠ করুন: আল্লাহুম্মা মাফ্তাহিল আব্ওয়াবা রাহমাতিকা।
অর্থ: ও আল্লাহ, তোমার দয়ার দরজাগুলো আমার জন্য খুলে দাও।
এবার তালবিয়া পড়া বন্ধ করুন। এরপর সোজা চলে যান কাবা শরিফের দিকে; এ সময় তাহিয়াতুল মসজিদেরও দরকার নেই; বরং এখন প্রথম কাজ হচ্ছে, তাওয়াফ সম্পন্ন করা; রাসুল (সা.) তা-ই করেছেন। তিনি অজু করে সরাসরি তাওয়াফ সম্পন্ন করেছেন। এরই মধ্যে আপনার চোখের সামনে দেখা যাবে কাবাঘর; এটি একটি আবেগঘন মুহূর্ত। কারণ, আপনি আপনার চোখের সামনে সেই স্বপ্নের কাবাকে দেখছেন! চোখের পানি এ সময় ধরে রাখা কষ্টকর হবে!
কাবা শরিফের চারদিকে ঘোরাকে বলা হয় তাওয়াফ; আর এই তাওয়াফ শেষ করতে হয় কাবা ঘরের সাতটি চক্করের মাধ্যমে, যেটি শুরু হবে হাজরে আসওয়াদ থেকে। এবার চিনে নিন কাবার কোন দিকে কী রয়েছে।
তাওয়াফ শুরু করতে প্রথমেই চলে যান ‘হাজরে আসওয়াদ’ বরাবর; হাজরে আসওয়াদকে কালো পাথর বা ব্ল্যাক স্টোনও বলা হয়। সহিহ হাদিসে আছে, ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) বেহেশত থেকে এই পাথর পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন। সম্ভব হলে কাবার এক কোনায় স্থিত এই হাজরে আসওয়াদকে ডান হাতে ছুঁয়ে তারপর চুমু খেতে হবে; কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ে এটা করা সম্ভব না হলে করার চেষ্টাও করবেন না, এতে আপনি বিপদে পড়তে পারেন; তাই দূর থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে দাঁড়ান, ডান হাত তুলুন এবং ইশারা করে হাতটি হাজরে আসওয়াদের দিকে বাড়ান, তারপর সেই হাতে চুমু খান; এবার হাজরে আসওয়াদকে আপনার বাঁ দিকে রেখে বলুন, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।’
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম; আল্লাহ সর্বশক্তিমান।
কাবার রয়েছে চারটি কোনা; প্রথমটি হলো হাজরে আসওয়াদ, দ্বিতীয়টি হলো ইরাকি কর্নার, তৃতীয়টি হলো সিরিয়া কর্নার, আর চতুর্থটি হলো ইয়েমেনি কর্নার।
এবার ইরাকি কর্নারের দিকে হাঁটা শুরু করুন ও কাবাকে বাঁয়ে রেখে গোলাকারভাবে প্রদক্ষিণ করুন। হাঁটতে হাঁটতে যখন আপনি ইয়েমেনি কর্নারে পৌঁছাবেন, তখন ডান হাত তুলুন এবং ইশারা করে হাতটি ইয়েমেনি কর্নারের দিকে বাড়ান এবং বলুন—
‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাউ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাউ ওয়া কিনা আজাবান্নার।’
অর্থ: ও আল্লাহ, এ দুনিয়া ও পরকালে আমাদের কল্যাণ দান করো এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করো।
রাসুল (সা.) ইয়েমেনি কর্নার পার করার সময় ইয়েমেনি কোনা ছুঁতেন; আপনি দূর থেকে ইশারা করে হাত তুললেই হবে। এভাবে আপনি এরপর পৌঁছে যাবেন আবারও হাজরে আসওয়াদে। পূর্ণ হলো একটি চক্কর।
এবার আবারও দূর থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে দাঁড়ান, এবার দুই হাত তুলুন, হাতের তালু কাবার দিকে থাকবে—ঠিক যেমন নামাজের সময় হাত তোলা হয়; এবার বলুন: ‘আল্লাহু আকবার’, যার অর্থ, আল্লাহ সর্বশক্তিমান।
এবং পুনরায় দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। আগের নিয়মেই এই চক্করটি পুনরাবৃত্তি করুন—ইয়েমেনি কর্নার পার করার সময় দোয়াটি পড়ুন। এভাবে সাত চক্কর পূরণ করুন; আপনার তাওয়াফ হয়ে যাবে।
তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজ
কাবাঘরের চারদিকে এই সাত চক্করে পুরুষদের আরও একটি ভিন্ন কাজ করতে হবে, যেটাকে বলা হয় ‘রমল’—যার অর্থ হলো বীরদর্পে একটু জোরে হাঁটা বা হালকা দৌড়ানো। এটি পুরুষদের করতে হবে প্রথম তিন চক্করে, শেষের চার চক্করে এটি করতে হবে না; স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলে হবে। আর নারীদের রমল নেই।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে রাখবেন, তাওয়াফের সময় অযথা কথা বলা যাবে না; এ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়াও নেই। তবে আপনি যেকোনো সুরা পড়তে পারেন অথবা কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, আবার কোনো কিছু নাও পড়তে পারেন; সেটা আপনার ইচ্ছা। এ সময় দল বেঁধে অনেককে উচ্চ স্বরে বিভিন্ন দোয়া পড়তে দেখবেন, তাঁদের অনুসরণ করার দরকার নেই। কারণ, এ পদ্ধতি সুন্নাহসম্মত নয়।
যা হোক, তাওয়াফের সময় যদি নামাজের জামাত শুরু হয়ে যায়, তাহলে তাওয়াফ ভেঙে জামাতে নামাজ আদায় করুন। মনে রাখবেন, কতগুলো চক্কর আপনি সম্পন্ন করেছিলেন। জামাতের পর বাকি চক্করগুলো শেষ করুন। এবার আবারও দূর থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে দাঁড়ান, দুই হাত তুলুন; বলুন—‘আল্লাহু আকবার’ এবং আবার চক্কর শুরু করুন। চক্করের সংখ্যা ভুলে গেলে যেটা কম ও আপনি নিশ্চিত, সেখান থেকে শুরু করুন; চক্কর বেশি দেওয়া ভালো, কম নয়। উত্তম হচ্ছে রাতে, অর্থাৎ এশার নামাজের পর একটু দেরি করে তাওয়াফ করা। এতে নামাজে জামাতের ব্যাপারও থাকবে না, আর রাতে তাওয়াফের সময় আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে।
তাওয়াফ শেষ! এবার আপনার ডান ঘাড় কাপড় দিয়ে ঢেকে নিন আর মাকামে ইব্রাহিমের দিকে যান। এবার মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করুন। যদি ভিড়ের জন্য জায়গা না পান, তাহলে মসজিদের ভেতরে যেকোনো জায়গায় মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে নামাজ আদায় করুন। তবে এই নামাজের সময় যেন জামাত করা না হয়, আলাদা আলাদাভাবে আদায় করুন। রাসুল (সা.) এই নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস পড়তেন। তাই আপনিও এভাবে নামাজ আদায় করুন।
‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন। লা আবুদু মাতাবুদুন।
ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ। ওয়ালা আনা আবিদুম মাআ বাদ্তুম।
ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ। লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদিন।’
‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ
ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’
Israt / Israt

কোরআনে কল্যাণের পথে অগ্রগামী বলা হয়েছে যাদের

মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বাঁচাবেন যেভাবে

কৃতজ্ঞতা প্রকাশে জীবন-জীবিকার প্রশস্ততা

কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ এসেছে কোরআনের যে আয়াতে

মানুষের ওপর আল্লাহর রহমত নিয়ে যা বলেছেন মসজিদুল হারামের খতিব

পবিত্র আশুরা আজ

আশুরার রোজা কবে-কয়টি রাখতে হবে

কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস ও শিক্ষা

পবিত্র হজ আজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা

কোরবানির পশু জবেহ করার বিধান

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত মিনা

কুরবানির শিক্ষা গুরুত্ব ও তাৎপর্য
