আন্দোলন পরবর্তী সহিংসতা কাম্য নয়

কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিলো। তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পথেই চলে আসছিল। সমস্যা হয় যখন কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সেই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে নিজেদের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মিশে গিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সহিংসতা চালাতে থাকে। আর এই সহিংসতা সরকার পতনের পর নৈরাজ্যের রুপ ধারণ করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের দাবি রাখে। পাশাপাশি এসব সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবিও অমূলক নয়।
কোটা পদ্ধতি সহজ করার বিষয়ে ২০০৯ সালের ১৯ মার্চ সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ করেছিলো পি এস সি। ওই সুপারিশের মধ্যে ছিলো “ মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার কোটাগুলো জেলা বা বিভাগভিত্তিক ভাগ না করে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে বন্টন করা যেতে পারে”। এ ধরণের কোটার পদগুলো জাতীয়ভিত্তিক নিজস্ব মেধাক্রম অনুযায়ী ঐ কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থিদের মধ্যে বন্টন করা যেতে পারে”। ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো “কোটা সংক্রান্ত নীতিমালার প্রয়োগ অত্যন্ত জটিল, দুরহ এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কোটা পদ্ধতির জটিলতার কারনে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। প্রার্থীদের বিভিন ক্যাডারের চাকরীর পছন্দক্রম এবং কোটার সংগে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের জন্য আরোপিত সংখ্যাগত সীমারেখা সংযুক্ত হয়ে এমন একটি বমাত্রিক সমীকরণ কাঠামোর সৃষ্টি করেছে, যার নির্ভুল সমাধান নির্ধারিত সময়ের মধয়ে মানবীয় ভাবে প্রায় অসম্ভব”। এজন্য পি এস সি বলেছিলো “কম সময়ে সুচারু ও নির্ভুলভাবে বি সি এস পরিক্ষা সহ নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি নিয়োগ করা একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় এ জটিলতা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়”। ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনেও পি এস সি এ ধরনের সুপারিশ করেছিলো।
শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্র জনতার গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিলো। এক মাসের মধ্যেই এলো এর পরিণতি। বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম একজন নির্বাচিত সরকারের পতন হলো নিরস্ত্র ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে। তিন শতাধিক মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে ছাত্র জনতার এই গণ-আন্দোলন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন করলো। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। শুধু পদত্যাগই না দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো আর কতযুগ ধরে বার বার বাংলাদেশের সৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে হবে? কোটা সংস্কার আন্দোলনকে থামাতে শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা করা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। এই ঘটনাকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করারও কোনো সুযোগ নেই। আবার ছাত্রদের আন্দোলন যেভাবে তৃতীয় পক্ষ দখল নিয়েছিল তাও কাম্য নয়। এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের খুব দ্রোহ তাদের আবেগ এবং যুক্তিসঙ্গত চওয়া সবকিছু বুঝতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলাফল পতন।
যারা রাষ্ট্র চালিয়েছেন, যারা সরকার গঠন করেছিলেন তাদের যে জনসম্পৃক্ততা ছিলো না। সাধারণ জনগণের,শিক্ষার্থীর,শ্রমিকের কান্না যে তাদের কাছে পৌঁছায় না এসবের কোন গুরুত্ব যে তাদের কাছে নেই তারা তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন। যে বিষয়টি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত তাকে সহিংসতার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সরকার নিজেই। তাদের দূরদর্শিতার অভাব ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হলো এতদিন ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে কেন সরকারের এই দূরদর্শিতা তৈরি হলো না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অনেক। পত্র-পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী প্রায় তিনশত সম্ভাবনাময় মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে আন্দোলনকারীরা সরকার পতনের ডাক দিলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সেনাপ্রধান দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে নিজে বৈঠক করেছেন এবং তাদের নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করিয়েছেন। আন্দোলনকারী ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে আলোচনাতেও বসেছেন। আমরা আশাবাদী, আশা করছি এর ভেতর দিয়ে একটি সুফল আসবে।
তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গণআন্দোলনের যে চিত্র চোখে পড়লো তার এক পিঠ আনন্দঘন হলেও আরেকটি পিঠ ছিল খুব লজ্জার। ৫ আগস্ট দুপুর থেকেই সব স্তরের জনসাধারণ গণভবনে প্রবেশ করে গণভবনের সব কিছু ভেঙে চুরে লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় দেখলাম গণভবনের মূল্যবান আসবাবপত্র, কম্পিউটার ল্যাপটপসহ অতি সামান্য জিনিসটিও এমনকি কাপড় চোপড়, ফাইলপত্র, গাছের টব ইত্যাদি মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে শত শত মানুষ এবং এ নিয়ে তারা বেশ গর্ববোধ করছে। ছিঃ এলজ্জা ঢাকবো কিভাবে?
'ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ' আমাদের এই আদর্শ যেন প্রমাণিত হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন এখন থেকে আর কোনও ধ্বংসযজ্ঞ যেন না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। আন্দোলনের সময় যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, যে অফিস আদালত গাড়ি বাড়ি পোড়ানো হয়েছে- ধ্বংস করা হয়েছে। এখন তো আর সেই প্রয়োজনীয়তা নেই। এরপরও যদি কোনও ঘটনা ঘটে তবে ধরেই নিতে হবে এটি একটি গোষ্ঠীর সুচিন্তিত পদক্ষেপ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর প্রয়াস।
অতএব ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাতসহ সকল ধ্বংসযজ্ঞ এখনই বন্ধ হোক। যে যে পর্যায়ে রয়েছেন তাকে সেই পর্যায় থেকেই এটাকে বন্ধ করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অন্যথায় ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ফসল ঘরে উঠেছে তা বিনষ্ট হবে।
লেখক: শিক্ষক,সাংবাদিক এবং কলামিস্ট
এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
