ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

সরকার পতনের যে কারনগুলো জনগনের ভাবনায় আসে


ইমাম হো‌সেন, ঢাকা photo ইমাম হো‌সেন, ঢাকা
প্রকাশিত: ১৩-৮-২০২৪ বিকাল ৬:১

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র সমাজের হাত ধরে বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ফের একবার জাগ্রত হলো বাংলাদেশ। ৫২, ৬৯ ও ৭১-এর পর ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল মূলত এদেশের ছাত্রসমাজ। দীর্ঘ সময় পর ২০২৪ সালে আরেকটি অভ্যুত্থান দেখল বাংলাদেশ। এবারও ছিল ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী নেত্রী শেখ হাসিনা।

আন্দোলনটি শুরুতে ছাত্রদের কোটা সংস্কার কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর সাথে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার, নানা বয়সের লাখো মানুষ অংশ নিতে শুরু করে।চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে টানা চতুর্থবারের মতো নতুন সরকারের ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনা। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতার পরও ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাধান করতে পারেনি হাসিনা সরকার। একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য ও ভুল সিদ্ধান্তের ফলে ক্রমেই বেড়েছে আন্দোলনের তীব্রতা। যা সামাল দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। গতকাল (সোমবার) দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রেকর্ড করার অনুমতি চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে গণভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ‘নিরাপদ স্থানের উদ্দেশ্যে’ নিয়ে  যাওয়া শেখ হাসিনাকে। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানাসহ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহজন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্ষিপ্ত জনতা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবেশ করেন।

এদিন বিকেলে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, জনগণ এবং আমার দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব। সাংবিধানিক দায়িত্ব সমুন্নত রাখুন। এর অর্থ হলো এক মিনিটের জন্যও কোনো অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া উচিত নয়।

দায়িত্ব নিচ্ছি আর একটি গুলিও হবে না : সেনাপ্রধান
সেনাপ্রধান জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, সম্প্রতি সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করব আমরা। দেশে আর কোনো কারফিউ বা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। সোমবার রাতেই একটি সমাধান বের করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। শিগগিরই একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। একই সঙ্গে তিনি দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। নাগরিকদের সহিংসতা বন্ধের আহ্বানও জানান তিনি।সেনাপ্রধান জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, সম্প্রতি সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করব আমরা। দেশে আর কোনো কারফিউ বা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। সোমবার রাতেই একটি সমাধান বের করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

কোটা আন্দোলন শুরু এবং চাওয়া:
২০১৮ সালের প্রথম পর্যায়ের কোটা আন্দোলনে পাঁচ দফা দাবি দেওয়া হয়। এবার প্রথমে কোটা সংস্কারের দাবি, পরে ৯ দফা এবং সবশেষে এক দফা দাবি দিয়ে সরকার পতন করে আন্দোলনকারীরা।কোটা সংস্কারের প্রথম দফা আন্দোলনে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য একটি আলটিমেটাম দেওয়া হয়। তারপর আবার ৯ এপ্রিল কয়েক হাজার সমর্থক কর্মী গণপদযাত্রা করে বেলা ৩টায় শাহবাগে এসে জমা হন। কিন্তু সেদিন সরকারি বাহিনী ওই জমায়েতকে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আন্দোলন থেমে না গিয়ে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। কিছুতেই যখন এই আন্দোলন থামানো যাচ্ছিল না, তখন ১১ এপ্রিল সংসদে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্ভবত এটি ‘আবেগপ্রসূত’ বা ‘বিরক্তিবশত’ একটি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি নিজেও পরে স্বীকার করেছেন বিষয়টি।

জাতীয় সংসদে সব রকম কোটা বাতিলের ঘোষণার পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে যে নির্বাহী পরিপত্র জারি করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা হাইকোর্টে একটি রিট করেন।হাইকোর্ট ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর এই কোটা পরিবর্তনের পরিপত্রটিকে বাতিল করে দেন। ফলে সব ধরনের কোটা আবার পুনর্জীবিত হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়। সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। এই আপিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার প্রথম তারিখ ঠিক হয় গত ৪ জুলাই। কিন্তু ক্রমান্বয়ে ছাত্রদের আন্দোলন বাড়তে থাকলে গত ২৩ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দিতে বাধ্য হন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া ‘বিতর্কিত’ রায় বাতিল করেন। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রাখার নির্দেশনা দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য এক শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য এক শতাংশ কোটা রাখতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

বিতর্কিত নিজের বক্তব্যই কাল হলো শেখ হাসিনার
গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই ১৪ জুলাই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের স্লোগান ওঠে, ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার’। পরে তা বদলে হয় ‘চেয়েছিলাম অধিকার/ হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার/ কে বলেছে? কে বলেছে? সরকার, সরকার’। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের বদলে ‘স্বৈরাচার’ শব্দটিও শোনা গেছে। এরপর এই আন্দোলন আর দমানো যায়নি। সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা রাজধানীর সব সড়ক অবরোধ করে প্রতিদিনই আন্দোলন করেন। আন্দোলন পরবর্তীতে এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যা আর কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনার ছেলে ও তার সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও বিবিসিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোটা আন্দোলন যে সরকার উৎখাতের দিকে গড়াবে, সেটি তারা কেউ ধারণা করতে পারেননি।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য উসকে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকে
গত ৪ জুলাই আদালত যখন শুনানি আরও এক মাস পেছান তখন ছাত্রদের আন্দোলন আরও তীব্রতর হতে থাকে। অবশেষে ৬ জুলাই কোটাবিরোধীরা সারা দেশে ‘বাংলা বন্ধের’ ডাক দেন। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, পরীক্ষা বর্জন ও সাধারণ ছাত্র ধর্মঘটের আহ্বান জানান।
গত ১১ জুলাই ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে যে শক্তি প্রদর্শন করছেন, তা বেআইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন।

সারা দেশব্যাপী জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোটা আন্দোলন করতে দেওয়া প্রশাসনিক দুর্বলতা কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়, আমরা ধৈর্য ধরছি। ধৈর্য ধরা মানে দুর্বলতা নয়। আমরা জোড় করে আন্দোলনের ওপর চড়াও হব, তখন আপনি কি বলবেন? সময়মতো সব কিছুই দেখবেন, সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেওয়া হবে।

সেসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের রাজাকার স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে, তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পর ছাত্রলীগের হামলা
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরই গত ১৬ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে প্রথমে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে দফায় দফায় ক্যাম্পাসজুড়ে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী একজোট হয়ে ফের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোঁটা হাতে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দখলে চলে যায় ক্যাম্পাস। সংঘর্ষের সময় কয়েকজন যুবককে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গেছে। সন্ধ্যায় বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেখানে পুলিশ প্রবেশ করে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর মধ্যরাতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে পুলিশ।

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগের পদধারী অনেক নেতা পদত্যাগ করেন। এর বাইরে অনেক কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন।

দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ 
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকে আর দলটি ক্ষমতা থেকে বের হতে চায়নি।
একতরফা বা জালিয়াতির নির্বাচন, বিরোধীদের ও বিরুদ্ধমত দমন, অনিয়ম আর দুর্নীতি, আমলা আর প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে দলটির টিকে থাকা এই পতনের পেছনে মূল কয়েকটি কারণ হিসেবে উঠে আসছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘’এই ১৫ বছরে বেশিরভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা নিজেরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের যে ক্ষমতার ভিত্তি, তার কোনটাই টেকসই ছিল না। কারণ তারা জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।’

‘’ফলে মানুষের একটা ক্যাটালিস্ট বা স্ফুলিংগের দরকার ছিল। সেটাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়েছে’’, তিনি বলছেন। ফলে সরকার বিরোধী একটা আন্দোলন যখন জোরালো হয়ে ওঠে, সেই আন্দোলন ঘিরেও মানুষের ক্ষোভের জন্ম হয়, তখন সেনাবাহিনী, কারফিউ বা পুলিশের পরোয়ানা না করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ গণভবনের উদ্দেশ্যে পথে নেমে এসেছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘’১৫ বছরের একটা পুন্জিভুত ক্ষোভ, জিনিসপত্রের দাম, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, ব্যাংকিংয়ের অনিয়ম সব কিছু নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ কোটা আন্দোলনের একটা উপলক্ষ্য করে একটা পরিবর্তনের আশায় নেমে এসেছে।’’

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বল প্রয়োগ :

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এ বছরের শুরুতেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক অভিযোগ করেছিলেন যে, মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, বিরোধী গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিরুদ্ধ মত দমন করা হয়েছে কঠোর হাতে। বিরোধী গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, দখল নেয়া হয়েছে অথবা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে।বাংলাদেশে গত বহু বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমেও শেখ হাসিনা বা শেখ মুজিব বিরোধী বক্তব্য পোস্ট করার জের ধরে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দমনের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিট অ্যাক্টের মতো আইন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার ও পুলিশ বাহিনী মিলে পুরো দেশকে একটা 'মাফিয়া স্টেট' তৈরি করেছিল। আর এসবের জন্য সবসময়েই সরকারি প্রশাসন যন্ত্র, পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনী এমনকি বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষের মধ্যে দিনে দিনে সরকারের প্রতি বা আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ দানা বেধেছে,ফলে মানুষ যে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি, ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে সময় পার করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতেই গণআন্দোলনে সবাই নেমে এসেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের অধিকার :

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ বাস্তবে কার্যত একটি 'একনায়কতান্ত্রিক' সরকারে পরিণত হয়েছিল বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশে বাস্তবিক অর্থে আর কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এই সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুইটি হয়েছে অনেকটা একতরফা নির্বাচন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিলেও সেখানে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, যে নির্বাচনকে ‘রাতের নির্বাচন’ বলেও অনেকে বর্ণনা করেন। এমনকি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করেছে। সেসব নির্বাচনও বেশিরভাগ সময় একতরফা হয়েছে। যেখানে বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে, সেখানেই অনিয়ম বা কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।
ফলে গত ১৫ বছরে মানুষ আসলে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বেছে নেয়ার বা মতামত জানানোর কোন অধিকার পায়নি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী দলগুলোকে শক্ত হাতে দমন করার অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

পুলিশ ও প্রশাসন নির্ভর একটি দল
বিভিন্ন দেশের ইতিহাসেও দেখা গেছে, জোর করে ক্ষমতায় থাকা দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এক সময় আমলা, প্রশাসন বা পুলিশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। তাদের মতে,টানা বহুদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে এক সময়ের মাঠের রাজনৈতিক দল হলেও দলটির নেতা-কর্মীরা জনগণের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল দলটি। বিশেষ করে দলটি পুরোপুরি প্রশাসন ও আমলানির্ভর হয়ে উঠেছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘’গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করতে করতে তাদের দলটাকে দুর্বল করে ফেলেছিলেন। অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তিদের দলের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে। ফলে তাদের সব কিছু ছিল, কিন্তু দলটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। “প্রতিটি গ্রামেগঞ্জে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নামে, আওয়ামী লীগের নামে তাদের নেতাকর্মীরা যা করেছে, তাতে মানুষের ক্ষোভ জমতে জমতে এমন একটা অবস্থায় গেছে, এবার শুধু সেটার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। গুলিতে যখন অনেক মানুষ মারা গেছে, তখন তাদের গুলিতে মৃত্যুর ভয়ও চলে গেছে,

দুর্নীতি,অর্থ পাচার আর বেগমপাড়া':
আওয়ামী লীগের সরকার তাদের ইশতেহারে ও নেতাদের বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা ঘোষণা করে আসলেও গত তিন মেয়াদে এই দলের ছোট থেকে কেন্দ্রের বেশিরভাগ নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগরিটি (জিএফআই) হিসাবে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সেই হিসাবে ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি হওয়ার মতো খবর এসেছে। অনেক নেতা-মন্ত্রী-এমপি, সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন, বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের মতো অনেক সরকারি সাবেক কর্মকর্তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ তৈরির খবর প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। সরকারি অফিসে ঘুষ দেয়া যেন একটা স্বাভাবিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-মন্ত্রীর বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ, বিনিয়োগ স্কিমে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নেয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। যেখানে মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছে, সেখানে নেতা-মন্ত্রীদের বিদেশে অঢেল সম্পদের তথ্য মানুষকে বিরক্ত আর ক্ষুব্ধ করেছে।

অর্থনীতির দৈন্যদশা’র চাপ:
বাংলাদেশের গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। রাতারাতি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে সব কিছুর ওপরে। মানুষের সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে র্রিজার্ভের ঘাটতি, দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার, ব্যাংকিংখাতে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দেশের গণমাধ্যমে। অথচ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে তাদের মধ্যে দিনে দিনে সরকার বিরোধী মনোভাব তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদের সময় পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, টানেল, পায়রা বন্দর, পায়রা সেতু, রেল সংযোগের মতো বহু ব্যয়বহুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। তাতে দক্ষিণবঙ্গের মতো অনেক স্থানে অর্থনৈতিক পরিবর্তনও এনেছে। কিন্তু সেই সাথে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রীরা বারবার এসব উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে গেলেও তার খুব বেশি প্রতিফলন নিজেদের সাংসারিক বা ব্যক্তি জীবনে তেমন একটা দেখছিলেন না সাধারণ মানুষ। ফলে তারাও একটি পরিবর্তন চাইছিলেন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,গত কয়েক বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় সেগুলো ভারতের জন্য বেশি সুবিধাজনক বলে সমালোচনা রয়েছে। ’ভারতের ওপর তাদের নির্ভরতা, যেসব চুক্তি করেছে, দেখা গেছে সেসব ভারতের পক্ষে যাচ্ছে। ঋণ বাড়ছে।আর এসব কিছুর জন্য দায়ী করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে। এসব কারণে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে পড়ে হাসিনা সরকারের প্রতি।

সমন্বয়কদের নিয়ে ডিবিপ্রধান হারুনের ভাতের হোটেল কান্ড:
গত ১ই আগস্টে ডিবি হেফাজতে নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৮ জুলাই (রোববার) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ তাদের আটক করা হয়েছে।গত ২৭, ২৮ ও ২৯ জুলাই নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ডিবি। ডিবি কার্যালয় থেকে সমন্বয়কদের জোড় করে বিবৃতি দিতেও বাধ্য করেন হারুন। যা ছাড়া পেয়ে গণমাধ্যমকে জানান সমন্বয়করা।

ডিবি হারুনের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গত পহেলা আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বলেন, তারা (সমন্বয়ককারীরা) আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে জিডিও করা হয়েছিল। এখন তারা বলছেন তাদের আর নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। যখন তারা চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, চলে যেতে আমরা কোনো বাধা দেইনি। তারা চলে গেছেন। সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে নেওয়ার বিষয়ে করা মামলা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী জানান, ৬ সমন্বয়ককে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার জন্য। সেটাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটা মামলা করা হয়েছিল। একজন বিচারপতি অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় শুনানি হচ্ছে না।

বাস্তবতা বুঝতে পারেননি হাসিনা সরকার :
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া একটি আন্দোলন কেন সরকার গুলি-গ্রেফতারের মতো বলপ্রয়োগের পথে গেল, তা অনেককে অবাক করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’ মন্তব্যের জবাবে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে যখন পথে নেমে আসে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাদের স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগ দেবে। এটা পরিষ্কার ছিলো যে, প্রথম থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে কোন আলোচনার আগ্রহ বা নমনীয়তা দেখায়নি আওয়ামী লীগ। বরং আগের সব আন্দোলনের মতো শক্ত হাতে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমে নিজেদের ছাত্র বাহিনীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, সেখানে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যদের দিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। বেপরোয়াভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশন, গুলি চালানোয় পাঁচ সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে।তারপরে যখন পরিস্থিতি খানিকটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বলে মনে হয়েছে, তখন শত শত মামলা করে রাতের বেলা ব্লকরেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে ধরে এনে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এমনকি রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার পুলিশের গুলি করার ভিডিও থাকার পরেও পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপিয়েছে, নিরীহ এক শিক্ষার্থীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।ছয়জন সমন্বয়ককে হাসপাতাল ও বাড়ি থেকে ধরে এনে কোন কারণ না দেখিয়েই দিনের পর দিন গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিবৃতি আদায় করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে সেজন্য জবাবদিহিও করতে হয়নি। পুলিশ, বিজিবি ও দলীয় বন্দুকধারীদের গুলি করার ছবি ভিডিও থাকার পরেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নেতারা ক্রমাগত অসত্য বক্তব্য দিয়ে গেছেন, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন, আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছেন।
এমনকি 'পুলিশের পোশাক পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে’ এমন কথাও বলা হয়েছে সরকারি মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। ইন্টারনেট বন্ধ করা নিয়ে জুনায়েদ আহমেদ পলক নানারকম বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিল। 

এছাড়াও আন্দোলনের নেপথ্যে ‘জামায়াত-শিবির রয়েছে’ দাবি করে বরাবরই আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা বাস্তবতা অস্বীকার করে গেছেন। এমনকি এর জের ধরে তারা তড়িঘড়ি করে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধও ঘোষণা করে। এর বাইরে দেশি-বিদেশি মহলের ইন্ধন রয়েছে বলেও নানাসময় অভিযোগ তোলা হয়েছে।
একদিকে যেমন সরকার এর মধ্যে প্রতিপক্ষের ইন্ধন খুজেছে, তেমনি আন্দোলনেও তাদের প্রতিপক্ষরাও নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে, অংশ নিয়েছে। ফলে আন্দোলন ব্যাপকতা পেয়েছে, সংঘর্ষ-সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে।পরবর্তীতে সরকার আলোচনার কথা বললেও ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে এটা কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছাড়িয়ে জনমানুষের ক্ষোভের একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের দাবিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব আমলে নেয়নি, তেমনি পরের দিকে এসব দাবির সাথে সাথে সাধারণ মানুষের দাবি মিশে গেছে, তারাও এর অংশ হয়ে উঠেছে, সেই বাস্তবতাও তারা বুঝতে পারেনি।পুরো পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের অবিবেচনা, ভুল সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
আওয়ামী লীগ ঘরানার বিভিন্ন সংগঠন, গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের সেসব অযৌক্তিক ও অবিবেচক সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়ে গেছে বলে বিশ্লেষকরা অভিযোগ করছেন।

এসব কিছুই সাধারণ  মানুষের ভেতর ক্ষোভ তৈরি করেছে,তাদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

স্বাধীনতার পর দুইবার নির্বাসনে শেখ হাসিনা
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার কর্মসূত্রে জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা গিয়েছিলেন বোনের কাছে বেড়াতে। দেশে স্বজনদের হারিয়ে এরপর নির্বাসিত জীবন শুরু হয় শেখ হাসিনার, আশ্রয় পান ভারতে। ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগকে এক করতে ১৯৮১ সালে দলের ত্রয়োদশ কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন তিনি।

এরপর ১৯৯৬ সালে ভোটে জিতে শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। আর ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আবারও বিরোধী দলে যান শেখ হাসিনা। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর টানা সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেন।
তিন নির্বাচনে নানা বিতর্কের মধ্যেও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন শেখ হাসিনা। এবার ছাত্রজনতার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব