জেনারেশন জেড এর বিজয় এবং স্বৈরশাসনের অবসান

দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ছাত্র জনতা মিলে স্বৈরাচারি দুঃশাসনের বিরদ্ধে যে অভূতপূর্ব সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন, অনেক রক্ত ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে সেই সংগ্রাম পূর্ণতা পেয়েছে। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতা অসাধ্য সাধন করেছেন। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। অভূতপূর্ব এক জনবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গত ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে দেশের ছাত্র জনতার মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এ জনবিস্ফোরণ তারই বহিঃপ্রকাশ। এ গণঅভূত্থান আবারও প্রমাণ করল যে, জনগণের শক্তির কাছে কোনো স্বৈরশাসকই টিকে থাকতে পারে না। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ফ্যাসিবাদের অক্টোপাশ থেকে মুক্ত হয়েছে। শত শত ছাত্র জনতার প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে।
১৫ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। ব্যাপক আকার পেয়েছে দুর্নীতি, বাড়তে বাড়তে গোটা ব্যবস্থাকেই গ্রাস করেছে। আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হয়ে পড়েছে দুর্নীতির সুরক্ষাদাতা। শেখ হাসিনা বিশ্বের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারি শাসন চালিয়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। ২০০৬ সালে অক্টোবরের শেষদিকে চারদলীয় জোট সরকার যখন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন সংবিধান অনুযায়ী, সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা। কিন্তু কে এম হাসান কোনো এক সময় বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন অভিযোগ এনে চারদলীয় জোটের শরিকদের রাজপথে প্রতিহত করতে ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-বায়তুল মোকারম এলাকায় লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বিশ্বকে হতবাক করেছিল। সেই তান্ডবের মধ্য দিয়ে ভারতীয় যোগসাজশে বৈশ্বিক মোড়লদের সহযোগিতায় নীরব সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনা সমর্থিত এক-এগারো সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির আওতায় ভারতকে বাড়তি স্পেস দিতে বাংলাদেশে একটি ভারতীয় তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরী করাই ছিল এক-এগারো সরকারের মূল লক্ষ্য। প্রথমদিকে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে কিছু ইতিবাচক সংস্কারের উদ্যোগের কারণে সেনা সমর্থিত সরকারের কর্মকান্ডে এক ধরণের নিরপেক্ষতা দেখা গেলেও সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদেরে ভারত সফরের পর অল্পদিনের মধ্যেই জনগণের সেই প্রত্যাশা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের পরিকল্পিত নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর টাস্কফোর্স, দুদক এবং বিশেষ ট্রাইবুনালের কার্যক্রমের টার্গেট হয়ে পড়ে বিএনপি’র জনপ্রিয় প্রার্থীরা। বিএনপি-জামায়াতের শত শত এমপি, নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া এবং ইনকাম্বেসি ফ্যাক্টর কাজে লাগিয়ে হাওয়া ভবনের মিথ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট ট্রাডেজি, জেএমবির কথিত বোমা হামলা ইত্যাদি বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোকে একটি একপেশে, একমুখী প্রচারণায় লিপ্ত করার পেছনে ভারতীয় আধিপত্যবাদের নীল নকশাই সক্রিয় ছিল।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশকে পুলিশি স্টেটে পরিণত করে। ২০০৯ সালে আইন সংশোধন করে পুলিশকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পুলিশকে প্রমোশন দিয়ে তাদের গ্রেড বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেতন ভাতা বাড়িয়ে দিয়ে পুলিশকে চতুমূর্খী সুযোগ সুবিধা তৈরী করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই কাজের ফলে পুলিশ নিজ দায়িত্বে সরকারের খাস গোলামে পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ বছর বিরোধীদলের আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগ দলীয় বা সাংগঠনিকভাবে মাঠে সক্রিয় থেকে বিরোধীদলের আন্দোলন ঠেকাতে না পারলেও পুলিশকে দিয়ে আন্দোলন দমাতে পেরেছে। ইয়াসমিন ধর্ষণ-হত্যা থেকে শুরু করে ছোট-খাটো অনেক অপরাধের সঙ্গেই পুলিশের সম্পৃক্ততার প্রমাণও মিলেছে, জড়িতদের সাজাও হয়েছে। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি পুলিশি নির্যাতন। রাজধানীতে রাব্বী নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা পুলিশের হাতে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিদর্শক বিকাশচন্দ্র রায়, ঢাকার আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে হত্যা, ঢাবি শিক্ষার্থী কাদেরকে নির্যাতনসহ অনেক ঘটনাই সামনে আসে। গুটিকতক পুলিশের কর্মকান্ডে গোটা পুলিশ বিভাগের ওপরই সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হওয়াও অমূলক নয়। ২০০১ সালে 'দুর্নীতির শীর্ষে পুলিশ' শীর্ষক একটি জরিপ প্রতিবেদন দৈনিকের সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসে। এরপর থেকে পুলিশের নির্যাতনে সাধারণ মানুষ যে কতটা অসহায় সেই চিত্র গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে ভৌতিক বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এরপর সংসদে ২০১১ সালে সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বিলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়। আর এ সুযোগ করে দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি রায়। হাইকোর্টে বৈধ ঘোষণা হওয়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে ২০১১ সালের মে মাসে অবৈধ ও অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বেঞ্চ। এরই ভিত্তিতে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বিলের মাধ্যমে আসা জাতীয় সংসদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফিরে আসে দলীয় সরকারের অধীনে ভোট গ্রহণের প্রথা। এবিএম খায়রুল ১৯ তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১০ সালে। সাত মাস ১৮ দিনের দায়িত্ব পালনকালে যেসব রায় দিয়েছিলেন তার মধ্যে এটিই পরের চৌদ্দ বছরের শাসন ব্যবস্থার গতি প্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। তিনি আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতনে পদে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এসময় তিনিই মূলত সামরিক বাহিনীতে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটান ও ব্যাপক দলীয়করণ করেন। এছাড়াও মেধাবী অফিসারদের ক্যারিয়ারের প্রতিবন্ধকতা তৈরীর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনেক গুমের নির্দেশদাতা হিসেবে বিভিন্ন সময় তার নাম আলোচিত হয়েছে। ২০১৯ সালে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া আলোচিত গোপন কারাগার আয়না ঘর তৈরিতেও তারিক আহমেদ সিদ্দিক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে দাবি একাধিক সাবেক সেনা কর্মকর্তার। আয়নাঘরে নির্যাতনের ভুক্তভোগীদের অন্যতম লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক) গত ৬ আগস্ট নিজের একাধিকবার গুম হওইয়ার ঘটনা তুলে ধরেন এবং এর মূল হোতা হিসেবে দায়ী করেন মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ কমিশনের অধীনেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল সে নির্বাচন। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন। এ সময়ও জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত। এ কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৯ আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একতরফা সুবিধা প্রদান, ভোট কারচুপি, নির্বাচন কমিশনাররা সরকারদলীয় কর্মীর মতো বক্তব্য রাখাসহ বিতর্কিত নানা ঘটনার নজির দেখা যায়। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে ৮ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একতরফাভাবে বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে মোট ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হলেও পরে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই সেটি ৪১ শতাংশ ঘোষণা করা হয়। ভোটের আগের দিন-রাতে ব্যালট বক্সে সিল মারা ব্যালট আগে থেকে রাখার অভিযোগ ওঠে সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। সাবেক দুই আমলা মো. আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউস। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখেন ২০১৩ সালে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে যোগদান করা মো. শহীদুল হক। মাসুদ বিন মোমেন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পেশাদার হিসেবে খ্যাত এ কূটনীতিক অত্যন্ত আনুগত্যের সঙ্গে সরকারের পররাষ্ট্র এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের ব্যাপক প্রয়াস চালিয়েছেন তিনি। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর সরকারের মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন এ মুখ্য সচিব। প্রয়াত এইচ টি ইমামের পরই তিনিই মাঠ প্রশাসনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে আবির্ভূত হন। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন। বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি নিয়োগ পান বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তার মেয়াদের পুরো সময়টায় ব্যবসায়ীদের সুবিধা পাইয়ে দিয়ে হাসিনা পন্থী রাখা ও নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ ছিল তার। আর্থিক খাতে বর্তমান বিশৃঙ্খলার জন্য যাদের সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়, তাদের অন্যতম পলাতক সাবেক গভর্নর ও অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লে. জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ একটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার সময় থেকেই দেশে গুমের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গুম করে আওয়ামী লীগের ২০১৪-এর নির্বাচন জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে বিশেষ ওই সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন। তার বিরুদ্ধেও বিরোধী নেতাকর্মীদের গুমের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন। তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই ২০১৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই বছরই সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা ঘটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠান জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ থেকে মেজর জেনারেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান নাগরিকদের ফোনকল ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপে আড়িপাতা এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট অপারেটর নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এ কে এম শহীদুল হক। এ আইজিপির সময়কালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তিন পদে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
যাহোক, কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে গণআন্দোলন ও গণবিস্ফোরণে রূপ দেয়ার রূপকার মূলত শেখ হাসিনা নিজেই। তিনি ইতিহাসের পাঠ থেকে মোটেই শিক্ষা নেননি। লগি-বৈঠার তান্ডব, ক্র্যাকডাউন, গুম-খুন, একের পর এক ম্যাসাকার। গণহত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার মসনদ অক্ষত রাখার এমন পৈশাচিক বাসনা ও উদঘ্র লোভ সমসাময়িক বিশ্বে আর কোনো দেশের কোনো স্বৈরশাসকের মধ্যে দেখা যায়নি। দেড় দশক ধরে সাজানো ক্ষমতার তখত-তাউস, কয়েক স্তরের আগ্রাসী নিরাপত্তা বলয় এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের সর্বাত্মক এস্টাবলিস্টমেন্টকে এ দেশের নতুন প্রজন্ম বুকের তাজা রক্তের আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে অভূতপূর্ব বিপ্লবের এক নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। দলীয় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে এ ভিন্ন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। নিষ্ঠুর স্বৈরাচারের পৈশাচিক বাসনা-নির্দেশনা এবং মুক্তিকামী মানুষের সব আশঙ্কাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা লাখো তরুণের শহীদি হুঙ্কার এবং জনগণের আস্থার মূর্ত প্রতীক হিসেবে সেনাবাহিনীর ঐতিহাসিক ভূমিকা বাংলাদেশে সত্যিকারের স্বাধীনতা বয়ে আনতে সক্ষম করেছে। আমাদের জাতীয়তাবাদী ইতিহাসে বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশে ৯০’এর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনকে যেভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে। জেনারেশন-জেড যে সাহস, ত্যাগ এবং অবিচলিত স্পৃহার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের সব নীলনকশাকে ব্যর্থ করে বিজয়ের পতাকা উড্ডীন করেছে তা’ এ জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এটি আমাদের স্বাধীনতা মুক্তি সংগ্রামের অপ্রত্যাশিত দ্বিতীয় ও চুড়ান্ত ধাপ।
T.A.S / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
