নারী নির্যাতন এবং এর প্রতিকার

একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। পরিবার থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা, সংস্কৃতি সামগ্রিক দিক থেকে নারীরা আজ পুরুষের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজ দিন দিন উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে যার পেছনে রয়েছে নারীদের অসামান্য অবদান।
উন্নয়নের এই অগ্রগতিতে জীবনযাত্রার মানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। কিন্তু এই পরিবর্তন ও উন্নয়নের পরেও নারীর প্রতি নৃশংসতা অর্থাৎ নারী নির্যাতন এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কোনরূপ পরিবর্তন হয়নি। বরং সময়ের সাথে সাথে এই নির্যাতনের হার যেন ঊর্ধ্বগামী। যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, নারী পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ পত্রিকা খুললেই পেয়ে থাকি।
নারীর প্রতি এই নৃশংসতা দেশে অনেক আগে থেকেই চলে আসলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এ যেন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লকডাউনের জন্য মানুষ এখন ঘরবন্দী অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে যার ফলে বেড়ে চলছে নারী নির্যাতন। আজকাল ঘরে বাইরেই এই নিষ্ঠুরতা সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক গণমাধ্যমেও ঘটে চলছে নারী শ্লীলতাহানি।
সাম্প্রতিক সময় ঘটে যাওয়া সবচেয়ে আলোচিত একটি ঘটনা হলো টিকটিক নামক সামাজিক গণমাধ্যম ব্যাবহার নারী পাচারের ঘটনা। এছাড়াও নারী পাবলিক ফিগার যারা আছে তাঁদের কমেন্ট বক্সে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, অশ্লীল শব্দোচ্চারণ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে তাদের হেনস্তা যেমন দিন দিন বেড়ে চলছে সেই সাথে সাধারণ মেয়েদের সাথেও চলছে অসহনীয় নির্যাতন। ইনবক্সে আপত্তিকর ছবি, মেসেজ দেয়ার পাশাপাশি গোপনভাবে ধারণকৃত ভিডিও, ছবির মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল, অনৈতিক কাজের জন্য চাপ প্রয়োগের মতো অসামাজিক কাজ।
এই সকল নির্যাতন এড়াতে সরকার আইনি ব্যাপারে অনেক কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। ২০২০ সালে ঘটে যাওয়া কয়েকটি আলোচিত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দেশজুড়ে ধর্ষণ-নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি "মৃত্যুদণ্ড" করার দাবি জানান। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার আইনটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এছাড়া নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ সেবা চালু, নির্যাতনকারীরে কঠোর শাস্তির বিধান, বেসরকারি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষে, সেমিনার ইত্যাদি নানা ভাবে নির্যাতন এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এতো কিছুর পরেও নারী নির্যাতন কমছে না। এর পেছনে মুল কারণ আইন ব্যাবস্থা কঠোর হলেও তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এখনো রয়েছে অনীহা। আইনের ফাঁক-ফোকর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে বিত্তবান অপরাধীরা। এছাড়া অপরাধের তুলনায় দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তিও দেয়া হচ্ছে খুব কম। বিচারহীন অবস্থায় থেকে যায় অনেক ভিকটিম। আইনী ব্যাবস্থার শিথিলতার পাশাপাশি পারিবারিক নৃশংসতায় ভুক্তভগী নারী সবসময় আইনের আশ্রয়ও চাইতেও পারে নানাবিধ চাপের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নারী নির্যাতন অবস্থা আরো বিপদজনক হয়ে উঠবে। তাই আইনী ব্যাবস্থার পাশাপাশি, সমাজ, পরিবার সামগ্রিক দিক থেকেই সচেতন হতে হবে আমাদের সকলের। প্রত্যেক বাবা মা এর উচিত তাদের উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের সাথে বন্ধুসুলভ ব্যবহার করা। বর্তমানে কিশোর বয়সী ছেলে মেয়েদের বেপরোয়া চলাফেরা বেড়ে যাচ্ছে যা নারীর প্রতি নৃশংসতা বৃদ্ধির বড় কারণ। তাই এই সকল কিশোর কিশোরীদের সময় থাকতে বেপরোয়া জীবন যাপন থেকে সরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া শিশু সন্তানদের ছোট থেকে নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি নারী পুরুষের বৈষ্যমতা থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রত্যেক মায়েদের উচিত তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় তাদের সন্তানদের সাথে শেয়ার করা যাতে তারা নির্যাতনের ভয়বহতা উপলব্ধি করতে পারে। এছাড়া শিক্ষা ব্যাবস্থায় আনতে হবে পরিবর্তন। স্কুলগুলোতে সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। বাবা-মায়েদেরও মানসিকতা তৈরি করতে এই শিক্ষাটা দেবার। কারণ সঠিক শিক্ষার অভাবে ছেলেমেয়েরা অল্প বয়সে পর্নোগ্রাফিতে ঝুঁকে পড়ছে। এতে করে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানির বিষয়গুলো পুরুষদের মধ্যে চলে আসে। এই ক্ষেত্রে যথাযথ শিক্ষাটা খুব জরুরি। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার অন্ধ বিশ্বাস, গোড়ামী দূর করে নারীকে করতে হবে অন্যায়ের প্রতিবাদ। ঘর কিংবা বাহিরে যে যেখানেই নৃশংসতার শিকার হচ্ছে, সেখান থেকেই নিতে হবে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ।
পরিশেষে বলা যায় শুধু সরকার, আইনী ব্যাবস্থার মাধ্যমেই নারী নির্যাতনের সামাজিক ব্যধি দূর করা সম্ভব নয় বরং সকলের এক সাথে নিরবিচ্ছিন্ন পদক্ষেপই হবে এই অবক্ষয় ভেঙে ফেলার মূল হাতিয়ার। আসুন আমরা আমদের জায়গা থেকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করি, নারী নির্যাতন বন্ধ করে নারী স্বাধীনতা নিশ্চিত করি।
লেখা: তানহা আহমেদ তাহিশিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
