অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা
গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে লোকবল সংকটে ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতারা
লোকবল সংকটে ধীর গতিতে চলছে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জরুরী সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে সেবা গ্রহীতাদের ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাঙ্খিত সেবা নিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একজন গ্রাহককে নতুন পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ, অনলাইন আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসের নীচতলায় নির্দিষ্ট ১০১নং কক্ষের সামনে দাঁড়াতে হয়। এখানে নারী ও পুরুষদের জন্য দুটো পৃথক লাইন থাকলেও লোকবল সংকটের কারণে ওই কক্ষে দায়িত্বরত একজন নারী কর্মীকেই নতুন আবেদন জমা নিতে হচ্ছে। নতুন পাসপোর্ট এর জন্য বিপুল সংখ্যক আবেদন পত্র জমা নিতে তাকে রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা গেছে। পরে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আবেদনকারীকে ১০৩ নং ও ১০৫ নং কক্ষে পরবর্তী কার্যক্রম (ছবি তোলা, স্বাক্ষর করা, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের মনির ছাপ) সম্পন্ন করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। লোকবল সংকটে প্রতি কক্ষে দুইজনের পরিবর্তে একজনকেই সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া একজন কর্মচারী অসুস্থ থাকায় ১০৪ নং কক্ষে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। সেবা নিতে আসা সকলকেই লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা সেবা গ্রহীতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দালাল শ্রেণির লোকজনের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়েনি। অনেকটা দালালমুক্ত পরিবেশে সেবা প্রদান চলছে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ও তাদের সন্তানদেরকেও লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে দেখা গিয়েছে। এদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বসার জায়গা না থাকার কারণে অনেক বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বেশ বিরক্তি ও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে লোকবল সংকটের কারণে উক্ত দপ্তর থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে তাদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নতুন পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে আলাপকালে জানা যায় পাসপোর্ট অফিসে নতুন পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য সকালে বাড়ি থেকে এখানে পৌঁছালেও কার্যক্রম শেষ করে বাড়ি ফিরতে আমাদের অনেকের রাত হয়ে যাবে। বিরক্তির সুরে তারা বলেন সরকার তো আমাদেরকে বিনা পয়সায় পাসপোর্ট দিচ্ছে না। সরকারের রাজস্ব খাতে অর্থ জমা হচ্ছে। সেই অর্থে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যদি এই অফিসের শুন্য পদগুলোতে দ্রুত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে জেলাবাসীর ভোগান্তির শেষ হয়। ভোরে বাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়ে গোপালগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন পত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরতে আমাদের সন্ধ্যা অথবা রাত হয়ে যাচ্ছে। এতই যদি সময় লাগবে তাহলে জেলায় জেলায় পাসপোর্ট অফিস বানিয়ে কি লাভ হলো!
এদিকে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নবনিযুক্ত উপ-পরিচালকের সাক্ষাৎকার নিতে তার কক্ষে গিয়ে তাকেও বেশ কর্মব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। এ বিষয়ে নবনিযুক্ত উপপরিচালক মোঃ নুরুল হুদা বলেন, দুই দিন হয়েছে আমি এখানে যোগদান করেছি। আমার এখানে মাত্র ৫ জন স্টাফ নিয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক সেবা গ্রহীতাদেরকে সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যেও একজন স্টাফ অসুস্থতার জন্য ছুটিতে থাকায় আরো সমস্যা বেড়েছে। লোকবল সংকটের কারণে এমনটি হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।
গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সেবা গ্রহীতা সহ সচেতন মহল।
এমএসএম / এমএসএম