ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

অভিভাবকহীন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: সংকটের বড় কারণ দলীয়করণ


এস এম মোজতাহীদ প্লাবন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় photo এস এম মোজতাহীদ প্লাবন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ২২-৮-২০২৪ বিকাল ৫:২৯

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা চ্যুত হওয়ার পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষক কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা সবাই ছিলো বিগত সরকার ও উপাচার্যের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্বাভাবিকভাবে চলছে না শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

নতুন নিয়োগও দেওয়া শুরু হয় নি।সরকার পতনের পরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়টিতেও সকল প্রকার দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবী করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবীতে প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সাথে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবীর মুখে টানা ৮ দিনের আন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দুইটি পদ খালি হওয়ায় কার্যত অসাড় হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম৷ দ্রুত এই দুই পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করার দাবি জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলতে থাকে পদত্যাগের হিড়িক। তালিকায় যুক্ত হন বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, বঙ্গবন্ধু হলপ্রভোস্ট, বঙ্গমাতা হলপ্রভোস্ট, অগ্নিবীণা হলপ্রভোস্ট। বাদ যায়নি বিভিন্ন হাউজ টিউটরও। দলীয় আনুগত্য থাকায় বিগত উপাচার্যের আমলে তাঁরা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিল। 

এদিকে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখা যায় দপ্তরে দপ্তরে ঝুলছে তালা। আত্মগোপনে দপ্তর প্রধান গণ। এই তালিকায় ছিলেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস অফিসের পরিচালক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক ড. তারিকুল ইসলাম, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম আশরাফুল আলম মুকুল, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: মোশারফ হোসেন, সহকারী রেজিস্ট্রার এস. এম. হুমায়ুন কবির, সহকারী রেজিস্ট্রার ইব্রাহীম খলিল, প্রকিউরমেন্ট অফিসার প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ্, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা অফিসার রেজাউদ্দৌলা প্রধান, অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোকারেরম হোসেন মাসুম। এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের সেকশন অফিসারগণ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায় তাদের প্রত্যেকেই বিগত সরকার ও উপাচার্যের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলেন। দলীয় আনুগত্য থাকায় তাঁরা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলোও এই সুযোগে ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন আবাসিক হলে প্রভাব বিস্তার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এমতাবস্থায় সেশনজটের আশংকা করে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি প্রতিনিধি (সিআর) আরিফ বিল্লাহ বলেন, "প্রশাসনিক ভবন অকার্যকর থাকায় নিয়মিত ক্লাস করেও এক্সাম দেওয়া সম্ভব হবে না, এজন্য আমরা সেশনজটের আশঙ্কা করছি। এছাড়া আমরা আমাদের পরীক্ষার মার্কশিট সহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্র তুলতে পারছি না, সাইন নিতে পারছি না। ফলে অনেক জরুরী কাজে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই দ্রুত আমাদের প্রশাসনিক ভবনের সকল দপ্তরের কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।"

নিয়োগে দলীয়করণ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো: রাজু শেখ বলেন, "আমরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করেছি সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে। আমাদের ক্যাম্পাসে প্রশাসনের প্রায় সবগুলো দায়িত্বই দলীয় আনুগত্য বিবেচনা করে দেওয়া হতো। যোগ্যদের বঞ্চিত করা হতো। যারা অযোগ্য তারাই দায়িত্বে ছিলো। এজন্য তারা অফিসে আসছে না। তাছাড়া তো অফিস না করে দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে রাখার কারণ নাই। যাদের নিয়োগ ত্রুটিপূর্ন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের নিয়োগ বাতিল করে স্ব স্ব পদে পুর্ননিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক।"
রেজিস্ট্রারকে তাঁর ছুটির কারণ অবগত করা দরকার বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, "যারা এখনো অফিস করছেন না এটা মোটেই কাম্য নয়। যেহেতু অফিস কার্যক্রম চালানোর জন্য সরকারি নির্দেশনাও আছে সেক্ষেত্রে প্রত্যেকের উচিৎ অফিসে আসা। কেউ না আসলে তার দায় তাকে নিতে হবে। এছাড়া আমি শুনেছি রেজিস্ট্রার এক মাসের ছুটিতে আছেন। তিনি কোন রিজনে, কার থেকে এই ছুটি নিয়েছেন এটাও সবাইকে অবগত করা দরকার । আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপাচার্য নিয়োগ যেন দ্রুত দেয় সেজন্য ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করি নতুন উপাচার্য আসলে এগুলো তিনি গুরুত্বের সাথে দেখবেন। তিনি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা এবং নিয়োগে যে অনিয়মের  অভিযোগ আছে সেগুলো তদন্ত করবেন এবং তার নেতৃত্বে আমরা সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো।"
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে ও দলীয় আনুগত্য বিবেচনা করে বিভিন্ন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, "তৎকালীন উপাচার্যগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিবেচনা না করে দলীয় আনুগত্য বিবেচনা করেই নিয়োগগুলো দিতেন। এক্ষেত্রে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠজন যারা তোষামোদ বা পৃষ্ঠপোষকতা করতো তাদেরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে নিয়োগগুলো দেওয়া হয়েছে। এজন্য সেই সকল অযোগ্য ব্যক্তিগণ অফিস না করে আত্মগোপনে রয়েছে। নতুন উপাচার্য যোগদানের পর যার যার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে সেগুলো বিচার করবে এবং যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিবে এমনটাই আশা করি। যাতে আর কখনো নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এমন অভিভাবকহীন না হয়।"
তবে অফিস না করার কারণ জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবিরকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি কল ধরেন নি।
অভিভাবকহীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অচলাবস্থার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "এবিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আপনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।

এমএসএম / এমএসএম

মাংসের খাটিয়ায় কুকুর, ছবি তুলতেই সাংবাদিককে হুমকি

ইবি'র ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

ঢাবির একাডেমিক কার্যক্রম ২ সপ্তাহ বন্ধ, হল ত্যাগের নির্দেশ

ভিকারুননিসায় রোববারের প্রথম-নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত

ইবি'র ৪৭তম জন্মিদনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ

জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী অবন্তির ভাবনা

জকসু নিয়ে কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদপ্রার্থী ইমনের ভাবনা

ছাত্রদলের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের সাপ্তাহিক স্কুল উদ্বোধন

শেকৃবিতে নিয়োগে আওয়ামী পুনর্বাসন, এলাকাপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ

উত্তরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

জকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করবে সাংবাদিক সম্পদ

দীর্ঘ তিন যুগ পর জাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিল

জকসু নির্বাচন: ছাত্রশিবিরের ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা