বন্যা কেড়ে নিল সাংবাদিকসহ কয়েক শত লোকের স্বপ্ন পানের বর
বন্যায় কেড়ে নিল দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার রায়পুর উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক জাকির হোসেনের স্বপ্ন একমাত্র উপার্জনের পথ ৫০ শতক জমির পানের বর। শুধু সাংবাদিক জাকির হোসেন নয় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রায় ৬ শতাধিক পান চাষীদের দুর্দিন যাচ্ছে, তারা খেয়ে না খেয়ে কোন ভাবে বেঁচে আছে। টানা বৃষ্টিতে, ভারত থেকে ধেয়ে আশা বন্যার পানি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সম্প্রতি ফেনী নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর সৃষ্ট বন্যার কারণে রায়পুর উপজেলায় কৃষিতে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এতে প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পান চাষিদের। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রান্তিক পান চাষীরা।
২৯ আগষ্ট ( বৃহস্পতিবার) সাংবাদিক জাকির হোসেন বলেন, "আমি সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাড়ির কাছেই ৫০ শতক জমি লীচ নিয়ে কয়েকটি এনজিও থেকে লোন নিয়ে পানের বর করি। স্বপ্ন একটাই এই পানের বর থেকে পান বিক্রি করে হালাল পথের রোজগার দিয়ে জীবন সংসার পরিচালনা করা। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন গুড়েবালি হয়েছে। বন্যা আমার সকল স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। বন্যার পানি পানের বরে ঢুকে পান সহ বরের সকল গাছ পঁচে গেছে। এখন কীভাবে সংসার চালাবো আর কীভাবে বা লোনের কিস্তি দিব। এখন ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করছি জানিনা আল্লাহ কীভাবে আমাকে সাহায্য করবেন। তবে বর পঁচে আমার প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এক্ষতি কখনো কেটে ওঠার নয়। সরকারি কোন আর্থিক সহযোগিতা বা কৃষি অফিসের কোন সহায়তা পেলে হয়তো কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবো, দোয়া করবেন যেন আল্লাহ একটা উপায় করে দেন। "
উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রে জানা গেছে এ বছর রায়পুর উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৩৬হেক্টের জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ পান চাষ হয় রায়পুর পশ্চিম অঞ্চল ১ নং উত্তর চর আবাবিল ,২ নং চর বংশী, ৯নং দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়।
তথ্য সংগ্রহে গিয়ে দেখা যায়, বরজগুলোতে হাটু পরিমান বন্যার পানি রয়েছে। একটি বরজে আব্দুল করিম নামের এক চাষি পঁচে যাওয়া পানের গাছ পরিষ্কার করছেন। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে জমিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। সেই টাকা দিয়ে দুই বছর আগে ১৫ শতক জমিতে শুরু করেন পান চাষ। দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তুু এবারের বন্যায় পুরো বরজ পচে গেছে। আয়ের অন্য কোনো পথ নেই। নতুন করে আবার বরজ তৈরি করতে হবে। একই গ্রামের আমেনা খাতুন (৪০) বলেন, পাঁচ বছর আগে তাঁর স্বামীর পা ভেঙে পঙ্গু হয়ে পড়েন। সংসারের দায়িত্ব আসে তাঁর কাঁধে। একমাত্র অবলম্বন ছিল ছয় শতক জমির একটি পানের বরজ। বন্যায় পুরো বরজই নষ্ট হয়ে গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাফিয়া খাতুন। তিনি আরও বলেন, বরজ তৈরি যেমন ব্যয়সাপেক্ষ, তেমনি সময়সাপেক্ষ। এক বিঘার একটি বরজ তৈরি করতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। এ সময় পানচাষিরা পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবেন?
একই রকম ক্ষতির শিকার কেওড়াডগীর মোহাম্মদ আলী, আনোয়ার, মনর বেপারী,বোরহান চৌকিদার, আবুল বাসার। তাঁরা বলেন, বন্যায় বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু পানগাছ পচে যায়নি, পুরো বরজ নষ্ট হয়েছে। এতে তাঁদের প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসান ইমাম বলেন উপজেলার ২৩৬ হেক্টর পান, ৩১৫০হেক্টর ধান,এবং ৫ হেক্টর আগাম সবজি চাষ হয়েছে। নিম্নে অঞ্চল গুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে পান ও রোপা আমন ধান, আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের উপকৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করছে।আগামী সাপ্তাহে ক্ষতিস্থদের মাঝে বীজ বিতরন করা হবে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের দাবী সরকারি সহায়তা পেলে কিছুটা হলেও কষ্ট দূর হবে তাদের এবং এনজিও গুলি যেন কয়েকমাস কিস্তি না নিয়ে তাদেরকে সময় দেয়।
T.A.S / T.A.S