চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসে অর্ধশত কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) জরিপে ঘুষের তালিকায় ৩য় স্থানে থাকা পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের ২ টি অফিসে বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ঘুষ লেনেদেনের খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অফিসের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা ও দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা এসব ঘুষের টাকা নিয়ে থাকেন বলে বিশ্বস্ত একাধিক সুত্রে জানা গেছে। সরকার পরিবর্তণ হলেও বহাল রয়েছেন ঘুষ বাণিজ্যের মূলহোতারা। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভালো কাজগুলোর সুনাম চাপা পড়েছে গুটিকয়েক অসৎ কর্মকর্তার অপকর্মের স্তুপে। সরকারের সুনাম ধরে রাখতে এসব মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের। সুত্র জানায়, শেখ হাসিনার সরকার থাকুক বা না থাকুক, চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের রাজত্ব বরাবরই চলমান রয়েছে। চট্টগ্রামের মুনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস এবং পাঁচলাইশে অবস্থিত চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এমন কর্মযজ্ঞ চলছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, মুনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন প্রায় ৮০০-৯০০টি ই-পাসপোর্টের ফাইল জমা হয়, যার মধ্যে প্রায় ৫৫০টি দালালের মাধ্যমে জমা হয়। প্রতি ফাইলে ১৬০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়, ফলে প্রতিদিন ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সপ্তাহে ৫ দিনে মোট ৪৪,০০,০০০ টাকা এবং মাসে ২২ দিনে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় হয়। ৪. বছরে এই ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন ৫০০-৫৫০টি ই-পাসপোর্টের ফাইল জমা হয়, যার মধ্যে দালালের মাধ্যমে জমা হয়, ৩০০-৩৫০টি। প্রতি ফাইলে ১৫০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়, ফলে প্রতিদিন ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সপ্তাহে ৫ দিনে মোট ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মাসে ২২ দিনে প্রায় ১ কোটি টাকা। বছরে এই ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ কোটি টাকা। দালালদের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। এর বাইরে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জন্য আলাদাভাবে চুক্তির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেয়া হয়। তাছাড়া কারো বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও নেয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। আবার ঘুষের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদেরও পাসপোর্ট করে দেয়া হয়। এভাবে বছরে আরো কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়।
সুত্র জানায়, ঘুষের লেনদেনের পদ্ধতি এবং দালালদের ভূমিকা পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ লেনদেনের পদ্ধতি অত্যন্ত সুসংগঠিত। প্রতিটি পাসপোর্ট ফাইলে দালালদের একটি সাংকেতিক চিহ্ন থাকে, যা অফিসের কর্মকর্তারা সহজেই চিহ্নিত করতে পারেন। এই সাংকেতিক চিহ্ন ৭৭ নং কলামে দালালের ই-মেইল আকারে দেওয়া হয়। সাধারণত পাসপোর্ট আবেদনকারীরা যদি এই সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার না করেন তবে তাদেরকে নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। ফলে সহজ সরল লোকের নানাভাবে হয়রানি শিকার হন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ ছাড়া কিছু হয়না। ঘুষ দিলে অসাধ্য সাধন হয় আর না দিলে দিনের পর দিন ঘুড়েও সমাধান হয়না। এদরে মানবিক বিবেক বোধ কাজ করেনা, টাকাই যেন তাদের কাছে সবকিছু। তারা সকলেই এই অবস্থা থেকে মুক্তি চান। তবে সরকার কিভাবে করবে তা নিয়ে ভাবতে চাননা তারা, তারা শুধুমাত্র ঘুষ ও হয়রানি বিহীন সেবা চান। পাসপোর্ট পাওয়া যোগ্য হলে ঘুষ ছাড়া পাবে আর অযোগ্য হলে কোটি টাকার বিনিময়েও যাতে দেয়া না হয়। তবে সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠাগলো ঘুষ বাণিজ্যের মূলহোতা ও দালাল মুক্ত করার দাবি জানান।
এব্যপারে সনাক টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ’শুধু পাসপোর্ট নয় সেবামূলক যেকোন প্রতিষ্ঠানে ঘুষ আদায় বা হয়রানি খুবই দুঃখজনক। পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি আরো মারাত্মক। কিন্তু আমাদের ভেবে দেখা দরকার কারা পাসপোর্ট বানাতে যায়। বিদেশে শ্রম বিক্রি করে রেমিটেন্স আহরণের উদ্দেশ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষ পাসপোর্ট বানায়। আর বাকিগুলো চিকিৎসা, ব্যবসায়ীক কাজে বা ভ্রমাণের জন্য বানান। অনেকে একটু ভালো ইনকামের জন্য মানুষ থেকে ধারদেনা করে, বা নিজের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে পাসপোর্ট বানাতে যায়। আর তারা বিদেশে গিয়ে এদেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায়, যাতে দেশ সাবলম্বি হয়। পরিবারের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে তাদের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এরাই যখন পাসপোর্ট অফিস, ইমিগ্রেশনে হয়রানি হয় তখন কষ্টের সীমা থাকেনা। এই অবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিৎ। বিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির জন্য বদনাম হয় সমগ্র জাতির। তবে আমার মতে বদলী বা পদত্যাগ করে এর সমাধান সম্ভব নয়। সমাধান হতে হবে সিস্টেমে। সিস্টেমের পরিবর্তণ আনতে হবে। মন মানসিকতা বদলাতে হবে। সবাইকে তাঁর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে বুঝতে হবে। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে।
এব্যপারে জানতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলামের মোবাইলে কল ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়েও কোন সাড়া না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এব্যপারে কথা বলতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালকের (উপ পরিচালকের চার্জপ্রাপ্ত) দপ্তরে গিয়ে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নাম্বারের কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এব্যপারে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. শওকত আলী বলেন, আগে কিছু অনিয়ম ছিল সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমি এখানে দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র ২ দিন (১ সেপ্টেম্বর থেকে) হলো। সবধরণের অনিয়ম বন্ধ করে আমরা স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের অধিক্ষেত্র: চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী, আকবরশাহ, ডবলমুড়িং, সদরঘাট, বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা, হালিশহর, খুলশী ও বায়োজিদ বোস্তামী থানা এবং চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড, মিরশ্বরাই, জোরারগঞ্জ, রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ ও ভুজপুর উপজেলা।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অধিক্ষেত্র: চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও, কর্ণফুলী, কোতোয়ালী, পাচলাইশ ও বাকলিয়া থানা এবং চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও চন্দনাইশ উপজেলা।
T.A.S / T.A.S

ভোলাহাটে বিএনপি'র ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ

আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদকজয়ী জিহাদের পাশে বিএনপি পরিবার’

ধামইরহাটে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপির উঠান বৈঠক

মোরেলগঞ্জে মহিলা দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

সলঙ্গায় নারী গ্রাম পুলিশের লাশ উদ্ধার

আত্রাইয়ে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

নবীনগরে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন

চৌগাছার কাকুড়িয়া গ্রামের মহাকালি মন্দির চৌত্রিশ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ আসনে মোহনকে সমর্থন দিলো দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপি

মেহেরপুরে জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে মৃত শ্রমিকদের মৃত ভাতা প্রদান

ভূরুঙ্গামারীতে নদীর বাঁধ নির্মাণের দাবীতে মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

নরসিংদীতে সম্মানজনক বেতন ও এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকদের বিক্ষোভ
