আলফাডাঙ্গায় বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ
বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বস্তায় আদা চাষ। স্বল্পপুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে উচ্চমূল্যের মসলা ফসল আদা চাষে বস্তা পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন কৃষক ও তরুণ উদ্যোক্তারা।
সম্প্রতি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা গ্রামে শুরু হয়েছে বস্তায় আদা চাষ। টিটা গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া, মালার মাসুদ পারভেজ, ফরিদপুরের বাহারুল ইসলাম মিলে দেড় একর জমির মাছের ঘেরের পাড়ে বস্তায় আদা চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে আদা চাষে এলাকায় রীতিমতো তাক লাগিযে দিয়েছেন তারা।
চাকরি সূত্রে দেশের উত্তরাঞ্চলে থাকাকালীন আদা চাষের প্রচলন দেখে উদ্বুদ্ধ হন কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ পারভেজ। তার সাথে বস্তায় আদা চাষের উদ্যোগে যোগ দেন জাহাঙ্গীর মিয়া ও বাহারুল ইসলাম। পরবর্তীতে আলফাডাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলামের সার্বিক সহযোগিতায় পুকুরপাড়ে সমন্বিতভাবে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন চাষিরা।
আদা চাষে বস্তা একটি লাভজনক পদ্ধতি। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি অব্যবহৃত পাড়ে আমরা বস্তায় আদার চারা রোপণ করেছেন তারা। খোলা জায়গা, পতিত জমি, ছাদ ও বাড়ির আঙিনায়ও বস্তায় আদা চাষ করা যায় বলে জানান আদাচাষি জাহাঙ্গীর মিয়া। উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক এবং ইউটিউব এবং অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে আদা চাষে আগ্রহী হন কৃষি উদ্যোক্তারা।
বস্তায় আদা চাষের প্রক্রিয়া ও পরিচর্যা সম্পর্কে আরেক উদ্যোক্তা মাসুদ পারভেজ জানান, আদা চাষের জন্য বস্তা, বেলে-দোঁআশ মাটি, ছত্রাকনাশক স্প্রে, পানি স্প্রে ও কীটনাশক দেয়া লাগে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে আদার চারা রোপণ করতে হয়। ১১ মাসের মাথায় আদা বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। পচন রোগের জন্য ১০-১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হয়। ভাল বীজ ছাড়া বস্তায় আদা চাষে লাভবান হওয়া যায় না। পরিচর্যার ক্ষেত্রে আদায় সাধারণত ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হয় এবং কাণ্ড পচা, গোড়া পচা এবং উপরে কিছু ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। কখনো কখনো কীটনাশকের প্রয়োজন হতে পারে।
কৃষি উদ্যোক্তা বাহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রজেক্ট ২০ হাজার বস্তা দিয়ে শুরু করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মৌসুম শেষদিকে হওয়ার কারণে প্রায় ১০ হাজার বস্তা দিয়ে শুরু করি। বস্তাপ্রতি সব মিলিয়ে ৭০-৮০ টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হলে বস্তাপ্রতি এক থেকে দেড় কেজি আদা পাব। ১০ হাজার বস্তায় আমরা ২০ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি।
আলফাডাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রথম আলফাডাঙ্গায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বস্তায় আদা চাষ করছেন চাষিরা। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছি৷ রংপুর থেকে উন্নত বীজ কুরিয়ারে এনে তাদের বিতরণ করেছি। এখনো ১০-১৫ দিন পরপর পর্যবেক্ষণ করছি।
আদা চাষে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে তিনি আরো জানান, বস্তার মাটি প্রস্তুত করার জন্য বেলে-দো্আঁশ মাটি, বালি, ছাই, রাসায়নিক সার যেমন টিএসপি, এমওপি, দস্তা, জিপসাম, বোরণ, এসওপি, ক্লোরোপারিফস অথবা ফিফ্রোনিল-3 জিআর দিয়ে মাটিকে মিশ্রণ করে ১০ দিন মাটিকে ফেলে রাখতে হয়। এরপর বস্তায় ভরতে হয়। বস্তায় আদা চাষে বাড়তি কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। অনাবাদি পতিত জমি বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জায়গায় চাষ করা যায়।
এমএসএম / জামান