দুর্নীতিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হাসাপাতালে অচলাবস্থা

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হাসপাতালে নানা অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির ফলে অচলাবস্থা বিরাজ করছে হাসপাতালগুলোতে। পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও) ডা. আইএস আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অভিযোগ। হাসপাতালের জন্য কেনা ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ যাবতীয় কেনাকাটায় মোটা অংকের কমিশন আদায়ের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের স্টাফদের ট্রেনিংয়ের টাকা আত্মসাৎ, বদলি বাণিজ্য ও বাসা বরাদ্দে রয়েছে অনেক অনিয়ম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, হাসপাতালের জন্য ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম না মেনে নিজস্ব লোক দিয়ে চড়ামূল্যে ক্রয় করে থাকেন। এসব কেনাকাটায় ফার্মাসিস্ট ও ডাক্তারের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে চাহিদা অনুযায়ী ক্রয় করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না। কমিশন আদায়ের মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদের (মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ) ওষুধ ক্রয় করেন, যা কিছুদিন পর মেয়াদ চলে গেলে তা ফেলে দিয়ে আবারো একই কায়দায় ওষুধ কিনে সরকারের টাকা অপচয় করেন। তাছাড়া যেসব কম দামি ওষুধ বেশি পরিমাণে দরকার, তা কেনেন কম। আবার যেসব ওষুধ লাগে কম অথচ দাম বেশি, এমনগুলো কেনেন বেশি করে। এতে তার কমিশনের পরিমাণ বেশি হয় বলেই এমনটি করে থাকেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহকারীকে ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও কমিশন বাণিজ্যের কারণে তা করা হয় না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (১১ সেপ্টেম্বর) স্বল্প মেয়াদের হাজারে হাজার ওষুধ পড়ে আছে স্টোরে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এসব ওষুধ রোগীকে দিয়েও শেষ করা সম্ভব হবে না। পরে ওই ওষুধগুলোকে ফেরত দিতে হবে অথবা নষ্ট করে ফেলতে হবে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
একই ভাবে তার একক আধিপত্য চলে যন্ত্রপাতি কেনাকাটার ক্ষেত্রেও। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চেয়ে অতিরিক্ত হিসাব দেখিয়ে খাবারের বিল করা হয়। সেখানে অতিরিক্ত বিলের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আবার চট্টগ্রামের ল্যাবে ডাক্তার না থাকলেও বছর বছর অসংখ্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক্স-রে ও ল্যাবে প্রায় ৭০ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে।
বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের ট্রেনিং করানোর জন্য প্রতি বছর বাজেট থাকলেও দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেনিং না করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগে ট্রেনিং করানো হলেও তারা যে সম্মানী পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী জানান, ট্রেনিংয়ে যাদের ২৫০০ টাকা দেয়ার কথা, তাদের ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
সূত্র জানায়, বাসা বরাদ্দের ক্ষেত্রে সিনিয়র প্রার্থী থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে জুনিয়রকে বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চাপ প্রয়োগ করে ফার্মাসিস্ট সাবিনার বাসা বরাদ্রদে আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি বাসা পাওয়ার অধিকারী হলেও অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে সিএমও তার পছন্দের লোককে দিয়েছেন। ফলে সরকার অর্থ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ঢাকা রেলওয়ে হাসপাতালের দন্ত বিভাগে পিওন দিয়ে সেবা প্রধান করেন, যেখানে ডাক্তার না থাকলে টেকনোলজিস্ট দিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো যেত, কিন্তু তিনি তা করছেন না। বিনা অপরাধে কোনো প্রকার অভিযোগ না থাকলেও নিজের খেয়া-লখুশিমতো বা তার অন্যায় কাজে সমর্থন না থাকলে শাস্তিমূলক বদলি করে থাকেন। এ তালিকায় আছেন সাইফুদ্দিন, নাসির, সাবিনা, ওবায়দুর রহমান, কামরুল। আর শূন্যপদে বদলির জন্য ইচ্ছুক ব্যক্তি টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হন। যেমন মো. মাজহারুল ইসলাম খান হীরা।
তার একনায়কতন্ত্রের ফলে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও করেন না। পিয়নের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকলেও বিচার না করে অব্যাহতি প্রদানের জন্য উল্টো অভিযোগকারীকে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগেও রেলের নিয়োগবিধি ভঙ্গ করে মো. ইয়াছিন ও বিবি মরিয়মসহ কয়েকজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তারমধ্যে ২০১৫ সালের ১৯ মে এস/খালাসি পদে যোগ দেয়া মো. ইয়াছিনসহ কয়েকজনকে অবৈধ পন্থায় জুনিয়র নার্স পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ওই তালিকায় ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট পদ থেকে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। একজন মিডওয়াইফ ও অন্যজন এস/খালাসি। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও এস/খালাসি থেকে পদোন্নতি দেবে বা ৫ বছরের কম অভিজ্ঞাতা আছে এমন ব্যক্তিদের পদোন্নতি দেবে এমন কোনো তথ্য ছিল না।
২০০৫ সালে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আয়া হিসেবে যোগদান করা বিবি আয়েশা পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে এমএলএসএস (পিয়ন) হন। এমএলএসএস থেকে অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে উচ্চমান সহকারী পদে পদোন্নতি পান কয়েক দিন যেতে না যেতেই। আবার উচ্চমান সহকারী পদে তার শিক্ষানবিস টাইম পূরণ হওয়ার আগেই (ফিডার পোস্ট) প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি পান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও) ডা. আইএস আব্দুল আহাদ সকল অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেন। তবে ডাক্তার ও লোকবলের অভাবে হাসপাতালের অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অনিয়মের কারণে নয়, লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে হাসপাতাল প্রায় অচল।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক ওষুধের মাঝে কিছু হয়তো স্বল্প মেয়াদ থাকতে পারে। তবে তা তারিখ উত্তীর্ণ হলে ফেরত দেয়া হয়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির কোনো কারণ নেই। ডাক্তার নেই তবু ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ল্যাবের সরঞ্জাম কেনা অপচয় কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসক না থাকলেও আমরা টেকনিশিয়ান দিয়ে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছি। বাসা বরাদ্দ ও পদোন্নতি নিয়মের মধ্যেই হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এমএসএম / জামান

দশ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় চোরাই পণ্যসহ বড়লেখার যুবক আটক

ফেসবুকে পরিচয়, প্রেমের টানে চীন থেকে বাংলাদেশে

কেশবপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা তবিবুর এক সন্তানের জননী নিপা দাসকে নিয়ে চম্পট

মহেশখালীতে রাতে অপহরণের পর সকালে মিলল যুবকের লাশ

আবার রোহিঙ্গা ঢলের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তানোরে চাষাবাদে গরুর বদলে বাড়ছে ঘোড়া দিয়ে মই চাষ

উল্লাপাড়ায় কষ্টি পাথরের মূর্তি পাচারকারী দুই জন গ্রেফতার

বরগুনায় তিন সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী-১ আসনে শরিফ উদ্দিনের বিরোধিতা না বিএনপির বিরোধিতা

টেকনাফে মুক্তিপণে ফিরেছে অপহৃত ব্যবসায়ী

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

হাসিনা বাংলাদেশকে গুম-খুন আর লুটের রাজ্যে পরিণত করেছিল: আব্দুল খালেক
