ঢাকা সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫

শান্তি-শৃঙ্খলায় মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ অপরিহার্য


রায়হান আহমেদ তপাদার  photo রায়হান আহমেদ তপাদার
প্রকাশিত: ২১-৯-২০২৪ দুপুর ১১:১১

পৃথিবীর সকল মানুষকেই বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। সেটা তার বিবেকবোধ বা আচরণগত কারণের জন্যই। মানুষের থাকে মনুষ্যত্ব, আর সে জন্যই মানুষের কাছ থেকে সমাজ সব সময় মানবিক মূল্যবোধ প্রত্যাশা করে। প্রত্যেক সমাজে তার সদস্যদের আচরণ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি থাকে। নীতিহীন সমাজ হয় উচ্ছৃঙ্খল, বিভ্রান্তিকর ও অনিশ্চিত। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হলে সমাজে নেমে আসে অধঃপতন। তখন মানুষের ভেতর ভর করে পশুত্ব। চারপাশে ঘটে যাওয়া এমন সব ঘটনা আমাদের অবলোকন করতে হয় যে মাঝে মাঝে নিজের কাছে প্রশ্ন জাগে- মানুষের বিবেকবোধ কি বিলুপ্ত হয়ে গেল? নীতিহীন সমাজ যে উচ্ছৃঙ্খল, বিভ্রান্তিকর, অনিশ্চিত ও অসহিষ্ণু হয়, তার ভুরিভুরি উদাহরণ আছে আমাদের চারপাশে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মধ্যে দেখা দেয় নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। যা অতি সম্প্রতি আমরা দেখতে পেলাম আমার নিজের দেশেই। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ছিল পাক হানাদার বাহিনীর শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া দেশটা শান্তি শৃঙ্খলার ছায়াতলে বসবাস করবে। কিন্ত বিধি বাম গত ৫২ বছরেও সেই আশা পূরণ হয়নি। মানুষ ভাবছিল শুরু হবে এক নবযুগ, নতুন অধ্যায় এবং নতুন প্রজন্মের যারা যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশকে নতুন ভাবে সাজাবে-এমন স্বপ্ন তাড়া করে বেড়াত মানুষকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, পাকিস্তানি শাসন ও শোষণ শেষ হয়, বাংলাদেশী শরণার্থীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশে ফিরে আসে কিন্তু মানুষের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র এমন হয়ে গিয়েছিল যে, মানুষ নিজের অধিকার রক্ষা করতে পারছে না, সংখ্যালঘুদের জমিজমা দখল ও লুটপাট হচ্ছিল এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে অভাব-অনটন। এ সময় মানুষের কল্পিত শান্তি-শৃঙ্খলা বাস্তবে রূপ পাওয়া দুরূহ বিষয় হয়ে গিয়েছিল। তার কল্পনা কল্পনাই থেকে যায়। এক কথায় বললে, চিন্তার জগতে বিপ্লব এবং পুরনো চিন্তা মুছে ফেলে নতুন চিন্তার আবির্ভাব। সামষ্টিকভাবে একটা জাতির মধ্যে চিন্তার বিপ্লব দেখা যায়, তা থেকেই শুরু হয় একটা জাতির পুনরুত্থান তথা পুনর্জন্ম। এ পুনর্জাগরণের শুরু হয় মানুষের মূল্যবোধ বিকাশের মধ্য দিয়ে, জানার মধ্য দিয়ে, উপলব্ধির মধ্য দিয়ে, বোধ জাগ্রত হওয়ার মধ্য দিয়ে। মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, বিশুদ্ধ চিন্তাধারার হাত ধরেই পুনর্জাগরণ সৃষ্টি হয়। চিন্তাচেতনা ও মানবিক মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ শুরু হলে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে বাহ্যিক সমাজ ব্যবস্থার ওপর। মানুষের ভেতরের পুনর্জাগরণই প্রতিফলিত হয় সমাজ ব্যবস্থায়, যার ফলে গড়ে ওঠে সুন্দর সামাজিক পরিবেশ। পুনর্জাগরণের একটা পূর্ব শর্ত আছে, সেটা হলো প্রথমে নিজের মধ্য থেকে পুনর্জন্ম শুরু হওয়া। মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ ফিরে এলে পুরো সমাজে সেই মূল্যবোধ ফিরে আসে। আর এই পুনর্জন্ম একটি জাতি ও রাষ্ট্রকে নতুন পথে ধাবিত করে। তার একটা দিক বাহ্যিক, অন্যটি অভ্যন্তরীণ। আত্মবিপ্লব হলেই মূলত বহির্বিপ্লব হওয়া সম্ভব। আত্মবিপ্লবের সৌন্দর্য বাইরে ফুলের মতো ফুটে ওঠে। বাংলাদেশে সরকারি খাতে দুর্নীতির অনেক চিত্র সাধারণ মানুষ দেখেছে। টাকা পাচার, ব্যাংক লুটপাট, প্রশ্নফাঁস ও ঘুসসহ নানা অপকর্ম পত্রিকার হেডলাইনে হয়েছে। যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আসীন তারা সবাই শিক্ষিত কিন্তু তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, সততা ও নিষ্ঠা কাজ করেনি।

যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,খারাপ দেখলে নিজের ভেতর থেকে বাধা দেয়া। যে মানুষ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থেকেও অপরাধে জড়িত ছিল তাদের মধ্যে কোনোভাবেই মানবিক মূল্যবোধ ছিল না ফলে অপকর্মে বাধা দেয়ার পরিবর্তে তারা নিজেরাই অপকর্ম পরিচালনা করত। আমাদের দেশের প্রকৃতিও লুটপাট হয় কিছু মানুষের সিন্ডিকেটে। ফলে বন উজাড়, নদী ভরাট, নির্বিচারে পাহাড় কাটা এসবের সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। আরো আছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।মানুষের মূল্যবোধ বিকশিত না হওয়ার সঙ্গে এসব বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বন, নদী ও পাহাড় নিয়ে আলাদা আলাদা আইন থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এসব প্রকৃতি লুটপাট হয়? তার গভীরে যেতে গেলে দেখা যাবে রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা এসব কাজে সহায়তা করছে। যদি একজন মানুষ ভেতর থেকে পরিশুদ্ধ হতো সে বাধা দিত এবং এসব রক্ষায় সোচ্চার হতো। মানবিক মূল্যবোধ, সততা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ ভেতর থেকে সত্য ও সৌন্দর্যের পূজারী হয়ে ওঠে।সুন্দরকে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে।আর সুন্দরের আদি উৎস প্রকৃতি।পুনর্জাগরণ হাওয়া কিছুটা হলেও লেগেছে উচ্চ শিক্ষালয়ে। শিক্ষার্থীদের রঙের তুলিতে শিল্প জায়গা করে নিচ্ছে ক্যাম্পাসের দেয়াল গুলোয়। শিক্ষার্থীরা এখন চায় ক্যাম্পাসগুলো রাজনীতি মুক্ত হয়ে মানবিক হয়ে উঠুক।সাম্যের ভিত্তিতে ক্যাম্পাস পরিচালিত হোক। মিছিলে যাওয়ার পরিবর্তে লাইব্রেরি ও পড়াররুমে নিজেদের চিন্তার উন্নয়ন করতে চায় শিক্ষার্থীরা। তারা চায়, শিল্প, দর্শন ও বিভিন্ন জাতির চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হতে এবং নতুন আবিষ্কার নিয়ে জানতে।শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতিকে যেমন ঘৃণা করেছে তেমনিভাবে তারা ঘৃণা করেছে শিক্ষক রাজনীতিকেও।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দূর হয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ হওয়ায় একজন শিক্ষক যতটুকু না শিক্ষক হয়ে ওঠেন তার চেয়ে বেশি হয়ে ওঠেন রাজনৈতিক ব্যক্তি। শিক্ষকরা লাল, নীল রঙে বিভক্ত হয়ে যে অরাজকতা চালাতেন শিক্ষার্থীরা তাও প্রত্যাহার করেছেন। শিক্ষার্থীরা চায়, ক্যাম্পাসগুলো হবে মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার জায়গা। রাজনীতি নয় বরং মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ক্যাম্পাস পরিচালিত হবে, এ স্বপ্ন তাদের দীর্ঘদিনের। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা, মানবিক মূল্যবোধ, চিন্তার বিশুদ্ধতা ও গবেষণার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হলে ক্যাম্পাসগুলো হয়ে উঠবে আলো ছড়ানোর জায়গা। এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসবে আদর্শ মানুষ। আর মানবিক মূল্যবোধের মানুষরাই হয়ে উঠবে একেকজন আলোকবর্তিকা। এমন পথ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দুইবার দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বৈরশাসককে বিদায় করতে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সর্বশেষ স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে ৫ আগস্ট। আবু সাঈদের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পাকাপোক্ত হয়। নয় দফা থেকে এক দফা দাবিতে সবাই অবস্থান নেয়। স্বৈরাচার পালায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো,দেশের ইতিহাসে বারবার স্বৈরাচারের জন্ম হয় কেন? কেন এত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জীবন যায়? এর ভিন্ন উত্তর হতে পারে। স্বৈরাচার পালানোর পর বিপ্লব চুরি হয়ে যায়, চুরি হয়ে যায় স্বপ্ন। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। যে শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এক হয়েছিল সে শিক্ষার্থীরা বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের দায়িত্ব নিয়েছে। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে। পুনর্জাগরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, স্বার্থ ও ভোগবাদী চিন্তাকে পরিহার, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা স্বার্থকেন্দ্রিক চিন্তা না করে দেশ রক্ষায় তারা কাজ করে যাচ্ছে। তারা গঠন করেছে ছোট ছোট দল যাতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর নিরাপদ থাকে, মন্দিরে যেন কেউ হামলা করতে না পারে, যেন কেউ চাঁদাবাজি করতে না পারে,যেন কেউ বিপ্লব চুরি করতে না পারে।শিক্ষার্থীরা ৬ আগস্ট পুরো বাংলাদেশে পরিষ্কার অভিযানে নেমে পড়ে। এখনো তারা প্রত্যেক দিন শহরগুলো পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করছে। গণভবন থেকে লুটপাট হওয়া অনেক জিনিসপত্র উদ্ধার করে তারা ফিরিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনীর কাছে। এ আন্দোলনের আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণভাবে লক্ষণীয়, সেটা হলো-আন্দোলনে বেশকিছু আইকনিক পেইন্টিং, গান ও কবিতা তৈরি হয়েছে। এগুলো সাংস্কৃতিকভাবে পথ দেখাতে পারে আগামীতে। কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণ, বিপ্লবকেন্দ্রিক বিভিন্ন র‍্যাপ গান এবং কবিদের কবিতা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ আন্দোলন মফস্বল পর্যন্ত ছুঁয়ে গেছে, ফলে গোটা বাংলাদেশই আত্মপরিচয়ের পাটাতন নতুনভাবে দাঁড় করাচ্ছে বলা যায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বোধোদয় থেকে আলো মেলতে পারে পুনর্জন্মের। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজের। এ শিক্ষার্থীরা চায় মতিউর ও বেনজীরের মতো কেউ দেশ লুটপাট না করুক, তারা চায় পাহাড় কেউ না কাটুক, নদী কেউ দখল না করুক, অবিচার না থাকুক। শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধের আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়, মানুষের মধ্যে বেড়ে যায় নানা অপরাধপ্রবণতা।দুঃখ জনক হলেও সত্য, যা বর্তমান সমাজে প্রকট। সামাজিক নিরাপত্তা আজ ভূলুণ্ঠিত। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, মানুষ কি এ থেকে মুক্তি পাবে না? মানুষ কি মানুষের প্রতি সহনশীল হবে না? এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া কঠিন হলেও এর প্রতিকারের উপায় বের করতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।আশা করি, মানুষের বিবেক জাগ্রত হবে। সমাজে ফিরে আসবে নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক 

এমএসএম / এমএসএম

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ

রাজনীতি আজ নিলামের হাট: কুষ্টিয়া-৪ এ হাইব্রিড দাপটের নির্মম প্রতিচ্ছবি

জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ও বাংলাদেশে তার প্রভাব

বাংলাদেশে ওয়াশিং প্ল্যান্টের বর্জ্য দ্বারা মিঠাপানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ

দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সমাধান: FBCCI-এর বিদ্যমান সেবার উৎকর্ষ সাধন

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা: অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য

সবুজ অর্থায়নের কৌশলগত বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুযোগ