হালদার ১৫৭ কোটি টাকার বাঁধ পানিতে, হুমকির মুখে মৎস্য প্রজনন ও জীববৈচিত্র্য

হালদা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পাড়ে সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত ১৫৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধে ভাঙনসহ হুমকির মুখে পড়ছে মৎস্য প্রজনন ও নদীর জীববৈচিত্র্য। নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাধ্যমে কৌশলে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। কিছু অসাধু চক্র এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তাদের এই এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে হবে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হালদা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ও হালদা রক্ষার দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে নাঙলমোড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দীন আলী প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, কিছু ব্যক্তি কাউকে তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করে। হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে বালু উত্তোলনের কারণে হালদার নানামুখী ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ইউনিয়নে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছিল। জায়গাগুলো হলো- নাঙ্গলমোড়া বাজার, চৈতারো ঘাটা ও চাটাল গাছতল (চাইলতা তল)। আমাদের দল বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবে না বা করা যাবে না। 

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দীন আলী আরো বলেন, যারা হালদার ক্ষতিসাধন করে বালুর ব্যবসা করছে, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যে বা যারাই জড়িত থাকুক, তাদের আইনের সর্বোচ্চ আওতায় আনা হবে। এটার জন্য জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে। বালু উত্তোলন করার ফলে হুমকির মুখে পড়ে গেছে নদীর পাড়ে সিসি ব্লক দ্বারা নির্মিত ১৫৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ। অবাধে বালু লুট চলতে থাকলে অচিরেই শত কোটি টাকার সেই বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ওই সব স্থান আবারো বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ার আশঙ্কা করছি। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট ধ্বংসত্মাক কর্মকাণ্ডের প্রভাবে হালদার পরিবেশ ও প্রতিবেশ চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

হালদা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে যত্রতত্র অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত ব্যাপকহারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে হালদা নদীর গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। বালু উত্তোলন হালদার জন্য আরো এক হুমকি। প্রতিদিন এই অঞ্চল থেকে প্রায় দেড় লাখ বর্গফুট বালু তোলা হয়। বালু তোলার কারণে নদীর তলদেশের মাটির গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শব্দদূষণ বাড়ছে, পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, সূর্যের আলো ঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না, বালুর সঙ্গে সঙ্গে জলজ প্রাণীও উঠে আসছে। এতে জলজ জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব তো পড়ছেই, সেই সঙ্গে বালু তোলার ড্রেজারের আঘাতে প্রায়ই মারা যাচ্ছে ডলফিন। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে ছোট-বড় যত নদী আছে, তার মধ্যে গুণে অনন্য নদীটির নাম হালদা। হালদা অপার এক সম্ভাবনার, ভালোবাসার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ খুলে দেয়া প্রকৃতির বিস্ময়ের নাম। হালদা পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী ও এশিয়ার প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র, যেখানে রুইজাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে এবং সেই নিষিক্ত ডিম সরাসরি সংগ্রহ করা হয়। এই নদী কেবল প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের জন্যই ঐতিহ্যের অধিকারী নয়, ইউনেস্কোর শর্ত অনুসারে এটি বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের যোগ্যতা রাখে।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক গাজী মোরশেদ উল আলম, হাটহাজরী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোস্তাফা আলম মাসুম, নাংগলমোড়া ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা হাফেজ মৌলনা ফরিদ, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন, সাবেক সভাপতি শফিউল আলম বাবু,  ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নুরুল আবছার আক্তার, বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আকতার হোসেন ভুট্টু, ছিপাতলী ইউনিয়ন বিএনপি সদস্য সচিব কামাল উদ্দিন কামাল, গুমানমর্দন  ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান, হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের সংগঠক ও গুমানমর্দন যুবদদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন।

আরো উপস্থিত ছিলেন- নাংগলমোড়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মোহাম্মদ সোলমান মেম্বার, মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম, মোহাম্মদ আবু তৈয়ব মিয়া, শাহাজান সিরাজ, নাংগলমোড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল আমিন, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব মোহাম্মদ নঈম উদ্দিন, রবিউল আলম বুলবুল, মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ মামুন মেম্বার, নজুরুল ইসলাম, নাংগলমোড়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোহাম্মদ জাপর, মোহাম্মদ সোলমান বাদশা ড্রাইভার, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বাবুল বাবুছি, সাবেক ছাত্রনেতা মাস্টার আজম, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল, আলী মোহাম্মদ বশির আল হেলাল, ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ দিদারসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।