আজও গণহত্যায় শহীদদের স্মরণ করছে খুলনার দীঘলিয়াবাসী

আজ ২৭ আগস্ট, খুলনার দীঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গণহত্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আজ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনা জেলা শাখা ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনী সারাদেশে যে নৃশংসতা এবং গণহত্যা সংঘটিত করেছিল এমন একটি গণকবরের সন্ধান ২০১০ সালে খুলনার দীঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকার বাহিনী ওই গ্রামের ৬০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে জবাই এবং গুলি করে হত্যা করে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা প্রতি বছর দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করে থাকেন।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন দীঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ডাক্তার শেখ মতিয়ার রহমানের ছেলে মুক্তযোদ্ধা শেখ আবদার রহমান তার সহযোগীদের নিয়ে দেয়াড়া গ্রামে সংগঠিত হচ্ছেন- এমন সংবাদের ভিত্তিতে পাক হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসর কয়েকশ রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার হোসেন এবং সদ্যপ্রয়াত আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবজাল হোসেনের পিতা ডাক্তার শেখ মতিয়ার রহমান, তার চাচাতো ভাই শেখ রহমত আলী পিরু, মো. আলী শেখ, ভাগ্নে শেখ ইসমাইল হোসেন ছোট খোকা, জামাই আব্দুল জলিল, তার ভাই আব্দুল বারেক, হোসেন সরদার, মো. আজিম হোসেন, সাত্তার শেখসহ ওই গ্রামের ৬১ জনকে ধরে নিয়ে যায়।
ধৃতদের কাছে এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ আবদার হোসেনের সন্ধান চায়। ধৃত ব্যক্তিরা তার সন্ধান দিতে অস্বীকৃতি জানালে ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে ওই গ্রামের পৃথক ৩টি স্থানে তাদের গুলি ও জবাই করে হত্যা করে ২২ জনের লাশ পৃথক ৩টি স্থানে গণকবর দেয় এবং বাকি লাশগুলো পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদে ভাসিয়ে দেয়। সৌভাগ্যক্রমে সৈয়দ আবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি একাধিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও প্রাণে বেঁচে যান।
২০১০ সালে সব গণকবরের সন্ধান আবিষ্কৃত হলে ওই বছরের ৬ জানুয়ারি প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহনেওয়াজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান বাচ্চু, গাজী আজগর আলী, শহীদ ডাক্তার শেখ মতিয়ার রহমানের ছেলে দীঘলিয়া সদর ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা সদ্যপ্রয়াত সভাপতি শেখ আবজাল হোসেন, সাংবাদিক শেখ মনিরুল ইসলাম, আ’লীগ নেতা মো. মকবুল হোসেনসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় উল্লিখিত গণকবর থেকে শহীদের দেহাবশেষ ৩টি স্থান থেকে সংগ্রহ করে একত্রিত করে দেয়াড়া মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহনেওয়াজের নিজস্ব গোডাউনের সামনে তার দান করা জমির ওপর ভৈরব নদের পার্শ্ববর্তী একটি স্থান চিহ্নিত করে গণকবরের স্থান নির্ধারণ করা হয় এবং দেহাবশেষগুলো সেখানে সমাহিত করা হয়। ওই গণকবরে ২২ জন শহীদ সমাহিত আছেন।
দেয়াড়া গণহত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে একমাত্র জীবিত মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বাশার বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যূজ্ব হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন। ৮৮ বছর বয়সী ৮ সন্তানের জনক সৈয়দ আবুল বাশার তার পিঠে রাজাকারদের ১৯টি ধারালো অস্ত্রের কোপ এবং বোগলের নিচে একটি গুলির ক্ষতচিহ্ন আজও বহন করে চলেছেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম নেই।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সৈয়দ আবুল বাশার অশ্রুসজল চোখে ৫০ বছর আগের সেই ভয়ংকর এবং নৃশংস ঘটনার কিছুটা বর্ননা দেন। বয়সের ভারে তিনি সব স্মৃতি স্মরণও করতে পারছিলেন না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ পর্যন্ত অনেক সাংবাদিক এসে আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। কিন্ত দুঃখের বিষয়, আমার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না কিংবা দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৯ বছর পরও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেলাম না।
তিনি আরো বলেন, আমার জীবনে আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। তবে সরকারের কাছে আমার দাবি, মৃত্যুর আগে আমি যেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতির খবর নিজ কানে শুনে মরতে পারি।
দীঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, সরকার সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং গণকবরগুলো চিহ্নিত করে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে আমরা গণকবরটি স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার হোসেন বাদী হয়ে ওই রাজাকারদের বিরুদ্ধে তৎকালীন দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। রাজনৈতিক কারণে মামলাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১০ সালে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের হাতে নিহত শহীদ মো. ইসমাইল হোসেন ছোট খোকার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে খুলনা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ২২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত ২২ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ২১ জন মারা গেছে।
সর্বশেষ রাজাকার মারা যান গোয়ারপাড়া গ্রামের শেখ শওকত হোসেন। জীবিতদের মধ্যে একজন দীঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতী গ্রামের মৃত গফুর শেখের ছেলে জাফর শেখ এখনও এলাকায় দাপটের সাথে চলাফেরা করছেন। দেয়াড়া গণহত্যার অনেক স্মৃতিচিহ্ন খুলনা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
এমএসএম / জামান

পঞ্চগড়ে ইন্টার্নশিপ বিদ্যালয়ে সহকারি দুই শিক্ষক অনুপস্থিত, একজন হাজতে, ব্যবস্থা নেয়নি কেউ

কোটালীপাড়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে মাদ্রাসা ছাত্রের আত্মহত্যা

টেকনাফের বাহারছড়ার গহীন পাহাড়ে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযান

লাকসামে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ কাউন্সিল’২৫ অনুষ্ঠিত

শেরপুরে বন্যহাতির তান্ডবে আমন খেত নষ্ট: দিশেহারা কৃষকেরা

মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি" শীর্ষক প্রতিবাদকে সামনে রেখে স্থানীয় গ্রামবাসী ও যুবসমাজের উদ্যোগে আলোচনা

বাউফলে স্প্রেইড হিউম্যানিটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন,স্বৈরাচারের বিচার দৃশ্যমানকরে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবেঃ এটি এম মাসুম

তানোরে মা ও ছেলেকে কুপিয়ে জখম

সীতাকুণ্ডে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল সাইকেল আরোহীর

ঝামায় ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

মুকসুদপুর প্রেসক্লাব ৩ সদস্যকে ত্রুেস্ট ও পরিচয়পত্র প্রদান
