ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পে অনিয়ম, দেয়ালে ফাঁটল


এসএম পিন্টু photo এসএম পিন্টু
প্রকাশিত: ২৪-৯-২০২৪ দুপুর ১০:৪৬

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে কমিশন বাণিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ফাঁকিবাজির ফলে ইতোমধ্যেই দেয়ালের কয়েক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। নানা অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে বিতর্কের কবলে পড়েছে ওয়াসার ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রকল্পটি। তবে কমিশন ও অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে এসব ফাটলকে ’স্কিন ক্র্যাক’ বলে দাবি করে ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গাইছেন প্রকল্প পরিচালক। আর প্রকল্পে ১০০ বছরের গ্যারান্টি আছে বলেও জানান তিনি। তবে কমিশন প্রথা না থাকলে নিম্নমানের কাজ হয় কিভাবে- এমন প্রশ্ন অনেকের।

প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে স্ট্রাকচার নির্মাণকাজ করছেন মিস্ত্রিরা। কিছু স্ট্রাকচারে বিএসআরএম আবার কোথাও জিপিএইচের রড ব্যবহার কো হচ্ছে। নির্মাণকাজে রুবি, কনফিডেন্স ও রয়েল ব্র্যান্ডের সিমেন্ট ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করছে রয়েল সিমেন্ট। যদিও রুবি সিমেন্ট সবচেয়ে ভালো বলে দাবি করছেন একাধিক প্রকৌশলী। তবে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। আরো একটু সামনে এগিয়ে দেখা গেল বিশালাকার দেয়াল, যেখানে আস্তর করা হয়েছে। আর সেই আস্তরের একাধিক স্থানে নিচ থেকে উপরের দিকে লম্বা ফাটল। কোথাও সরু, কোথাও একটু বড়।

মিস্ত্রিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্মাণকাজ তদারকিতে গাফিলতি, নিয়মিত পানি দেয়া না হলে ফাটল দেখা দিতে পারে। আবার বালু ও সিমেন্টের পরিমাণ কম-বেশি হলে তার মান খারাপ হয় অথবা মিশ্রণ ভালো না হলেও দেয়ালে ফাটল দেখা দিতে পারে। তবে এখানে কী ধরনের ত্রুটি হয়েছে, তা বলতে রাজি নন কেউ।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বিগত ১০ বছরে চট্টগ্রাম ওয়সা যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে তার বেশিরভাগই লুটপাটের জন্য। স্যুয়ারেজ প্রকল্পটিও তার একটি। একাধিকবার বাজেট রিভাইস করা হয়েছে, বাজারদরের চেয়ে কয়েকগুণ ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। শুধু বিদেশি কোম্পানির অজুহাতে ব্যয় বাড়িয়েছে কিন্তু কাজের মান বাড়েনি। মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যের ফলে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে বলে মনে করছি। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপসারণ করে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে সকল অনিয়ম ধরা পড়বে। এছাড়া প্রকল্পের বহু অর্থ সাশ্রয় হবে। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এখনই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

জানা যায়, নগরবাসীর আধুনিক জীবনধারা বজায় রাখার লক্ষ্যে স্যানিটেশন ফ্যাসিলিটিজ নির্মাণ করার মাধ্যমে মহানগরীর জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- দৈনিক ১০ কোটি লিটার ক্ষমতার ১টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার ক্ষমতার ১টি ফিকেল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ ও বিভিন্ন ব্যাসের (২১০০ মি.মি হতে ১১৫ মি.মি) ট্রাঙ্ক মেইন ও কালেকশন পয়ঃপাইপলাইন স্থাপন ২০০ কিলোমিটার এবং ফ্যাকল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট যন্ত্রপাতি ক্রয়। আর এসব সম্পন্ন করার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং বাকি টাকা দিচ্ছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ লাখ মানুষ পয়ঃসুবিধা ভোগ করবেন। এর জন্য মাথাপিছু খরচ পড়ছে ১৯ হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজ ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। মালয়েশিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরিনকো এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। শোধনাগার নির্মাণে একটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান আর পাইপলাইন নির্মাণকাজ করবে দুইটি চীনা প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প ব্যয় এক হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা অনুমোদন পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে প্রকল্প ব্যয় আরো প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর জন্য ডিপিপি তৈরি করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাব পাঠানোর এক বছরেও অনুমোদন মেলেনি। 

স্যুয়ারেজ প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করে পিডি প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, এখানে কাজে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি সামগ্রী চুয়েটে পরীক্ষা করে মান যাচাই করে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। ফাটলের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ফাঁটল দিয়ে পানি বের হবে না। আর এটাকে স্ক্রিন ক্র্যাক বলে। সকল কাজেই এমন কিছু ফাটা থাকে। আর এসব ফাটল প্রকল্প বুঝিয়ে দেয়ার আগে ওরা ঠিক করে দেবে। এছাড়াও নির্মাণে কোনো ত্রুটি থাকলে প্রকল্প বুঝিয়ে দেয়ার আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব ঠিক করে দেবে।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ডিপিপি তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে বাস্তবায়নের মেয়াদ শুরু হয়। তখনকার বাজারদর বিবেচনা করে নির্মাণসামগ্রীর দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন সময়ের ব্যবধানে প্রকল্পের নির্মাণসামগ্রী ও ডলারের দাম বেড়েছে। প্রকল্পের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাই বর্তমান বাজারমূল্য বিবেচনা করে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় আরো এক হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃষ্টির পানি ছাড়াও দুই ধরনের তরল বর্জ্য নিঃসৃত হয়। দুই ধরনের তরল বর্জ্য হচ্ছে বাসাবাড়ির রান্নাঘর থেকে নিঃসৃত পানি ও টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে নিঃসৃত পানি। বাসাবাড়ি থেকে নিঃসৃত দুই ধরনের তরল বর্জ্য নালার মাধ্যমে খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদী এবং বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার ওয়েস্ট ওয়াটার নিঃসৃত হচ্ছে, যা আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন ৫২৫ মিলিয়ন লিটারে দাঁড়াবে। এছাড়া নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্লাজ সেপটিক ট্যাংক জমা হচ্ছে, যা আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন ৭১৫ ঘনমিটার হবে। ফলে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি দূষণের কারণে ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে।

১৯৬৩ সালে ওয়াসা সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়োঃনিষ্কাশনের কাজ শুরু করলেও এখনো পানি সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে শহরের ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে পাইপ স্যুয়ারেজ এবং ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ইন্টারসেপ্টর ও পাম্পের আওতায় এনে মোট ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে উন্নত অন-সাইট স্যনিটেশনের আওতায় এনে শহরকে পয়ঃজনিত দূষণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করা যাবে। এর জন্য ৬টি ক্যাচমেন্টে সর্বমোট বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা হয়েছে ২৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

এরমধ্যে হালিশহর ৩ হাজার ৮০৮, কালুরঘাট ৪ হাজার ১৮৪, ফতেয়াবাদ ১ হাজার ৭শ’, পূর্ব বাকলিয়া ৫ হাজার ৩৩৮, উত্তর কাট্টলী ৩ হাজার ৪৮৫ এবং পতেঙ্গা ক্যাচমেন্টের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে হালিশহর ক্যাচমেন্ট-১-এর বাস্তবায়নের জন্য ১৬৩ একর জায়গার ওপর ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি ক্যাচমেন্ট এরিয়া বাস্তবায়নে জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স ও জাইকা স্যুয়ারেজ প্রকল্পের বাস্তবায়নে অর্থায়ন করবে। ক্যাচমেন্ট এরিয়া-১ ছাড়া বাকিগুলোর ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে।

এমএসএম / জামান

মহেশখালীতে রাতে অপহরণের পর সকালে মিলল যুবকের লাশ

আবার রোহিঙ্গা ঢলের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তানোরে চাষাবাদে গরুর বদলে বাড়ছে ঘোড়া দিয়ে মই চাষ

উল্লাপাড়ায় কষ্টি পাথরের মূর্তি পাচারকারী দুই জন গ্রেফতার

বরগুনায় তিন সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী-১ আসনে শরিফ উদ্দিনের বিরোধিতা না বিএনপির বিরোধিতা

টেকনাফে মুক্তিপণে ফিরেছে অপহৃত ব্যবসায়ী

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

হাসিনা বাংলাদেশকে গুম-খুন আর লুটের রাজ্যে পরিণত করেছিল: আব্দুল খালেক

দাউদকান্দির ধারিবন গ্রামে একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ, পানিবন্দি কয়েকটি পরিবার

ভূরুঙ্গামারীতে ব্র্যাকের স্বপ্ন সারথি দলের জীবন দক্ষতা বিষয়ক ২৫তম সেশন অনুষ্ঠিত

রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার ডা:কে এম বাবর সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রীর অভিযোগ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পানিবন্দি ২ হাজার পরিবারকে যুবদলের ত্রাণ সহায়তা