শান্তি ফিরতে শুরু করেছে খাগড়াছড়িতে

হঠাৎ অশান্ত পাহাড়ে ফিরতে শুরু করেছে শান্তি। এখনো অদৃশ্য অজানা আতঙ্ক কাটেনি পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে। খাগড়াছড়িতে শান্তি ফেরাতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক, ঘটনাস্থল পরির্দশন, তদন্তে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিকভাবে শান্তি-সম্প্রীতি সমাবেশ, নিরাপত্তা জোরদারসহ সম্মিলিত চেষ্টায় শান্তি ফিরতে শুরু করেছে পার্বত্যাঞ্চলে। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে ছড়িয়ে পড়া দ্বন্দ্বের জেরে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শঙ্কা কাটছে না। 

সাধারন মানুষ ও বসবাসরতরা পার্বত্যাঞ্চলের উপজেলাগুলোতেও শঙ্কার উত্তাপ ছড়িয়েছে। ফলে বসতি স্থাপনকারীরা ছেড়েছে ঘরবাড়ি। নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে নিজ বসতঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া বসবাসকারীরা এবার তাদের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। 

এদিকে, এ ঘটনাকে ভুল বোঝাবুঝি ও গুজব প্রতিরোধ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে খাগড়াছড়িতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ শনিবার (আগামী ২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে আই শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, খাগড়াছড়িতে এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। পূর্বের শান্তিপূর্ণ সেই সুন্দর পরিবেশ আবারো ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাসান আরিফ বলেন, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তা যেন আগামীতে আর না হয়। সেজন্য সচেষ্ট থাকা এবং পারস্পরিক মেলামেশাটা আরো যাতে বেশি হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

একই সময় তিনি বর্তমান স্যোসাল মিডিয়ার উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বেশি মন্তব্য করে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে ওই গুজব প্রতিরোধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের কাউন্টার সক্ষমতা ব্যবহার করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে সাংবাদিকদের অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করেন। 

ওই মতবিনিময় সভায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চট্টগ্রাম ২৪ ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মাইনুর রহমান, পুলিশের আইজি মো. ময়নুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান, খাগড়াছড়ির মং সার্কেল চিফ সাচিং প্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, খাগড়াছড়িসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন। 

খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের রেশ ধরে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা,ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রতিনিধি দল মতবিনিময়ে অংশ নেন। সংগঠিত হত্যাকান্ডে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। অন্যদিকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শান্তি ফেরাতে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারাও সহবস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা ছিলো লক্ষ নিও। 

অন্যদিকে, পাহাড়ের সংঘাতের জের ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আন্দোলন করেছেন জুম্ম পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। ‘সিএইচটি ব্লকেড’-এর সমর্থন দিয়ে ইউপিডিএফের টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের তৃতীয় দিনেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুজ্জামান বলেন, পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণে প্রদানে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সকলে কাজ করছে। এছাড়াও সহাবস্থান বজায় রাখতে শান্তি সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, পুলিশ প্রশাসন পাড়ায় পাড়ায় শান্তিশৃঙ্খলা অক্ষুণ্ন রাখতে শান্তি-সম্প্রীতি সমাবেশ করছে। এছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে শিগগিরই স্থানীয়দের মাঝে আস্থা ফিরবে বলে তিনি জানান। 

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জেরে অশান্ত হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিসহ পার্বত্য জনপদ।