ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

আত্মহত্যা নিরসনে মানসিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ


তানহা আহমেদ তাহি  photo তানহা আহমেদ তাহি
প্রকাশিত: ২৯-৮-২০২১ দুপুর ১:১৯
আত্মহত্যা একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা। হতাশা, বিষন্নতা, পারিবারিক জটিলতা, বেকারত্ব, যৌন হয়রানি প্রভৃতি কারণ যখন চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে মানুষ তখন আত্মহত্যার মতো বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এই করোনা মহামারীতে আত্মহত্যার হার ঊর্ধ্বগামী। 
করোনাকালে গেল এক বছরে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২০০ জন।
 
আত্মহত্যার এই আকস্মিক বৃদ্ধি পাওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানসিক চিকিৎসার প্রতি অনীহা। শারীরিক অসুস্থতায় মানুষ যেভাবে যত্নশীল হয়, মানসিক অসুস্থতায় মানুষ ক্ষেত্রে সেই রকম যত্নশীল না। বরং মানসিক সমস্যা কে মানুষ যতটা পারে এড়িয়ে চলে৷ এর অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের সমাজের ভুল ধারণা। মানসিক রোগ কে পাগল বলে অবজ্ঞা করা, কটূক্তি করা, বাকা চোখে দেখার কারণে এই সমস্যার কথা অনেকেই প্রকাশ করতে চায় না পাশাপাশি চিকিৎসা নিতেও ভয় পায়৷ এছাড়াও সঠিক ভাবে মানসিক সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারাও আত্মহত্যার দিকে একজন মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়৷ তাই আজ আমরা জানবো কারা সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা প্রবণ এবং কিছু মানসিক ডিসওর্ডার যা আত্মহত্যা ঘটাতে সাহায্য করে।
 
সাধারণত দুই ভাবে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে।
প্রথমত ডিসিসিভ সুইসাইড অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি যখন আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন তারা আত্মহত্যা করার আগে নানা ভাবে সবাইকে ইঙ্গিত দিয়ে থাকে ফেসবুক স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে, সুইসাইড নোট লিখে,কবিতা, গানের ইত্যাদির মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে এদের এটেনশন ছিকার মনে হলেও এরা আত্মহত্যার সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। দ্বিতীয়ত, ইমপালসিভ সুইসাইড যা চিহ্নিত করা যায়না কারণ এই ধরনের আত্মহত্যারী ব্যাক্তিরা সাধারণত আবেগের বশিভূত হয়ে কোন রকম ভাবনা চিন্তা ছাড়াই নিজেকে শেষ করে ফেলে। 
কিছু মানসিক ডিসওর্ডার -
১. সিজোফ্রেনিয়া: এটি একটি জটিল মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা এমন কিছু শব্দ শুনতে পারে যা অন্য কেউ শুনতে পারেনা,তারা ভাবে তাদের চামড়ার নিচ দিয়ে কিছু হেঁটে যাচ্ছে, অচেনা কেউ তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে, অসংলগ্ন কথাবার্তা, ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা (ডিল্যুশন) ইত্যাদি অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়। একটা পর্যায়ে এসে আক্রান্ত রোগীরা বাস্তব এবং হ্যালুসিনেশনের মধ্যে নিজেকে গুলিয়ে ফেলে আত্মহত্যা করে বসে। স্বাভাবিক ভাবে আমাদের দেশে একে ভুতপ্রেত এর কাজ বলে অন্ধবিশ্বাসের আশ্রয় নেয় যার ফল ভালো বদলে খারাপ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ।
 
২. পোস্টট্রোম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার:পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসর্ডার (পিটিএসডি) একটি মোটামুটি সাধারণ মানসিক অবস্থা, সেইসমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায় যাঁরা নিজের জীবনে গভীর দুশ্চিন্তাজনক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন। অর্থাৎ কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, বা কেউ 
হিংসামূলক অপরাধ এবং দুর্ব্যবহার, সামরিক যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গুরুত্বর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তাদের এই ডিসওর্ডারটি হয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে এদের শারীরিক চিকিৎসা করিয়ে ঠিক করা হলেও মানসিক কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়না। পরবর্তীতে তারা শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
 
৩. পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন: প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা সবচেয়ে অবহেলিত, অনুচ্চারিত একটি মানসিক সমস্যা। প্রসবের পর একজন মায়ের হরমোনের পরিবর্তন আর শারীরিক ধকলের কারণে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ থাকে। পরবর্তীতে এই মন খারাপ আস্তে আস্তে ডিপ্রেশনে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। আর সেটা আরও প্রখর হয় সন্তান জন্মদানের পর। কোনো কারণ ছাড়াই এসব মায়েরা কাঁদবেন, হাসবেন, ঝগড়া করবেন, জিদ করবেন, বিষণ্ন হবেন। এটা সাত থেকে দশদিন পর ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যদি কারও বেলায় ঠিক না হয় তখনই সেটা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা পোস্টপার্টাম সাইকোসিসের দিকে যায়। প্রথম বারের মতো যারা মা হন-তাদের মধ্যে শতকরা ৮৫ শতাংশ মা-ই ‘পোস্টপার্টাম ব্লুতে’তে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থায় এবং ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ নারী সন্তানের জন্মের পর বিষণ্নতায় ভোগেন। কিন্তু অসচেতনতা, কুসংস্কার কারণে উপযুক্ত চিকিৎসা নেয়া হয়না। উল্টো তাদেরকে দোষারোপ করা হয় । একটা পর্যায়ে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভোগা রোগীদের অবস্থা এতোটাই খারাপ পর্যায় চলে যায় যে তারা নিজেদের যেমন শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয় পাশাপাশি তাদের সন্তানদেরকেও মেরে ফেলতে চায়।
 
৪. অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার: অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) হল একপ্রকার অসুস্থতা যা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। এটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের মধ্যেই দেখা যেতে পারে। এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ যুক্তিহীন অবসেশন অর্থাৎ অনর্থক চিন্তার পুনরাবৃত্তি এবং কম্পালসনের অর্থাৎ সেই চিন্তা অনুযায়ী কাজ করার অদম্য ইচ্ছা এক চক্রের মধ্যে আটকে পড়েন। এছাড়াও এর ফলে মানসিক চিত্র, বাসনা ও অবাঞ্ছিত চিন্তার সৃষ্টি হয় যা মানুষটির মানসিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।
 
উপরিউক্ত ডিসঅর্ডার ছাড়াও আরো অনেক মানসিক সমস্যা রয়েছে যা চিহ্নিত না করার কারণে একজন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এই সকল মানসিক সমস্যা মানুষের যে কোন বয়সেই হতে পারে। কিন্তু ভ্রান্ত ধারণার কারণে অনেকেই সঠিক চিকিৎসা নেয়া থেকে বিরত থাকে। তাই আমাদের উচিত শারীরিক অসুস্থতার মতো মানসিক অসুস্থতাকেও স্বাভাবিক ভাবে দেখা। পাশাপাশি একজন মানুষ যখন হতাশার সময় অতিবাহিত করবে তার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের উচিৎ তাকে সময় দেয়া পাশাপাশি ভালো কাউন্সেলিং, সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেয়া। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকে বিধায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলর নিয়গ করতে হবে। এছাড়া সকল বয়সের, সকল পেশার মানুষদেরো মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে উৎসাহ দিতে হবে। বিফ্রেন্ড, অনলাইন ভিত্তিক সেবার মান বাড়াতে হবে। পরিশেষে বলা যায় সঠিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই আত্মহত্যার মতো অপরাধ হ্রাস করা সম্ভব হবে।
 
লেখা: তানহা আহমেদ তাহি 
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া