ঢাকা শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫

শারদীয় দুর্গাপূজা : অশুভশক্তি দমনে শুভ শক্তির আরাধনা


মানিক লাল ঘোষ photo মানিক লাল ঘোষ
প্রকাশিত: ১২-১০-২০২৪ দুপুর ১:৫১

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে অশুভ শক্তির বিরূদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ে মা দুর্গার মর্ত্যে আবির্ভাব।

ইতিহাসের  সাক্ষ্য  অনুযায়ী বছরে দুবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শরতে শারদীয় দুর্গাপূজা আর বসন্তে হয় বাসন্তী পুূজা। মেধামুনির আশ্রমে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কর্তৃক প্রথম  প্রতীমার পূজাই বাসন্তী পূজা নামে অবিহিত। আর শ্রী রামচন্দ্র রাবন বধ করে সীতা উদ্ধারের জন্য দক্ষিণায়নে শরৎকালে ১শত ৮টি  নীল পদ্মে পূজিত হন দেবী্। রামচন্দ্র  দেবতাদের  শয়নকালে দেবীকে   নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে পূজা করেছিলেন বলে এটি অকালবোধন নামে পরিচিত। শরৎকালে রামচন্দ্রের এই পুজাই  আমাদের শারদ উৎসবের স্বীকৃতি পায়।

দুর্গা প্রতিমার কল্পনা কতদিনের  তা সঠিকভাবে  জানা না গেলেও  প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্নভাবে  মায়ের প্রতিমা কল্পনা করে শক্তি পূজার প্রচলন  ছিল এদেশে। সিন্ধু উপত্যকায় আবিষ্কৃত প্রাগঐতিহাসিক  যুগের অসংখ্য পোড়ামাটির স্ত্রী মূর্তিগুলো মাতৃমূর্তির  অতীতকালের নিদর্শন।

বাঙালি হিন্দুদের মাঝে কবে এই পূজার প্রচলন তার তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে মোঘল সম্রাট  আকবরের সুবেদার রাজা কংস নারায়ণ  রায় বাংলার দেওয়ান ছিলেন। তিনি পন্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শে  মহাযজ্ঞ না করে  দুর্গাপূজা করেছিলেন। ব্যক্তিগত পূজায় যখন সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার  সীমিত হয়ে পড়ে তখনই প্রয়োজন হয়ে পড়ে সার্বজনীন পূজা আয়োজনের। ১৭৯০ সালে হুগলী জেলায় ১২  জন বন্ধুর প্রচেষ্টায় প্রথম বারোয়ারি পূজার আয়োজন । তারপর থেকেই এই পূজা পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে।

কালের পরিক্রমায় আবহমান বাংলায়  সকল ধর্মের মানুষ সমঅধিকার নিয়ে এই বাংলায় বাস করায় শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু হিন্দুদের একার উৎসবে নয়, পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে।  সকল ধর্মের এমন নিরাপদ আবাস ভূমি পৃথিবীর  আর কোথায়  অছে? প্রতিটি পূজা মন্ডপে দর্শনার্থীদের যে ভীড়, কে যে কোন্ ধর্মের আর কেইবা কোন বর্ণের তা বোঝাই কষ্টকর। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেনো মিলেমিশে একাকার এই শারদীয় উৎসবে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাব পড়ে  গত  ২০২০   ও ২১ সালে   দুই  বছর  আমাদের সকল উ’ৎসবে । বাঙালির জীবনে এই  দুবছর  ছিলোনা বাংলা নববর্ষ ১ লা  বৈশাখের বনার্ড্য  আয়োজন। ঈদুল ফিতর  ও ঈদুল  আজহায়  ছিলোনা না কোনো প্রাণের ছোঁয়া। শারদীয় দুর্গাপূজায় এই   দুই   বছর ছিল  শুধুই পূজার আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবের ঘাটতি ছিল  মনে ও প্রাণে।
নিজের জীবন, পরিবারের সদস্যদের জীবন, সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষের  নিরাপত্তার কথা ভেবে  করোনার প্রথমবার  স্বাস্থ্য বিধি মেনে সাত্ত্বিক পূজায়   সীমাবদ্ধ রেখে   শেষ হয়  শারদীয় দুর্গাপূজার  আনুষ্ঠানিকতা। এর পরেট  বছর করোনা সংক্রমন  কম থাকায়   উৎসব তার স্বাভাবিকতা ফিরে না পেলেও  দীর্ঘ  ১ বছর  বন্দী   জীবন  থেকে  বেরিয়ে  এসে পুজার আনন্দ  ভালোই কেটেছে  শিশু কিশোরদের।  আসলে   যে যাই বলুক  না কেন কোন  উৎসবেই আগের মত বড়দের মনটানে না। নানাবিধ  টেনশন ও ভাবনা ঘিরে রাখে তাদের। 
 মহান স্রষ্টাি কর্তার  অশেষ কৃপায়  করোনা সংক্রমণ একেবারে না  কমলেও  ২১ সালে ভয়কে জয় করেছে বাঙালি।   অনেটা আগের অবস্থায় ফিরেছিল  উৎসবের  আমেজ। বর্ণিল অলোকসজ্জার ঝলকানি   পুজা মন্ডপের চারদিকে। করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে কমে ছিল পূজা মন্ডপের সাংখ্য।   বাংলাদেশ  পূজা উদযাপন পরিষদের  তথ্য  অনুযায়ী ২০১৯ সালে সারাদেশে   মন্ডপের সংখ্যা  ছিলো  ৩১ হাজার  ৩৯৮টি । ২০২০ সালে  করেনায় তা কমে দাঁড়িয়েছিল ৩০ হাজার ২২৩টিতে। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাড়ায়  ৩২ হাজার ১১৮ টি।  ২০২২ সালে পূজা মন্ডপের সংখ্যা  বেড়েছে আরে ৫৯ টি। সারা দেশে  ৩২ হাজার ১৬৮ টি মন্ডপে  পূজা  অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর  পূজা মন্ডপের সংখ্যা  আরো বেড়ে দাঁড়ায়  ৩২ হাজার ৪০৮ টি। কিন্তু  এ বছর  রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর  হঠাৎ  করে একটি  অশুভচক্র  মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন  পরিষদের  তথ্য মতে সারা বাংলাদেশে ১৮ টি মন্দিরে  প্রতিমা ভাংচুরের খবর পাওয়া  গেছে।   এসব ঘটনায় ১৫ টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে  ১২ জনকে।বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন  স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর   নির্যাতনের  অভিযোগ ওঠেছে।   সরকার পরিবর্তন  পরবর্তী সংখ্যালঘু   নির্যাতনের  এই চিত্র  বাংলাদেশে নতুন  কিছু নয়। এক অজানা  আশংকা ও বন্যার কারনে  গত বারের  চেয়ে এবার পূজা মন্ডপের সংখ্যা  কমেছে ৯৪৭টি। সারা বাংলাদেশে এবছর ৩১ হাজার ৪৬১টি  পূজান্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  ৯ অক্টোবর মহা ষষ্ঠী পূজার মধ্য  দিয়ে  শুরু  হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর বিজয়াদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ  হবে ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দূর্গোৎসবের।  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মন্ডপে মন্ডপে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালনে এবছর সেনাবাহিনীর ভুমিকা  ছিল প্রশংসনীয়।
 
পূজার উৎসবে  ঘাটতি রোধে  দল মত জাতিভেদের  উর্ধে  থেকো সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে  সহযোগিতা, সহানুভূতি, সৌহার্দ্য ও সৌজন্যবোধ প্রকাশ ও ছিল  চোখে পড়ার মতো। এরই নাম বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বন্ধন অটুট থাক  অনন্তকাল । অশুভ শক্তির বিরূদ্ধে শুভ শক্তির সকল বিবেকবান মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাক  যুগ থেকে  যুগান্তরে-- শারদীয় দুর্গোৎসবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।

মানিক লাল ঘোষ:  ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর  সাবেক সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির  তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

এমএসএম / এমএসএম

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ

রাজনীতি আজ নিলামের হাট: কুষ্টিয়া-৪ এ হাইব্রিড দাপটের নির্মম প্রতিচ্ছবি

জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ও বাংলাদেশে তার প্রভাব

বাংলাদেশে ওয়াশিং প্ল্যান্টের বর্জ্য দ্বারা মিঠাপানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ

দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সমাধান: FBCCI-এর বিদ্যমান সেবার উৎকর্ষ সাধন

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা: অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য

সবুজ অর্থায়নের কৌশলগত বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুযোগ