নরসিংদীতে বারবার হাতবদলেই সবজির দাম কেজিতে বাড়ে ২০ থেকে ৬০ টাকা
সবজি উৎপাদনের অন্যতম জেলা হিসেবে পরিচিত নরসিংদী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার সবজি যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আসছে শীত মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শীতের আগাম সবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, লালশাক, পটল, কাকরোল, বরবটি ইত্যাদি সবজি স্থানীয় বাজারে আসা শুরু করেছে। মাঠের কৃষকরা অভিযোগ করে বলছেন, মাঠ থেকে তুলনামূলক কম দামে কিনে বাজারের বিক্রেতা ও পাইকাররা বেশি দামে বিক্রি করছেন এসব সবজি।
গত কয়েক দিন নরসিংদী পৌর শহরের ভেলানগর, বটতলা, শিক্ষাচত্বর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাউ বড় আকারের গড়ে ১০০ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়া মাঝারি আকারের প্রতি পিস গড়ে ১৫০, ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০, ঢেঁড়স ১০০, লালশাক ১০০, পটল ৮০, কাকরোল ১০০, কাঁচা পেঁপে ৪০, বরবটি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নরসিংদীর বাইরে থেকে বাজারে আসা কাঁচকলা, ফুলকপি ও করলাসহ অন্যান্য সবজি বিক্রি হচ্ছে মান ও বাজারভেদে ভিন্ন দামে। গত ১৫ দিনে সব ধরনের সবজিতে দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত- বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
শিক্ষাচত্বর বাজারে আসা ক্রেতা শিক্ষক সাথী বণিক বলেন, লাউ কিনেছি পিস ১০০ টাকা, যেটির বাজারমূল্য কোনোভাবেই ৬০ টাকার বেশি প্রত্যাশা করছি না। একই রকম দাম মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দলসহ অন্য সবজিরও।
বটতলা বাজারে আসা ক্রেতা শোভন ও দুর্জয় গণেশ বলেন, নরসিংদী সবজি উৎপাদনে বরাবরই বিখ্যাত। কিন্তু মাঠ থেকে কম দামে আসা সবজি বাজারে এসেই হুট করে দাম বেড়ে যায়। ১০০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজিই মিলছে না। বরবটি-কাকরোলের কেজি ১০০ টাকার বেশি দিয়ে কিনেছি।
নরসিংদীর রায়পুরা ও শিবপুর এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাজারে বিক্রি হওয়া ১০০ টাকার লাউ মাঠে পাইকারের কাছে কৃষক বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ৭০ টাকায়, ১৬০ টাকা পিস মিষ্টি কুমড়া মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়, বাজারের ৮০ টাকা কেজির ধুন্দল মাঠে কেনা-বেচা হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, ১০০ টাকা কেজির ঢেঁড়স মাঠপর্যায়ে দাম সর্বোচ্চ ৭০ টাকা, ১০০ টাকা কেজির লালশাকের দাম মাঠে গড়ে ৫০ টাকা, ৮০ টাকা কেজির পটলের দাম সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা, ১০০ টাকা কেজির কাকরোল মাঠে কেনা-বেচা হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। এছাড়া বাজারে বিক্রি হওয়া ৫০ টাকা কেজির কাঁচা পেঁপের মাঠে দাম সর্বোচ্চ ২৫-৩০ টাকা এবং ১৬০ টাকা কেজির বরবটি মাঠ থেকে পাইকার ও আড়তদাররা কিনছেন সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজিতে।
ক্ষেত ও বাজারের মধ্যে সবজির দামের পার্থক্য ২০ থেকে শুরু করে কেজিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত। দামের কেন এত পার্থক্য- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলার খুচরা ও পাইকারি সবজি বিক্রেতারা বলছেন, দুই থেকে তিনবার হাতবদল হয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছায় সবজি। এ কারণে বাড়ছে দাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা সবজি বিক্রেতা বলেন, ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তিনবার হাতবদল হয় সবজির। মাঠ থেকে ফড়িয়ারা সবজি সংগ্রহ করে বড় বড় পাইকার ও আড়তে সরবরাহ করেন। সেখান থেকে আমরা কিনে আনি। এখানেই দুবার হাতবদল হয়। সবশেষ আমাদের কাছ থেকে ভোক্তারা কিনে নেন। এই হলো তিনবার। আমরা কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা লাভ করার চেষ্টা করি।
জয়নাল ও জুয়েল মিয়া নামে আরো দুই সবজি বিক্রেতা জানান, কখনো কখনো তিনবার হাতবদল হলেও বেশিরভাগ সময় দুবার হাতবদল হয়। ক্ষেত থেকে কিনে আড়তের লোকজন বা পাইকাররা সরাসরি আমাদের কাছে পণ্য সরবরাহ করেন। আমরা ভোক্তার কাছে বিক্রি করি। আড়তদার বা পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে দাম বেশি রাখেন। এ কারণে আমরা ভোক্তাদের কাছে বেশি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হই। এছাড়া বাজারে এখন সবজির সংকট রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি।
মাত্র দুই থেকে তিনবার হাতবদলে যাতায়াত খরচসহ দামের পার্থক্য ১০ থেকে ১৬ টাকা স্বাভাবিক বলছেন অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু তার বেশি কিংবা সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দামের পার্থক্যের কারণ খুঁজতে গেলে বেশিরভাগ পাইকার ও আড়তদার সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন না।
T.A.S / জামান