উন্মুক্ত করা হলো ৯৪ বছর বয়সী কালুরঘাট সেতু

দীর্ঘদিন বন্ধের পর সেতুর সংস্কার কাজ শেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলো চট্টগ্রামের প্রাচীনতম কালুরঘাট সেতু। ২৭ অক্টোবর (রোববার) সকাল থেকে যান চলাচলের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেতুটি একইসাথে নান্দনিক ও মজবুত করে সংস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৪ বছর বয়সী কালুরঘাট সেতুটি মেরামত করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা ও নজরদারিত এটি এখন অনেক মজবুত হয়েছে। মিনিমাম ১০-১২ বছর অনায়াসে চলবে এই সেতুটি। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।
সেতুতে এবার প্রথমবারের মতো সাধারণ মানুষের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। এতে বেড়েছে কৌতুহলও। রাতের দৃশ্য খুব অসাধারণ। কিছু স্থির চিত্র ফেসবুক জুড়ে ভাইরাল হয়েছে। এই কালুরঘাট সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, কোলাগাঁও, বোয়ালখালী, চন্দনাইশের লোকজনও শহরে আসা-যাওয়া করেন।
জানা গেছে, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনার জন্য ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীতে একটি আপদকালীন সেতু নির্মাণ করা হয়। ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওড়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৭০০ গজের সেতুটি তৈরি করে। দৈর্ঘ্য ২৩৯ মিটার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মোটরযান চলাচলের জন্য সেতুতে ডেক বসানো হয়। ১৯৫৮ সালে এই এক লেনের সেতুটিই সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের একত্রিশ বছর পর ১৯৬২ সালে জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে সেতুটিতে পাটাতন স্থাপন ও কার্পেটিং করে এটিকে রেলসেতুর পাশাপাশি একটি সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়।
বয়সের ভারে এখন ন্যুব্জ এই সেতু। ফলে ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। এ অবস্থায় সেতু ব্যবহারকারী বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়ার একাংশের বাসিন্দারা একই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছে বারবার। অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান নতুন সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইও করেন।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং বিগত সরকার প্রস্তাবিত চীন, মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং কর্ণফুলী নদীর ওপর পুরানো কালুরঘাট রেল সেতু ভেঙে নতুন করে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলো রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ সেতুটি গেল সরকারের মেগা প্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইনের অন্তর্ভুক্ত।
সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু নামে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করে ঢাকাস্থ রেলভবন কার্যালয়ে পাঠান। পরে সেটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করে ২৭ মার্চ সংশোধিত ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়।
প্রকল্প অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিলো এক হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। বাকি টাকার যোগান দেয় সরকার।
চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থ ছাড়ে জটিলতা, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় সেতুর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। এরপর ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে বন্ধ থাকে অন্যান্য যান চলাচল।
অবশেষে কারিগরি সব দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোববার সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে কালুরঘাট রেল সেতু সংস্কার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন রেল সচিব আবদুল বাকী। সে সময় তিনি বলেছিলেন, সংস্কার শেষ হলেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
প্রসঙ্গত, এই সেতু মেয়াদোত্তীর্ণ হয় প্রায় ২৪ বছর আগে। অর্থাৎ ২০০১ সালে। এরপর ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়। এ সময় ১১ মাস সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ২০১৮ সালে জাহাজের ধাক্কায় একটি স্প্যান সরে যায়। ওই সময় দু'দিন বন্ধ রেখে তা ৫০ লাখ টাকায় মেরামত করা হয়। এর আগে দফায় দফায় সেতুর সংস্কার করা হয়।
সর্বশেষ প্রায় ১ মাস আগেও এই সেতুর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লক্কর-ঝক্কর রেল লাইনের কাজ হয়েছিলো। সে বার ৩ দিনের জন্য রেললাইন মেরামতের কাজ হয়েছিল। এবার হয়েছে পুরো সেতুর কাজ।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম জানান, কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। রোববারে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল গাড়ি চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাশ হয়েছে এই সেতুর নির্মাণ প্রকল্প। যেখানে বলা হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই রেল-কাম-সড়ক সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এর জন্য মোট ১১,৫৬০.৭৭ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ৪,৪৩৫.৬২ কোটি টাকা আসবে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এবং বাকি ৭,১২৫.১৫ কোটি টাকা আসবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটিজ (ইডিপিএফ), কোরিয়া থেকে। আগে যেখানে সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ছিল ৭ দশমিক ৬২ মিটার সেখানে এখন করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ মিটার। ফলে বেড়েছে নির্মাণ ব্যয়।
এমএসএম / জামান

মহেশখালীতে রাতে অপহরণের পর সকালে মিলল যুবকের লাশ

আবার রোহিঙ্গা ঢলের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

তানোরে চাষাবাদে গরুর বদলে বাড়ছে ঘোড়া দিয়ে মই চাষ

উল্লাপাড়ায় কষ্টি পাথরের মূর্তি পাচারকারী দুই জন গ্রেফতার

বরগুনায় তিন সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী-১ আসনে শরিফ উদ্দিনের বিরোধিতা না বিএনপির বিরোধিতা

টেকনাফে মুক্তিপণে ফিরেছে অপহৃত ব্যবসায়ী

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

হাসিনা বাংলাদেশকে গুম-খুন আর লুটের রাজ্যে পরিণত করেছিল: আব্দুল খালেক

দাউদকান্দির ধারিবন গ্রামে একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ, পানিবন্দি কয়েকটি পরিবার

ভূরুঙ্গামারীতে ব্র্যাকের স্বপ্ন সারথি দলের জীবন দক্ষতা বিষয়ক ২৫তম সেশন অনুষ্ঠিত

রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার ডা:কে এম বাবর সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রীর অভিযোগ
