টিসিবির পণ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবিন্যস্থ বন্দর ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে পর্যাপ্ত নিত্য পন্য ও কলকারখানায় কাচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে টিসিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারে দ্রব্য মূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে টিসিবি জনসাধারণের কাছে বেশি পরিচিত। যদিও এটি কখনই ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে ক্রান্তিকালীন সময়ে কিছু দরিদ্র ক্রেতাদের কাছে টিসিবির আবির্ভাব আশীর্বাদ স্বরূপ।
বর্তমানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে ভোগ্যপন্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন দুবছর আগে ভারত হঠাৎ পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়৷ যার ফলে পেয়াজের মুল্য এতটা বৃদ্ধি পায় যা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও ক্রয় করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। আবার বর্তমানের কথা বললে ডাল ও তেলের দাম এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যে সাধারণ মানুষ ক্রয় করতে হিমসিম খাচ্ছে। টিসিবি অর্থাৎ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ সরকারি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এটি নির্দিষ্ট কিছু পন্যের আপদকালীন মজুদ গড়ে প্রয়োজনের সময় তা ভোক্তা সাধারণের কাছে সরবরাহের মাধ্যমে বাজারে দ্রবমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে৷ কিন্তু টিসিবির রয়েছে ব্যপক মজুদ ঘাটতি। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে বাজারে এর আনাগোনা দেখা যায়। বিশেষ করে যখন বাজার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। কিন্তু টিসিবি তাদের লক্ষ বা উদ্দেশ্য হাসিলে সবসময়ই ব্যর্থ। তার পিছনে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু কারন। প্রথমত পন্যের মজুদ ঘাটতি, দ্বিতীয় ভোগ্যপণ্য বন্টনের অব্যবস্থাপনা আর সর্বশেষ দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি। টিসিবি সাধারণত ট্রাক বা মিনিপিকাপে করে ডিলারদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পন্য সরবরাহ করে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকা সারিবদ্ধ লোকেদের শুধু টোকেন দেওয়া হয়৷ সেই টোকেনেও থাকে সীমাবদ্ধতা। দীর্ঘ সময় লাগার কারনে অধিকাংশ মানুষ যারা দিনমজুর বা নিম্ন আয়ের তারা এই সুবিধা নিতে পারে না। তাঁদের কাজে যেতে হয়। আবার এই সুবিধা শুধুই পৌরসভা বা শহর অঞ্চলে দেওয়া হয়। যেখানে শহরঅঞ্চলে দরিদ্রদের সংখ্যা অনেক কম। তাই যাদের টিসিবির পন্য খুব প্রয়োজন তারা এই সেবা থেকে বঞ্চিত। তারপরও শহর অঞ্চলে যারা এই পন্য পাচ্ছেন তারাও যে খুব লাভবান হচ্ছেন তা নয়। কারন প্রয়োজনের তুলনায় পণ্য খুবই কম। তাছাড়াও রয়েছে স্বজনপ্রীতির মত অভিযোগ । টিসিবির পন্যের মূল্য বাজার মূল্যের দুই-তৃতীয়াংশ। দেখা যায় ডিলার বা তার পরিবার এবং আত্মীয়দের তারা এই পন্য সরবরাহ করে এবং বাড়িতে এর মজুদ গড়ে। এতে করে তাদের অর্থ সাশ্রয় হয় সাথে সাথে ডিলার ও কিছুটা অধিক মুনাফা পায়। কিন্তু যাদের জন্যে এই পণ্যগুলো তারা বঞ্চিত হয় এই পণ্য থেকে। নিম্ন আয়ের মানুষরা অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন শুধুই একটি টোকেন পাবার আসায়। কিন্তু এই স্বজনপ্রীতির জন্যে অনেকে টোকেন পায় না। আবার দেখা যায়, গাড়ির উপর থেকেই কিছু লোক শুধুই তেল বা শুধু চিনি এমন ভাবে পণ্য নিয়ে যায়। এই পণ্যগুলো আবার টোকেনধারীদের থেকে পুষিয়ে নিতে হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ডিলারের দায়িক্তে থাকায় সাধারণ মানুষ কিছু বলতেও পারেন না। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে এবং বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে টিসিবির প্রতি সরকারকে আরো নজরদারি বাড়াতে হবে৷ টিসিবি গোডাউন থেকে বের হবার পরে তদারকির জন্যে প্রত্যেক গাড়িতে সরকারি কর্মচারী বা পুলিশ দিতে হবে। তাছাড়াও টিসিবির মজুদ বাড়াতে হবে। বৃহৎ পরিসরে টিসিবি কে ঢেলে সাজাতে হবে৷ এমনভাবে সাজাতে হবে শুধুই নিম্নবিত্ত নয় মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরাও এই সুবিধা নিতে পারে। তাছাড়াও শুধুই পৌরসভা বা শহরে নয় ইউনিয়ন তথা গ্রাম পর্যায়েও যেন এই সেবা পৌঁছাতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাহলে সুবিধা গ্রহনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ভোগ্যপণ্যের মূল্য যখন বৃদ্ধি পাবে তখন বাজারে ভোক্তা চাহিদা হ্রাস পাবে এবং টিসিবির আসল উদ্দেশ্য সফল হবে, বাজারের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
লেখা: আহাদ মোহাম্মদ তাহমিদশিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
এমএসএম / এমএসএম
জ্বালানি ব্যবস্থায় আমদানিনির্ভরতা কমাতে করণীয়
ইউরোপ আমেরিকার সম্পর্কের টানাপোড়েন
জুলাই সনদ, গণভোট ও নির্বাচন
বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগার জরুরি
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সচেতনতার বিকল্প নেই
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক তারেক রহমান
তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা
গণতন্ত্র, সুশাসন এবং জনগণ
বৈষম্য ও দারিদ্র্য কমাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়
গ্রামীণ ঐতিহ্য ও শীত কালীন রসদ সুমিষ্ঠ খেজুর রস
প্রতিশোধের রাজনীতি জাতির জন্য এক অভিশাপ
জলবায়ু সম্মেলন ও বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী
দেশ ও দল পরিচালনায় একই ব্যক্তি নয়
Link Copied