বাকৃবিতে ‘কচুর খোঁজে, বিশ্বের সন্ধানে’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘কচুর খোঁজে, বিশ্বের সন্ধানে’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ঐ সেমিনারের আয়োজন করে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ। সেমিনারে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা খাদ্য নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং কচুর উৎপত্তি, বিশ্বব্যাপী বিস্তার, অভিযোজন ও জেনেটিক বৈচিত্রতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রাশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির কৃষি অনুষদীয় ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রব্বানী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুম আহমেদ। এছাড়াও সেমিনারে কৃষি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের গবেষক, শিক্ষক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রব্বানী বলেন, "কচু একটি মূল্যবান খাদ্যশস্য, যা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এর পুষ্টিগুণ এবং বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে আরও গবেষণা এবং উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটি খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা এবং একাডেমিক বিনিময় এই ক্ষেত্রকে আরও উন্নত করতে পারে।"
মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের জাতীয় জাতিতত্ত্ব জাদুঘর থেকে আগত উষ্ণমণ্ডলীয় ফসল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পিটার জে ম্যাথেউস। তিনি কচুর জেনেটিক বৈচিত্র্য, পুষ্টিমূল্য এবং বিভিন্ন জলবায়ুতে এর অভিযোজন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, "কচু শুধু একটি ফসল নয়, এটি ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ পদ্ধতির সাথে ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার সেতুবন্ধন স্থাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে টেকসই কৃষির সম্ভাবনা, যা বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে।" তার উপস্থাপনায় বিভিন্ন দেশের কচু চাষের সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়, যা পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে উচ্চ ফলনশীলতার পথে কৃষকদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
সেমিনারের আয়োজক কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সেমিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, "বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের মোকাবেলায় কচু একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এই সেমিনার তরুণ গবেষকদের কচুর ওপর আরও গবেষণা এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতি বিকাশে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি আশা করি।"
কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন শিক্ষার্থী এবং তরুণ গবেষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "কচুর আধুনিক প্রজনন প্রযুক্তি এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি নিয়ে আরও গবেষণা করে আমরা খাদ্য নিরাপত্তার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারি।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তরুণদের এই বিষয়ে গভীর আগ্রহ এবং উদ্ভাবনী মনোভাব ভবিষ্যতে এই ফসলের উৎপাদন এবং ব্যবহার বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
সেমিনারটি প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়, যেখানে বিশেষজ্ঞরা শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং কচুকে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। এই সেমিনারকে অংশগ্রহণকারীরা একটি সফল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক মঞ্চ হিসেবে প্রশংসা করেন, যা কচু চাষ এবং ব্যবহারের বহুমুখী সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
T.A.S / T.A.S