মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে ‘অ্যানথ্রাক্স’ গুরুদাসপুরে ১২ রোগী শনাক্ত

‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগ মুলত গবাদিপশুর হয়ে থাকে। বর্তমানে এই ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগটি মানবদেহে দেখা মিলেছে। গত দুই মাসে গুরুদাসপুরে অন্তত ৩০টি গরু-ছাগল ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গবাদিপশু থেকে ইতিমধ্যে ১২ জনের শরীরে রোগের উপর্স্ব দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে তারা ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগে আক্রান্ত। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের চাকআদালত খাঁ ও মামুদপুর গ্রামে ‘অ্যানথ্রাক্স’ আক্রান্ত এসব রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়াও আক্রান্ত একটি গরু জবাই করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এমন ঘটনা গুরুদাসপুরে এই প্রথম। এই রোগের কারণে গরুর পরিচর্যা থেকে শুরু করে মাংস খেতেও ভয় পাচ্ছেন গ্রামের সাধারন মানুষ। আতংক দূর করতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সচেতনামূলক উদ্যোগ চান তারা।

এদিকে গ্রামে ‘অ্যানথ্রাক্সে’র প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে রোগ তত্ত, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি টিম। গবেষণা টিমের প্রধান অধ্যপক চিকিৎসক রহমান বলেন, শুধু চকআদালত খাঁ গ্রামেই ১১ ব্যক্তির শরীরে ‘অ্যানথ্রাক্সে’র মতো সংক্রমণ পাওয়া গেছে। গতমঙ্গলবার আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতস্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- গত একমাসে গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের চকআদালত খাঁ গ্রামের মোল্লা পাড়া গ্রামের জুয়েল মোল্লা ও তার স্ত্রী মিলি খাতুন, কন্যাশিশু জুঁই এবং জুয়েলের বোন জলি খাতুন ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। জুয়েলের স্ত্রী মিলি খাতুন সকালের সময়কে জানান, ৭ লাখ টাকা মূল্যের ৬টি গাভি পালন করছিলেন তারা। একমাসের ব্যবধানে ৪টি গাভিই অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় জবাই করে কম দামে মাংস বিক্রি করেছেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগেও। এছাড়াও মামুদপুর গ্রামের আরিফুলের বাড়িতেই দুইটি গরু, একটি ছাগল, সাখাওয়াত, রবিউলের একটি করে গরু অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে জুয়েলের ‘অ্যানথ্রাক’ আক্রান্ত গরু জবাইসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করায় একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ওই গ্রামের ইরফান মোল্লা, মনিরুল ইসলাম, রাজু আহম্মেদ, সাকিমুদ্দিন, আতাউর রহমান, মজনু, আব্দুল মান্নান ও মামুদপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন।

অ্যানথ্রাক্স আক্তান্ত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যমতে, গত দুই মাসে শুধু চকআদালত খাঁ গ্রামেই অন্তত ১৩টি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব গরু জবাই করে গ্রামে মাংস বিক্রি করা হয়েছে। সবশেষ জুয়েল মোল্লার গরু জবাই থেকে শুরু করে মাংস বানানোর কাজে যুক্ত ছিলেন। পরের দিন থেকে হাতে পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচির বোটার মতো বের হয়ে বড় ঘায়ে রূপ নেয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, অ্যানথ্রাক্স সন্দেহে গত এক সপ্তাহে চারটি গরু জবাই করে মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে। সেখান থেকে তিনটি গরুর মাংস ও রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া বুধবার থেকে উপজেলা ব্যাপি অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে গবাদি পশুর শরীরে টিকাদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক অহিদুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগীদের তালিকা প্রস্তুত করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স মূলত তিন ধরণের হয়ে থাকে।  নিশ্বাসের মাধ্যমে পেটের ভেতর গিয়ে প্রাণহানিও ঘটাতে পারে। তবে গুরুদাসপুরে শুধু চামড়ার ওপরেই এই রোগটি দেখা গেছে।