আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে কচুরি ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য
গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। এক সময় শহর কিংবা গ্রামের ছোট-বড় খাল-বিল, নদ-নদী, পুকুর কিংবা রাস্তার ধারে ডোবার জলে কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি সাদা আর হলুদের মিশ্রণে নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে থাকা কচুরি ফুল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে ডোবা জলাশয় ও ফসলি জমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে ইট পাথরের দালান-কোঠা। ভরাট হয়ে যাচ্ছে ছোট বড় খাল-বিল, ফসলি জমি ও ডোবা জলাশয়। ফলে বারহাট্টার বুক থেকে ক্রমেই হারিয়ে় যাচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে প্রাকৃতির সৌন্দর্য্যকে বিলিয়ে দেওয়া কচুরি ফুল।
উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয় থেকে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রান ও বৈচিত্র্যের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। তারপরও অযত্ন অবহেলায় নালা নর্দমায় ফসলহীন জমিতে জন্মায় কচুরিপানা। কচুরিপানার ফুল শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীর কাছে কতটুকু পছন্দের ও আনন্দের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বৃষ্টিপাতের অভাব ও নদীনালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় গর্ত ডোবা বা খাল-বিলে কচুরিপানার দেখা নেই বললেই চলে। বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি সাদা আর হলুদের মিশ্রণে ফুটে থাকা হাজার হাজার ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য এখন আর চোখে পড়েনা।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখাগেছে, এক সময় বারহাট্টার বিভিন্ন খাল-বিল ও ডোবায় কচুরিপানা থাকলেও এখন আর তেমন দেখা মিলেনি। কিছু কিছু জায়গায় দেখা মিললেও তা আগের মতো নয়।
উপজেলা সদরের বড়ি গ্রামের রামেন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে তিনি সকালের সময়কে জানান, আমাদের বাড়ির সামনে বিশাল বিল। বিল জুড়ে আগে পদ্ম, লাল-সাদা শাপলা ও কচুরিপানা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য্যে চোখ জুড়িয়ে যেতো। কিন্তু এখন আর সেই সৌন্দর্য আগের মতো আর চোখে পড়ে না।
তিনি বলেন, আগে আমাদের গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এ ফুল তুলে খেলায় মেতে উঠত। গ্রামের স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার ধারের ডোবার পানিতে ফুটে থাকা ফুল তুলে খেলা করতো। তবে এখন সে দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।
বারহাট্টা সি.কে.পি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মঈনউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, কচুরিপানা জলজ উদ্ভিদ। এর ডাটাগুলো ফাঁপা হওয়ায় অনায়াসে পানির ওপর ভেসে থাকে। অনুকূল পরিবেশ পেলে খুব দ্রুত কচুরিপানার বংশবিস্তার ঘটে। বর্ষাকালে বিলের পানি বৃদ্ধি পেলে বাতাসের চাপে কচুরিপানা ভেসে গিয়ে ধানক্ষেত ঢেকে ফেলে। শুষ্ক মৌসুমে ধানক্ষেত থেকে কচুরিপানার গাছ তুলে স্তূপ করে রাখলে তা শুকিয়ে গিয়ে জৈবসার তৈরি হয়। কৃষি জমির জন্য এ সার খুব উপকারী।
তিনি আরও বলেন, আগে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে মেঠো পথ ধরে স্কুল থেকে যখন বাড়ি ফিরতাম তখন রাস্তার দু'পাশে শুকনো খালে, ফসলি জমিতে কচুরিপানা ফুলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে মন জুড়িয়ে যেতো। এখন সে অপরূপ দৃশ্য আর দেখা যায় না।
T.A.S / T.A.S