অত্যাধুনিক মেট্রোরেল, যানজট নিরসনের চমকপ্রদ হাতিয়ার

বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে পুরো দেশের চাপ স্বাভাবিকভাবেই বহন করতে হয়৷ আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ এখানে অত্যাধিক। প্রতিনিয়ত জীবিকার অন্বেষণে, ভাগ্যকে বদলে দিতে শত শত লোক ঢাকায় পাড়ি জমায়। ফলশ্রুতিতে, সঠিক নগরব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা সময়ের দাবী ছিল৷ বিগত কয়েক দশকে সমস্যাগুলো যেমন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে তেমনী সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থাপনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। মেট্রোরেল সে ধারাবাহিকতার এক বিশেষ সংযোজন। এমনকি, মেট্রোরেল এর পরীক্ষানূলক যাত্রা সে স্বপ্ন পূরণের পথকে এগিয়ে দিয়েছে কয়েক ধাপ। অপেক্ষা শুধু এখন ফিনিশিংয়ের।
রাজধানী শহরে মানুষের যত সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে যানজট সবার উপরে৷ প্রতিনিয়ত এই যানজট শত শত মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মঘন্টাকেও হ্রাস করে দেয়৷ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনী প্রভাব পড়ে সকল ক্ষেত্রে। ক্ষতিটা ধীরে ধীরে হলেও এক সময় দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব টা স্বভাবতই চলে আসে অর্থনীতির উপর। যানজটের মতো কৃত্রিম সৃষ্ট দূরাবস্থা বা অব্যবস্থাপনা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা তাই জরুরি ছিল। যেহেতু ঢাকা শহরে দিনদিন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে তাই যানজট স্বাভাবিক ভাবে কমতো না বরং সমস্যা আরো দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতো।
যানজট মতো কৃত্রিম এই দূরাবস্থা নিরসনের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়৷ দীর্ঘমেয়াদী এসব প্রকল্পে যেমন বদলে যাবে ঢাকা তেমনী মানুষের দুর্ভোগ হ্রাস পাবে। ফিরে আসবে স্বস্তির হাওয়া। মেট্রোরেল এর পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও পাতাল রেলের কাজো হাতে নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে, ঢাকাকে বদলে দিতে মানুষকে বসবাস যোগ্য এক নগরী উপহার দিতে এ প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই সময়োপযোগী। অবসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকার যে দূর্ণাম ছড়াচ্ছিলো চারিদিকে সে দূরাবস্থার মোক্ষম এক জবাব দীর্ঘমেয়াদী এই প্রকল্প গুলো। সাধারণ মানুষ যখন দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রমের সুফল ভোগ করতে শুরু করবে ঠিক তখনই বদলে যাবে ঢাকা। এসব অবিশ্বাস্য রকমের বদলে যাওয়াকে সাধারণ মানুষ এখন আর গল্প বা লোকদেখানো নাটক হিসেবে মনে করেনা বরং বিশ্বাস করে মনেপ্রাণে ‘আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে’।
বাংলাদেশের অন্ধকার যুগ হিসেবে পরিচিত ১৯৭৫-১৯৯৫ সময়ে মানুষের বিশ্বাস এতোটাই ক্রমবর্ধমান হারে নিম্নমুখী করা হয়েছে যে, মানুষ ভালো কাজের জন্য বিশ্বাস করোনা টাও বড় চ্যালেন্জ। কাজটা আরো কঠিন হয় তখন যখন অন্ধকার যুগের তথাকথিত এজেন্টরা মানুষকে গুজব বা অসত্য তথ্যর ফুলঝুড়ি দিয়ে বিভ্রান্ত করতে থাকে। সবকিছুর এক সময়োপযোগী জবাব প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন৷ যার পিছনে ছিল দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছ বাস্তবায়ন৷ স্বভাবতই, ওসব নামধারী দেশদ্রোহী এজেন্টদের গালগপ্প এদেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেনি বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে আমরাও পারি নামক যে আত্নবিশ্বাসটা জন্মেছে বাংলাদেশ বির্ণিমানে তা আরো জুগাবে নিরন্তর প্রেরণা৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা স্বপ্ন যে অস্তমিত যায় নি তাঁর যথাযথ প্রমাণ উন্নয়নের মহড়া এবং গণমানুষের বারবারের আস্থা।
উন্নয়নের মহড়া এবং মানুষের আস্থা লাভের প্রক্রিয়াটা সহজ ছিলো না তা আগেই উল্লেখ করেছি। প্রথমত, এদশের মানুষ যা কল্পনা করেনি তা নির্মাণ এবং বিশ্বাসের জায়গা অর্জন৷ দ্বিতীয়ত, ঘরের শত্রু বিভীষণদের সামলানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। গুজব, অসত্য বুলি শক্তহাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছে প্রকল্প নির্মাণকারী সরকার।
যেমন হবে ব্যবস্থাপনা : মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হলে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে চলমান প্রকল্পটি। চোখের পলকে ছুটবে ট্রেন। উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭মিনিট। পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর ছাড়বে এসি ট্রেন। সম্পূর্ণ এলিভেটেড মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহণের সক্ষমতা থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ১৬টি স্টেশন। সাড়ে তিন মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন থামবে। থাকবে আধুনিক রেল স্টেশন। চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ করা যাবে। ‘প্রিপেড কার্ড দিয়ে ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন যাত্রীরা। আবার টিকিট কেটে ভ্রমণেরও সুযোগ থাকবে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলবে প্ল্যাটফর্মের প্রবেশদ্বার। বিদ্যুতে চলবে দ্রুত গতিসম্পন্ন এই ট্রেন। জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিল রেখে মেট্টোরেলে থাকবে লাল সবুজের সমাহার।
মেট্রোরেল আধুনিক নগর পরিকল্পনায় এক বিস্ময়কর সংযোজন। যা মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিরসনে বা গতি আনয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। কাজের গতি ও মানুষকে সচেতনতার জন্য ইতোমধ্যে এমআরটি তথ্যকেন্দ্রে নমুনা ট্রেন রাখা হয়েছে। টিকিট কাঁটা, উঠা-নামা ও সকল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেখানে স্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। অনেকে মনে করেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ করেও নাকি যানজট কমানো সম্ভব হয় নি সেখানে মেট্রোরেল কেমন ভূমিকা রাখবে? তাঁদেরকে গুজবের বশবর্তী হয়ে আগাম ভাবনা না ভেবে বাস্তবতা উপলব্ধি করবার অনুরোধ জানাই। মেট্রোরেল একদিকে যেমন যানজট কমাবে অন্যদিকে ঢাকাকে করে তুলবে দৃষ্টিনন্দন এক নগরী। নগরবাসীর কৌতূহলের এই খোরাক মিটবে আগামী ডিসেম্বরেই। পাশাপাশি আগামী বছরের জুনে পদ্মাসেতু চালু করা হবে এবং পরবর্তীতে কর্ণফুলী সেতু খুলে দেয়া হবে। এই তিনটি প্রকল্প উন্নয়ন কার্যক্রমের এক বিরাট মাইলফলক। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যার ভূমিকা থাকবে সর্বাধিক। এমন বৃহৎ প্রকল্প গুলো দেখুক আলোর মুখ। বাংলাদেশ হোক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার মতো। এগিয়ে যাক বীরদর্পে, স্বপ্নকে সত্যি করে৷ দেশের মানুষ থাকুক ভালো, সারা বাংলায় জ্বলুক উন্নয়নের আলো।
লেখক : অনন্য প্রতীক রাউত
শিক্ষার্থী : আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
জামান / জামান

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
