পানি বিক্রির শতকোটি টাকা হাওয়া চট্টগ্রাম ওয়াসার
চট্টগ্রাম ওয়সার পানি বিক্রির আয় থেকে বছরে ১০০ কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিস্টেম লসের নাম দিয়ে রাজস্ব শাখার কতিপয় পরিদর্শক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই অর্থ লোপাট করছে বলে বিশ্বস্ত একাধিক সুত্র জানিয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে বিল আদায়ের নিয়ম থাকলেও পরিদর্শকরা বিকাশের মাধ্যমে মাসিক ঘুষ আদায় করেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন একাধিক গ্রাহক।
জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব শাখায় ৩৮ জন পরিদর্শক কর্মরত আছেন। পানির ব্যবহারের পরিমাণ অনুযায়ী তারা গ্রাহককে বিল দিয়ে থাকেন, বিলের সেই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন গ্রাহক। কিন্তু এই বিল করার সময় কতিপয় অসৎ পরিদর্শক ক্যাশ লেনদেন করে বিলের পরিমাণ কমিয়ে দেন। আবার কেউ কেউ বিকাশের মাধ্যমেও গ্রাহকের সাথে টাকা লেনদেন করেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। তবে ঘুষ না দিলে বিলের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেন বলে জানা গেছে। চান্দগাঁও এলাকার পরিদর্শক মো. নাছিরের বিরুদ্ধে বিকাশ নাম্বারে লেনদেন আর টাকা না দিলে গ্রাহককে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। বিকাশে টাকা লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিদর্শক মো. নাছিরের সাথে যোগাযোগ করলে বিলের বাইরে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বিকাশে লেনদেনের প্রমান প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে জানালে তিনি এসব বিষয়কে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে অফিসের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সুত্রে জানা যায়, দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪৭ কোটি লিটার বা ৪ লাখ ৭৫ হাজার কিউব মিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করে ওয়াসা। এরমধ্যে ১০ শতাংশ হিসেবে ৪৭৫০০ কিউবমিটার পানি বাণ্যিজিক প্রতিষ্ঠানে ৩৭ টাকা দরে বিক্রি করে। যা থেকে দৈনিক আয় হয় ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। বছরে যার পরিমান দাঁড়ায় ৬৪ কোটি ১৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। বাকী ৪ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ কিউবমিটার পানি আবাসিক গ্রাহকের কাছে ১৮ টাকা দরে বিক্রি করে দৈনিক আয় হয় ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮০ কোটি ৮৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক ও আবাসিক মিলে পানি বিক্রি থেকে বছরে আয় হওয়ার কথা ৩৪৫ কোটি টাকা। ১০ শতাংশ হারে সিস্টেম লস বাদ দিলেও বার্ষিক আয় হওয়ার কথা ৩১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ মাসে এই খাতে আয় আসছে ১৯ থেকে ২০ কোটি টাকা। গড়ে মাসে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা হিসেব করলে ১২ মাসে (একবছরে) এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে লাপাত্তা হয় প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। আর কথিত সিস্টেম লস আরো একটু কম ধরলে বছরে ১০০ কোটি হাওয়া করে দিচ্ছে রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা।
ওয়াসার অপর একটি সুত্র জানায়, জনরোষে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক এমডি একেএম ফজলুল্লাহর সময় ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস হতো। এই সিস্টেম লসের নামে গত ১৬ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে আমরা অনেক কষ্ট করে উৎপাদন বৃদ্ধি করছি। কিন্তু রাজস্ব শাখার কতিপয় অসৎ ব্যক্তির কারনে যথাযথ আয় হচ্ছে না। রাজস্ব আদায়ে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন, নাহলে আমাদের কষ্টেররফসল অন্যের ঘরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা অনিয়মের সাথে জড়িত প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এব্যপারে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এস এম নাজের হোছাইন বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল্লাহ বিতাড়িত হলেও তার দোষর ও সহযোগীরা বহাল তবিয়তে আছে। যার কারনে বিগত সময়ের মতো অনিয়ম ও দুর্নীতি চলমান আছে। সিস্টেম লসের নামে পানি চুরি ও অপচয় বন্ধ হয়নি। আর চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেম লস ৩০ শতাংশের বেশি। আর এতবেশি সিস্টেম লসের অর্থ হলো এই প্রতিষ্ঠানটি অনিয়মে জর্জজরিত। আর এ সিস্টেম লসের মূল কারণ হলো পানির মিটারে অনিয়ম, বিল নিয়ে কারচুপি ও পানির অপচয়। মিটার রিডারদের কারসাজির কারণে অনেক গ্রাহক বেশি বিল দিচ্ছে আবার অনেকে মিটার রিডারদের সাথে চুক্তিতে পানির বিল কম দিচ্ছে। আর এই চুরির দায় ভার গিয়ে পড়ছে ওয়াসার ঘড়ে এবং সর্বশেষ দায় নিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। তাই ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন ছাড়া বিকল্প নাই। একই সাথে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ ও নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) রুমন দে বলেন, ’ওয়াসা একটি সরকারি সেবামূলক সংস্থা, এখানে ক্যাশ, বিকাশে লেনদেন বা ঘুষ নেয়ার কোন সুযোগ নাই। আমরা যথাসম্ভব রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করছি। রিডিং দেখা, অবৈধ সংযোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ৩৮ জন পরিদর্শক কাজ করছে। পানি সরবরাহের তুলনায় রাজস্ব কম আসার বিষয়ে তিনি বলেন, লাইনের বিভিন্ন স্থানে ছিদ্রসহ নানা কারনে অনেক পানি অপচয় হয়ে যায়, ফলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস হয়ে থাকে। আগে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস হতো, আমরা আরো কমিয়ে এনেছি। আয় বাড়াতে সিস্টেম লস আরো কমানোর চেষ্টা করছি। তবু যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তবে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএসএম / এমএসএম
বদলি আদেশের পরও বহাল হাটহাজারী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী
মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ: ৬ মাসে ৯ জনের প্রাণহানি, আতঙ্কে রায়গঞ্জবাসী
ধামরাইয়ে প্রকৌশলীর ওপর ইউপি চেয়ারম্যানের হামলা ও হুমকির অভিযোগ
জামগড়া আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মেডিকেল ক্যাম্পেইন এর আয়োজন
মানুষের জীবনমান ও শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ৩১ দফার বিকল্প নেই: অভি
নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির পদচারনায় মুখর জনপদ
নরসিংদীর ঘোড়াশালে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
“চরিত্র হননের নোংরা খেলায় নেমেছে প্রতিপক্ষরা”— শওকত হোসেন সরকার
কুতুবদিয়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন; একজন আটক
কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা
গোপালগঞ্জ-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর মতবিনিময় সভা
বেনাপোল বন্দরে সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ