ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

চুরি বিদ্যায় তিতাস কর্মকর্তার অসাধারণ নৈপূণ্য

কেটে দেয়া লাইনের গ্যাসেই চলছে কারখানা!


জাহিদুল ইসলাম শিশির photo জাহিদুল ইসলাম শিশির
প্রকাশিত: ৪-৯-২০২১ বিকাল ৬:৫৭

গণমাধ্যমের কাছে তিতাসের অবৈধ সংযোগের তালিকা চান কর্মকর্তারা ! শিরোনামে দৈনিক সকালের সময়ে  প্রকাশিত সংবাদ এর পর সংবাদে উল্ল্যেখিত তিনটি লাইন  গত বুধবার সংযোগ বিছিন্ন করে তিতাস গ্যাসের টিম। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা হচ্ছে এই বিছিন্ন লাইনেও গ্যাসেই চলছে কারখানা! কিভাবে সেটা সম্ভব? দৈনিক সকালের সময়ের সরেজমিন অনুসন্ধ্যানে ধরা পড়েছে অসাধারণ চুরি নৈপূন্যের সে কাহিনী। 

জানা গেছে, কেটে দেয়া লাইনের রাইজার খুলে নিয়ে ভেতরে নীচের লাইন বিশেষ কৌশলে নতুন করে সংযোগ দিয়েছে টিমের সদস্যরা। এতে লাইন কাটা এবং গোপন সংযোগের জন্য মালিক পক্ষকে গুনতে হয়েছে দ্বিগুন অর্থ। একই দিনে রাজধানীর ১৩/৮ কুতুব খালীর কামাল আহমেদের বাড়ীর গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করে দেয় তিতাসের টিম।অনুমোদনের চেয়ে কয়েকগুন চুলা জ্বালানোর অপরাধে বিছিন্ন করা হয় সংযোগ। কিন্তু ঘন্টা না পেরোতেই সে বাড়ীতে পূন: সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

সরেজমিন  পরিদর্শন করে দেখা গেছে তিতাস টিমের অভিযানে বিছিন্ন বিল্লালের কারখানার সামনে রাখা হয়েছে এলপি গ্যাসের একটি সিলিন্ডার। সাধারণকে বোঝানো হচ্ছে এই সিলিন্ডারের সংযোগ দিয়েই বৈদ্যুতিক বাল্ব তৈরীর কারখানাটি চালানো  হচ্ছে। কিন্তু ভেতরের খবর আলাদা। রাইজার খুলে নিয়ে নীচে ভেতর দিয়ে বিশেষ কৌশলে অসাধারণ নৈপূণ্যে  লাইনের পুন: সংযোগ দিয়েছে তিতাসের টিম। সে কাজটি করেছে তিতিাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগের টিম মেকার হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালির বাউফল উপজেলার নাসির। তিনি তিতাস গ্যাসের কেউ নন। কিন্তু সর্বাদা থাকেন তিতাসের অফিসে। কাজ করেন টিমের সাথে। আমাদের হাতে আসা তথ্যমতে, টিকাটুলি যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, সানার পাড়সহ পুরাতন ঢাকার বিভিন্ন বাসা ও কারখানায় অবৈধ গ্যাসের সংযোগ মাস্টার হিসেবে নাসিরের রয়েছে একচ্ছত্র রাজত্ব। 

নাসিরের মাধ্যমে সংযোগ পাওয়া অবৈধ গ্যাস লাইনের বিশাল তালিকা থেকে কয়েকটি  হচ্ছে– মাহুত তুলি বংশালের কনা কমিউনিটি সেন্টার। এ সেন্টারের লাইনের গ্যাসের অবৈধ সংযোগে চলছে নজরুল ইসলামের ( এন ইসলাম) ইলেক্ট্রিক কোম্পানীর ল্যাম্প উৎপাদনের কারখানা। মীর হাজির বাগের কবর স্থানের পশ্চিম পার্শে তৃতীয় তলা ভবনের নীচ তলায় চলছে সাদেক কেমাম্পানীর জনতা ব্যান্ডের কারখানা। চকবাজারের চম্পাতলী লেনে চলছে আনোয়ার হোসেনের রাহুল ল্যাম্প কারখানা, পোস্তগোলা ব্রিজের পাশে ক্যান্টমেন্ট রোডে চলছে শহীদুল ইসলামের এস এস ইলেক্ট্রিক ল্যাম্প কোম্পানী, গেন্ডারিয়ার কাঠপট্রি (ঘন্টিঘর ) সাধন দাস ও তার স্ত্রী পুরবী দাসের নেতৃত্বে চলছে দাস এন্ড কোং ও লাইফ ফুড ইলেক্ট্রিক ল্যাম্পের কারখানা। পোস্তগোলা ব্রিজের পরে ধলেশর স্কুলের গলিতে চলছে মোঃ ওয়াহিদুলের এসওএস ল্যাম্প কোম্পানী। শেখদি এলাকায় মসজিদের গলিতে মোঃ সেলিম হোসেনের একতা ল্যাম্প ওয়াকর্স কোম্পানীর জনতা ব্রান্ডের কারখানা চলছে অবৈধ সংযোগে। গেন্ডারিয়া শহীদ কমিশনারের পাশের বাড়ীর নীচতলায় মোঃ ইলিয়াস মিয়ার ইসলাম ইলেক্ট্রিক ল্যাম্প কোম্পানীর কারখানা চলছে অবৈধ গ্যাসে। চকবাজারের ইসলামবাগে ঈদগাস্থ মার্কেটের সাথে চলছে হাজি মোঃ হুমায়ূন কবিরের এসকে ল্যাম্প কোম্পানীর কারখানা। এ রকম আরো বহু তালিকা রয়েছে সকালের সময়ের হাতে।

সংবাদ প্রকাশের পর লাইন বিছিন্ন হলেও  অবৈধ সংযোগে কারখানা পরিচালনা ও রাস্ট্রীয় সম্পদের চুরির দায়ে কারখানা মালিকের নামে মামলা হওয়ার কথা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে  এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন মামলা করেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিকাটুলি অফিসের ডিজিএম মার্কেটিং প্রকৌশলী নাসিমূল ইসলাম দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, লাইন বিছিন্ন কা হয়েছে, মামলা এখনো হয়নি, আমরা দেখছি কি ব্যবস্থা নেয়া যায়। 

লাইন বিছিন্ন করা মানেই সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় বা চুরির প্রমাণ পাওয়া। প্রমাণ পাওয়ার পর মামলা করতে গড়িমসিকে সরকারি দায়িত্ব পালনে অনীহা হিসেবে দেখা যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন সদুত্তর দেননি তিনি। শুধূ বলেছেন আমরা দেখছি।

 এদিকে একাধিক সূত্র বলছে অফিসকে ম্যানেজ করেই নাসির  পুরো এলাকা জুড়ে চালাচ্ছে  অবৈধগ্যাসের সংযোগ বানিজ্য। এর বড় অংশই যাচ্ছে অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পকেটে। রাস্ট্রীয় সম্পদের এমন অপচয় বা চুরির ঘটনায় দূর্নীতি দমন কমিশনের একজন উপপরিচালক দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, অভিযোগ পেলেই তা আমলে নিবেন তারা। সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারি সম্পদ রক্ষা করা। চুরি করা নয়। 

এ দিকে নাসিরের সাথে তার মোবাইল নম্বরে কথা বললে নাসির জানান, তিনি তিতাসের কোন কর্মচারি নন। কোন কাজের প্রয়োজন হলে তিতাস থেকে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি টিমের সাথে যান। কিসের ভিত্তিতে বা কোন স্যারের নির্দেশে তিনি তিতাস টিমের সাথে চলাফেরা করেন এটা বলতে অস্বীকর করেন তিনি। নাসির বলেন, এটা বড় স্যারদের ব্যাপার। আমি গরীব মানুষ। আমাকে মেরে আপনাদের কী লাভ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের জিএম মার্কেটিং  মোমিনুল হক দৈনিক সকালের সময়কে বলেন,অবৈধ লাইন  বিছিন্ন করলে অনস্পটে এফআই আর হয়ে মামলা হওয়ার কথা। এ বিষয়ে সুস্পষ্ঠ্য বিধান রয়েছে।

গত বুধবার লাইন বিছিন্ন হওয়ার পরও এ সময় পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন প্রকার মামলা করা হলোনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজিএম নাসিমূল ইসলাম বলেন, মামলা করার জন্য টিমকে বলে দিয়েছি। তবে এসব মামলা থানা নিতে চাইনা। তারপরও মামলা করার ব্যাপারে বলা হয়েছে। মামলা হবে। এ দিকে কথিত নাসিরের সাথে অফিসের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাসির নামে কাউকে তিনি চেনেন না। 

তিতাসের অবৈধ সংযোগ ও চুরির কাজে সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতায় গ্রাহকদের হয়রানী ও করনীয় বিষয়ে  জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্রেতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের চেয়রম্যান লায়ন নূর ইসলাম দৈনিক সকালের সময়কে জানান, “ এটা স্পষ্ঠতই রাস্ট্রীয় সম্পদের চুরি। যে কর্মকর্তা সরকারের সম্পদ রক্ষায় ব্যর্থ তার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলা হতে পারে। কারণ একজনের চুরির দায় গিয়ে পড়ে সব গ্রাহকদের ঘাড়ে। তিনি বলেন, এমন  তথ্য পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নামে  জনস্বার্থে মামলা করবে বাংলাদেশ ক্রেতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন।

এমএসএম / এমএসএম

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইন যেন শুধু খাতা কলমে