ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

আফগানে স্থিতিশীলতায় ফিরে আসুক


রোমেনা হক রুমা, কানাডা photo রোমেনা হক রুমা, কানাডা
প্রকাশিত: ৪-৯-২০২১ রাত ৯:২২
আমরিকা যেন মানুষ চিনতে ভুল করেছিল, ভুল জায়গায় হস্তক্ষেপ বা পদক্ষেপ করেছিল। আফগান লড়াকু জাতী, উগ্রবাদীও। এক টুকরো শুঁকনো রুটি হলেই তুষ্ট, জীবন ধারায় বাহুল্যতা কিছু নেই। আলেকজান্ডার পারস্যের সম্রাটকে পরাজিত করে কিন্তু আফগানীস্থানের দখলে কষ্টসাধ্য ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য এবং পারস্যের রাজারা আফগানিস্থানের দখল নিয়ে যুদ্ধ করে। শেষ রাজা ছিল জহির শাহ। তাকে ১৯৭৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্থান দখল করে। তালেবানরা ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘঠনের মিলিশিয়া। আমেরিকার প্রভাবে ১৯৯৪ সালে তালেবানের আবির্ভাব ও পরে আফগানিস্তানের প্রায় ৯০ শতাংশ অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ২০০১ এর অক্টোবরে মার্কিণ-ন্যট'র যুদ্ধ শুরু হয়। সে বছর ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পর সারা বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে আফগানিস্তানের তালেবান। এই সন্ত্রাসী হামলার প্রধান সন্দেহভাজন মনে করা হয় এক সময়ের মিত্র ‘ওসামা বিন লাদেন এবং আল কায়েদা'কে।তারা আফগান গুহায় বসে তালেবান আশ্রয় থেকে এত উন্নত দেশ অ্যামেরিকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় বলে ধারনা করা হয়। যদিও কোন সঠিক প্রমান এখনও বিশ্ববাসীকে আমেরিকা উপস্থাপন করতে পারেনি বা দেখেনি।
 
তারপরেই 'সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধের' নামে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট আফগানিস্তান আক্রমণ করে অক্টোবর। দু-তিন মাসের মধ্যেই তালেবানের পতন ঘটে। হন্য হয়ে চেষ্টা চালানোর পরও তালেবানের নেতা মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমর সহ অন্যান্য নেতা, ওসামা বিন লাদেন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বিরাট এক গোলকধাঁধা আর অনেক বিতর্ক রয়েছে বুশ প্রশাসনের এই সব বিষয় নিয়ে। ইতিহাস ঠিকই সত্য তথ্য বের করে লিপিবদ্ধ করবে এক সময়।
 
বর্তমানে আগস্ট মাস শেষ হবার আগেই আমেরিকান সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দেশটিতে আটকে রয়েছেন ১৫ হাজারের মত মার্কিন নাগরিক। রাতের আঁধারে সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান দ্রুততায় সহজেই আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় অ্যামেরিকা বিশ্বের অনেক দেশের সমালোচনার মুখে পড়ে। এবারের টুইন টাওয়ারে হামলার ২০ বছর পূর্তির আগেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাইডেন। ওদিকে হাজার প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দিয়ে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আফগানিস্তানে যে সেনা ও পুলিশ নিরাপত্তা বাহিনীকে গঠন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা বাহিনী গণহারে তালেবানের কাছে অস্ত্র, সরঞ্জাম ও সামরিক যান আত্মসমর্পণ করছে। কোন রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি। এত দ্রুত দৃশ্য পট পরিবর্তন হয়েছে যে আমেরিকার হিসেব এখানেও সম্ভবত মেলেনি।
 
জো বাইডেন বলেছেন " অতীতের ভুল আর নয়, তবে আফগানদের পাশে থাকবে আমেরিকা। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অংশগ্রহণে ইতি টানার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল "। সবাই তাতে একমত কিন্তু এভাবে নয়!! অসম্ভব বিশৃঙ্খলা আর নিদারুন ভীতিতে জনগণ প্লেনের চাকা,দরজা ধরে পালাতে চাওয়ার দৃশ্য বিশ্বাবাসীকে মর্মাহত করেছে। সেনা প্রত্যাহার ঘিরে বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও জো বাইডেন বলছেন "আমেরিকান সেনারা এমন একটি যুদ্ধে অংশ নিয়ে মারা যেতে পারে না, নেয়া উচিৎও না, যেখানে আফগান সৈন্যরা নিজেরাই লড়াই করতে ইচ্ছুক না।" -এই কথাটি বা বোধটি বুশ প্রশাসনকে তৎকালীন আমেরিকার কারো বা কেউ বলার ছিলনা? উড়ে এসে জুড়ে বসার যুগ শেষ। যার যার দেশ তাদেরকেই পরিচালনা করতে দেয়া উচিত, দূর থেকে কিছু বাঁধা নিষেধ বা চুক্তি করতে বাধ্য করতে পারে মানবিকতা বা গনতন্ত্রের স্বার্থে। কিন্তু তালেবানদের চেয়ে বেশী আফগান জনগনের মৃত্যু হয়েছে অ্যামেরিকার ইনভেশনে। হাজার হাজার শিশু, মহিলা বাস্তুহারা পথে ঘাটে দিন কাটাচ্ছে। চরম লজ্জাজনক ও দুঃখজনক তো বটেই।
 
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে দোহায় দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। শর্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে। তালেবানও আর মার্কিন বাহিনীর ওপর কোন হামলা চালাবে না, আল কায়েদা বা কোন জঙ্গী সংগঠনকে আশ্রয় দেবে না।
দীর্ঘ আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করে তালেবান বলছে, তারা আফগানিস্তানে বিজয়ী হয়েছে। তালেবান হয়তো তাদের সেই প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে যে, তারা কারও বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ নেবে না। পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং সরকারি প্রশাসনযন্ত্রকে হয়তো তারা কাজ চালিয়ে যেতে বলবে। 'সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের' নামে যুক্তরাষ্ট্র যে তালেবানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিল, তারাই আবার দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তারা আর সৈন্যরা সেখান থেকে পালানোর জন্য বিমান বন্দরের দিকে ছুটছে।
 
পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, “আফগানরা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গেছে।” চীনের একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, তাঁদের দেশ আফগান জনগণের ইচ্ছা ও পছন্দ সম্মান করে। বিশ্ববাসী অবলোকন করছে, উগ্রতা বা ভীতিকর শাসন ব্যাবস্থা পরিহার করে শান্তিপ্রিয় একটি শাসন ব্যাবস্থা চালু হোক। গৃহ যুদ্ধেরও আশঙ্কা রয়েছে। জনগণ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে আর নয়। এবার গনতন্ত্র আর মানবিকতার সমৃদ্ধ হোক দেশটি। জনগণকে যেন আর কারো দাসত্ব না করতে হয় বা নিজ দেশ থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ভীনদেশে পালাতে না হয়। সরকারে তালেবান ছাড়াও অন্য রাজনীতিক এবং অন্য জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি দেখতে চাবে শহুরে রাজনীতিকগণ দেশটিকে এখনও কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের চাওয়ার প্রতিফলনেই রয়েছে প্রকৃত উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও বিশ্বে স্বাভাবিক দেশ হিসেবে স্থান পাওয়ার উৎস। নিজেদের মধ্যে মত বিরোধ কমিয়ে গৃহযুদ্ধ না জড়িয়ে শান্তি বর্ষিত হোক।

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া