শার্শায় ইজারাবিহীন পশুর হাটে বেশুমার লুটপাটের অভিযোগ
দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট যশোরের শার্শা উপজেলার সাতমাইল হাটটি এখন স্বার্থন্বেষী মহলের প্রভাবে ইজারা ছাড়াই চলছে। এতে করে পশু হাট পরিচালনায় চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা কবলে পড়ে পশু হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরজমান। বিষয়টি নিয়ে বিগত ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর দেশের স্বনামধন্য পত্রিকা ইনকিলাবে“লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ ইজারাবিহীন শার্শার সাতমাইল পশুর হাট” ও ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকায় “শার্শা সাতমাইল ইজারাবিহীন পশুর হাটে চলছে ব্যাপক লুটপাট” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরও জেলা বা উপজেলা প্রশাসন সাতমাইল পশুহাট সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তি করতে পারেনী। শার্শা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ইজারা গ্রহণের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজিব হাসান সাক্ষরিত বাংলা ১৪৩১ সনের বাগ আঁচড়ার সাতমাইল পশু হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি-২০২৪/০২ ও পুনঃইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কাঙ্খিত দরপত্র না মেলায় বা ইজারাদারদের অনাগ্রহ থাকায় স্থগিত হয়ে পড়ে সাতমাইল পশুহাটের ইজারা গ্রহণ পক্রিয়া। ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে ১৪৩১ সনের সারা বছরের জন্য ৬% বৃদ্ধিসহ সরকারী মূল্য ছিলো ৭,৭০,৬২,৩৫৩/-টাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল সাতমাইল পশু হাটের ইজারা শেষ হয়।এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ইজারা বিহীন ভাবে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পশু হাটটি চালাতেন বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক,সাবেক চেয়ারম্যান ও হাটের সাবেক ইজারাদার ইলিয়াস কবির বকুল। ৫ আগস্ট পরবর্তী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাগআঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পশু হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শার্শা উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সাতমাইল পশুহাটটি পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। সাবেক ইজারাদারের কাছ থেকে নেওয়া কার্ডধারী ব্যাপারীরা পশুহাট হতে সুবিধা না পাওয়ায় অর্থাৎ ব্যাপারী ও সাধারন ক্রেতাদের একই মূল্যে প্রতিটি গরুর পাস শুরু হলে ক্ষুদ্ধ হয় কার্ডধারী ব্যাপারীরা। তারা আন্দোলন শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় গত ২০ আগস্ট সাতমাইল হাটটি বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এর মাস খানেক পর যথারিতী সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার নিয়মে ২০ সেপ্টেম্বর হতে পুনরায় চালু হয় সাতমাইল পশু হাটের কার্যক্রম। বাংলা ১৪২৮ সালে এ পশুহাটের ইজারা ডাক ছিলো ৮ কোটি টাকা,১৪২৯ সালে ১৪ কোটি টাকা ও ১৪৩০ সালে এই ডাকের হাট ছিলো সাড়ে ১০ কোটি টাকা বলে সূত্রটি আরো নিশ্চিত করে। পশুহাটের জন্য বাংলা ১৪৩১ সালের সরকারি চাহিদা মোতাবেক দরপত্র জমা না পড়া বা ইজারাদার না পাওয়াকে কৃত্রিম সংকট তৈর করছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সাতমাইল পশুহাটের ইজারাদার এখনো নির্ধারন হয়নী জানিয়ে বাগআঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, প্রত্যেক হাটে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে এসিল্যান্ড অফিসের লোক ও স্থানীয় ভূমি অফিসের লোক উপস্থিত থেকে পশু হাটের টাকা উত্তোলন করে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়। পশুহাটে আপনার ভূমিকা কি? আর কত টাকা আদায় হয় প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সংযোগ কেটে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস জামাল,কবিরসহ আরো অনেকে বলেন সাতমাইল পশু হাটের টাকা উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়ার নামে চলছে বেশুমার লুটপাট। বৈধ্য ইজারাদার না থাকায় প্রতি হাটে লাখ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে,যা দেখার কেউ নেই। “অবৈধ আয় বৈধ করতে যশোরের বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকর্মীদের মাসিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে বিজ্ঞাপন বিলের টাকা দিয়ে পশুহাটের অব্যবস্থপনা ও চাঁদাবাজি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হাটের আদায়কারীরা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান জানান,আমি উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর হতেই পশুহাটটি ইজারা বিহীন পেয়েছি। বাংলা ১৪৩১ সালের পশু হাটের ইজারা দেওয়ার জন্য একাধিকবার পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। এখনো পর্যন্ত কোন ইজারাদার আগ্রহী না হওয়ায় স্থানীয় তহশীলদার দিয়ে সরকারী নিয়ম মেনে খাজনা আদায় হচ্ছে যা সরকারী কোষাগারে জমা হচ্ছে। ইজারার বিজ্ঞপ্তি এখনো চলমান রয়েছে যে কেউ শিডিউল কিনে উপজেলা প্রশাসনে জমা দিতে পারবে। আমরা চাচ্ছি খাজনা আদায়ের চেয়ে ইজারা প্রদান বেশি স্বচ্ছ যাতে সরকার লাভবান হয়। এ আলোকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মপক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘ সময়ধরে ইজারাবিহীন চলা সাতমাইল পশুহাটের সিংহভাগ টাকা সরকারী কোষাগারে জমার বিপরীতে পশু হাট পরিচালনাকারীরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। ইতিপূর্বেও চড়া ডাকে হাট ইজারা দেওয়া হলেও সাম্প্রতী সময়ে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও ইজারাদার না মেলাকে সন্দেহের চোখে দেখছে এলাকার সূধী সমাজ। তাদের মতে পশুহাটের টাকা লুটপাট করতেই ইজারাদারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করছে একটি মহল। এবিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা পূর্বক দ্রুত সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।
এমএসএম / এমএসএম