বাঙালির ঐতিহ্যের পৌষ সংক্রান্তি আজ
বাংলা বছরের পৌষ মাসের শেষ দিন আজ। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে পৌষ মাসের শেষ দিনটি সনাতন ধর্মালম্বীরা পৌষ সংক্রান্তি হিসাবে পালন করে থাকে। ঘরে ঘরে পিঠে-পুলির উৎসব। পৌষ সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতির একটি বিশেষ উৎসব বা বিশেষ ঐতিহ্যবাহী দিন।
কৃষি নির্ভর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় বারহাট্টা উপজেলার সনাতন ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে দিনটি।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখাগেছে, সূর্য ওঠার আগে খুব ভোর বেলায় পুকুর অথবা নদীতে প্রাতঃস্নান করে খড়ের গাদায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের দৃশ্য। তুলনামূলক ভাবে কম হলেও কিছু কিছু এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীরা প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে এখনও ধরে রেখেছেন। এলাকার কীর্তন শিল্পীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ও শ্মশানে কীর্তন করছেন।
বাউসী ইউনিয়নের আথানগর গ্রামের কল্পনা গুপ্তা, সন্ধ্যা রানী, ঝর্ণা রাণীসহ প্রাতঃস্নান করতে আসা কয়েকজন ষাটোর্ধ মহিলার সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা পৌষ মাসের শেষ দিন পৌষ সংক্রান্তির প্রাতঃস্নান করে আসছি। যতদিন সম্ভব ততদিন করে যাব। এই দিনটিতে আগে অনেক মজা হতো, কিন্তু বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা সবাই শহরমুখী। তাই পৌষসংক্রান্তির প্রাতঃস্নানের আনন্দটা তারা উপভোগ করতে পারে না।
তারা আরও বলেন, আগে আমাদের গ্রামের পুরুষরা মাঠ থেকে খেড় এনে লাসি (খড়ের গাদা) তৈরির প্রতিযোগিতা করতো। রাতে সবাই যার যার বাড়িতে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত থাকতাম। চারদিকে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যেতো। রাত শেষে ভোরবেলায় বাড়ির বৃদ্ধ, মধ্যবয়সী পুরুষ-মহিলা, কম বয়সী ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে প্রাতঃস্নান সেড়ে লাসিতে আগুন দিয়ে সবাই মিলে শীত নিবারণের পাশাপাশি পিঠা খেতে খেতে বিভিন্ন গল্পে মশগুল থাকতাম। এখন আর সেই দিন নাই।
উপজেলা সদরের কাশবন গ্রামের কীর্তন শিল্পী অরুণ সিংহ, অসীত সিংহ, অবনী সিংহ’র সাথে কথা বললে তারা বলেন, প্রতি বছরেই আমরা পৌষ সংক্রান্তির দিনে কীর্তন নিয়ে গ্রামে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িতে বাড়িতে যাই, সন্ধ্যায় শ্মশানে কীর্তন করে অনুষ্ঠান শেষ করি। আগে মানুষের বাড়িতে কীর্তন নিয়ে গেলে পিঠা খেয়েই দিন চলে যেতো কিন্তু এখন সেই দিন আর নাই। আমরা যতদিন বাঁইচ্চা আছি ততোদিন এই ঐতিহ্য থাকবো, পরে হয়তো আর থাকবো না।
এমএসএম / এমএসএম