বিলুপ্তির পথে অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠা 'ঢোলকলমি'

গ্রামাঞ্চলে প্রত্যেক এলাকায় বাড়ির পাশে, রাস্তার ধারে, মাঠে-ঘাটে, জলাশয়ের ধারে, খাল-বিলসহ বিভিন্ন জায়গায় অনাদর আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা আগাছা ঢোলকলমি, বেড়ালতা বা বেড়াগাছ হিসেবে পরিচিত।কয়েক বছর আগেও ঢোল কলমি গাছ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলেই একটি পরিচিত নাম ছিল। তবে কালের বিবর্তনে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় বারহাট্টা উপজেলাতেও গাছটি বিলুপ্তির পথে।
অযত্ন-অবহেলায় জন্ম নেয়া এ গাছ অল্পদিনের মধ্যেই ঘন ঝাড়ে পরিণত হয়ে জমির ক্ষয়রোধ করে। কয়েক বছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এই গাছ জমির বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হতো। গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা এর ডাটাকে আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করতেন। এর অপুর্ব ফুল যেকোনো বয়সী মানুষের নজর কাড়ে। হালকা বেগুনি রঙের পাপড়ি কিছুটা মাইক আকৃতির ফুলটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। প্রায় সারা বছরই ঢোল কলমির ফুল ফোটে। তবে বর্ষার শেষে শরৎ থেকে শীতে ঢোলকলমি ফুল বেশি দেখা যায়। মধুর জন্য ফুলে আবার কালো ভোমরাও আসে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছটি সন্ধান করতে গেলে নদীর তীরবর্তী কয়েকটি এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায়নি এক সময়ের অতি পরিচিত প্রকৃতিতে অযত্নে বেড়ে ওঠা ঢোল কলমি গাছ।
উপজেলা সদরের স্কুল শিক্ষক ও লেখালেখির সাথে জড়িত কবি মানষ গুণ বলেন, 'ঢোল কলমি' আমাদের অঞ্চলে গাছটির নাম উজাওড়ি। গত ৩০-৩৫ বছর আগেও এ গাছটি আমাদের এলাকয় দাপটের সাথে প্রভাব বিস্তার করে ছিল। অথচ এখন সারা উপজেলার প্রতিটি গ্রাম ঘুরলেও কিছু কিছু জায়গা ছাড়া গাছটির অস্তিত্ব প্রায় বিলীনের পথে। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, গত ৯০ এর দশকে দেশজুড়ে ঢোল কলমি গাছ নিয়ে ভয়ংকর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই সময় গুজব রটেছিল-ঢোলকলমি গাছে থাকা পোকা এতটাই ভয়ংকর যে, এটা যেকোন মানুষকে কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত, এমন কি স্পর্শ লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে। তৎকালীন সময়ে এ সংক্রান্ত খবর রেডিও, টিভি, পত্র-পত্রিকায় মহামারীর মৃত্যুর খবরের মত কবে ক’জন মরল আবার ক’জন হাসপাতালে গেল সেরকম ভাবে প্রচারিত হয়েছিল প্রায় মাস জুড়ে। ব্যাস! শুরু হয়ে গেল ঢোল কলমি নিধন। দিন কয়েকের মধ্যে সব ঢোল কলমি কেটে সাফ। 'বাঙালি যে, এত করিৎকর্মা কে জানতো!' এরপর এ গুজবের আতংক চরম পর্যায়ে পৌছালে টিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ পোকাটি ধরে এনে নিজের হাতের উপর ছেড়ে দিয়ে হাটিয়ে, তারপর হাত দিয়ে পিষে মেরে দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, এটি আসলে খুবই নিরীহ একটি কীট, মোটেও প্রাণ সংহারী নয়। এরপর থেকেই আতঙ্ক কেটে যায়। ততোদিনে ঢোল কলমি নিধন সম্পন্ন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'বুদ্ধি দিয়ে যৌক্তিকতা খুজতে যায়ইনা আমরা বাঙালি। শুনলেই হলো, দে ছুট....! এতো হুজুগে মাতাল আমরা বাঙালি।' অনেক এলকায় স্বল্প হলেও ঢোল কলমি এখনও কালের স্বাক্ষী হিসেবে রয়েগেছে।
উপজেলার সাহতা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, মাত্র ক’বছর আগেও উপজেলার প্রায় অধিকাংশ ফসলের ক্ষেত, পুকুর ও বসতবাড়ির চারপাশে বেড়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে এই ঢোল কলমির ব্যবহার হতো। কেউ কেউ কলমি গাছের সাথে নেট ও বাঁশের চটা ব্যবহার করে বেড়াকে শক্তিশালী করতো। ঢোল কলমি খরা ও বন্যায় সহনীয় বলে প্রতিকুল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। সহজেই আবার কলমি গাছ মারা যায় না বলে খাল-বিল, ডোবা এবং খোলামেলা পরিবেশে এ গাছ খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে থাকে। তবে বর্তমানে কলমি গাছের সংকটে এর ব্যবহার আর তেমন চোখে পড়ে না।
উপজেলার রায়পুর গ্রামের গৃহস্থ হাসেম আলী বলেন, ঢোল কলমি গাছটি খুবই উপকারী গাছ। এই ঢোল কলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গরু ছাগলে না খাওয়ায় এটা বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নদীতীর ভাঙন রক্ষা করে। আমাদের এলাকার মা-বোনেরা এক সময় রান্নার কাজেও ব্যবহার করতো এই গাছটি। গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে পরিচিতি রয়েছে এই ঢোল কলমির।
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজর জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক মজিবুল হক বলেন, ঢোলকলমির বৈজ্ঞানিক নাম- (ipomoea carnea) ইংরেজি নাম- (Pink morning glory Bush morning glory)। কিছু ভেষজ গুণও রয়েছে। ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা। ঢোল কলমি মূলত গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ। এর কান্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায়। গাছটির পাতা হৃৎপিণ্ডাকার, সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, ঢোল কলমি খুবই উপকারী গাছ। নদীর তীর, খালপাড়ের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখা, ভূমিক্ষয় রোধ, ভাঙনরোধে ঢোলকলমি গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র সুরক্ষায় মূল্যবান এ উদ্ভিদকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সকলেরই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এমএসএম / এমএসএম

সাতকানিয়া- মাদকসেবনের বাহানায় দূর্বৃত্তরা পুঁড়িয়ে দিলো ঘরবাড়ি

বড়লেখায় সন্ত্রাসী হামলায় পর্তুগাল প্রবাসীসহ আহত-২, বাদীকে হুমকি

বরগুনায় দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ধর্ষণে শিকার

নড়াইলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

নাঙ্গলকোটে শশুরবাড়ীর নির্যাতনে দাখিল পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা

কুড়িগ্রামে মোটরসাইকেল-ট্রলির সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহত

নেত্রকোনা মোহনগঞ্জে রোপনকৃত বোরো ধান জোর করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ

আবারো বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর পায়তারা, ব্যহত শিক্ষার পরিবেশ

ক্ষেতলালে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে আটক-১

বকশীগঞ্জে নাদিম সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

সাভার আশুলিয়ার সাব রেজিস্ট্রার এর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন

শরণখোলায় বহিস্কারের প্রতিবাদে বিএনপির একাংশের সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
