ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

ক্যাম্পাস খুলতে কতটা প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়?


ইউছুব ওসমান, জবি  photo ইউছুব ওসমান, জবি
প্রকাশিত: ১০-৯-২০২১ দুপুর ১১:৫৮
গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন উপাচার্যরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারেন। এদিকে শিক্ষামন্ত্রণালয় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণাও দিয়েছে। সম্পন্ন হচ্ছে তার প্রস্তুতিও। সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই উপাচার্যদের সাথে বসবেন তিনি।
 
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পেলেই খুলবে জবি। উপাচার্যের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের, সরকারের নির্দেশনা পেলে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর পূর্বে গুছিয়ে নিতে পারবেন তারা৷ তবে ছোট ক্যাম্পাস ও অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে রয়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জও। তাই  ক্যাম্পাস খুলতে কতটা প্রস্তুত বা কতদিনে প্রস্তুতি নিতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তাই জানার চেষ্টা করেছে দৈনিক সকালের সময়।
 
পরিবহন সেবা :  অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জবির প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের উপর নির্ভর করে থাকে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সংখ্যাও শিক্ষার্থীদের সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। প্রায় সকল শিক্ষার্থীই এর উপর নির্ভর করায়, বাসগুলোতে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ও বাসের গেটে ঝুলে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতো শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস খুললে বাসগুলোতে কতটা স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।
 
পরিবহন সেবার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানান, 'আমাদের পরিবহনগুলো পুরোদমে চালু করতে ৭ দিনের কম সময় লাগবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার নোটিশ পেলে, নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আমরা প্রস্তুত হতে পারবো।'
 
স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের চিন্তায় আসেনি। আমরা এটা নিয়ে ভাববো, তবে মনে হয় না এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কারণ দ্বিগুণ সংখ্যক বাস ভাড়া করার সামর্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে বলে আমার মনে হয় না। ইউজিসির কাছে আমাদের খরচের বিষয়টা গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। তাদের হিসেবে আমাদের হল নেই, কিন্ত হল না থাকায় আমাদের বাসের ব্যবস্থা করতে হয় শিক্ষার্থীদের জন্য।​
 
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল : গত আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথেই নবনির্মিত একমাত্র ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠতে পারবেন ছাত্রীরা। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ তম সিন্ডিকেট সভায় পাস হয়েছে হলের নীতিমালা।এখনও প্রক্রিয়াধীন সিটের জন্য আবেদন ও সিট বণ্টনের বিষয়টি। ছাত্রীহল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সেপ্টেম্বর মাসের পুরোটাই লেগে যাবে।
 
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বলেন, উপাচার্য চাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই ছাত্রীরা যেনো হলে উঠতে পারে। হলের নীতিমালা প্রস্তুত হয়ে গেছে, ৬ তারিখ সিন্ডিকেটে সেটা পাশ হয়েছে। এরপর অনলাইনে আবেদন পত্র ছাড়বো ছাত্রীদের জন্য। আবেদন, বাছাই সব মিলিয়ে আমাদের সেপ্টেম্বর মাসটা লেগে যাবে।
 
মেডিকেল সেন্টার​ : চলতি বছরের ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টার উদ্বোধন করা হয়৷ তবে মেডিকেল সেন্টারটির কাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও এখনও যুক্ত হয়নি আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। শুধুমাত্র প্রাথমিক প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো কাজে আসবেনা এটি।
 
মেডিকেল সেন্টারের উপ প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম জানান, 'ক্যাম্পাস খুললে আমাদের করোনার সময় হিসেবে আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেই। তারপরও যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করবো। মেডিকেল সেন্টারের কাজ হওয়ার পর কিছু ফ্যাসেলিটিজ বেড়েছে, তবে শুধুমাত্র কাঠামোগত কাজটাই সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য যে সংযোজনের বিষয়গুলো ছিলো সেটা আমাদের এখতিয়ার না, এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। '
 
ডে-কেয়ার সেন্টার​ : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিশু সন্তানদের জন্য শিক্ষকদের ডরমেটরি ভবনে রয়েছে ডে কেয়ার সেন্টার৷ এটি খোলার জন্য প্রস্তুত বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বাস্থ্যবিধির প্রসঙ্গের জন্য আদৌ সেন্টারটি খোলা হবে কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তারা।
 
ডে-কেয়ার সেন্টারের আহ্বায়ক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, রুমগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, খোলার পূর্বে প্রয়োজনীয় সেনিটাইজেশন উপকরণের ব্যবস্থাও করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেই ডে কেয়ার সেন্টার খোলা হবে।
 
ক্যান্টিন​ : ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদা আক্তার  জানান, 'নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক যোগদানের পর এবিষয়টি দেখবেন। তবে যে কোনো সময় চালু করার জন্য ক্যান্টিনটি প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে কিছু সংস্কার কাজও করা হয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও করে রাখা হয়েছে।'
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত পরিচ্ছন্নতা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান খন্দকার বলেন, 'কোভিডের মধ্যে ক্যাম্পাস খুললে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা সামনে রেখে আমাদের কমিটিটা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার কমিটির বৈঠকে সার্বিক কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই সেগুলোর বাস্তবায়ন হবে।'
 
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শ্রেণীকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ​
 
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান জানান, 'এবিষয়ে ডিন ও বিভাগ চেয়ারম্যানদের নিয়ে কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
 
পুরান ঢাকার জনবহুল পরিবেশ ও ভ্যাক্সিন কর্মসূচি
 
অনাবাসিক হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পুরান ঢাকার মেসবাড়িগুলোর উপর নির্ভরশীল। এমন জনবহুল এলাকায় গাদাগাদি করে মেস বাড়িতে থাকায়  শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কতটা সংক্রমণ এড়িয়ে চলতে পারবেন সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।​
 
এদিকে শিক্ষার্থীদের ভ্যক্সিন নিশ্চিত করতে এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করছে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য জানিয়েছেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে টিকা নিতে না পারা শিক্ষার্থীদের তালিকা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা সম্পন্ন করলেও অনেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন সমস্যার  কারণে এখনও টিকার আওতায় আসেনি।
 
শিক্ষার্থীদের ভ্যাক্সিন নিশ্চিতের বিষয়ে তিনি বলেন, 'বিভাগগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের জন্য। কারা এক ডোজ বা পূর্ণ ডোজ টিকা দিয়েছে, কাদের এনআইডি কার্ড নাই, রেজিস্ট্রেশন করেনি, করলেও ম্যাসেজ পাইনি। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
 
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানান, 'উপাচার্যদের সঙ্গে মিটিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, টিকা নেওয়া ও করোনা পরিস্থিতির সাপেক্ষে অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। সরকার যদি বলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে, খুলে দেবো। আমাদের প্রস্তুতি আছে। সরকার হয়তো এক-দুই সপ্তাহ আগে নির্দেশনা দেবে। সেই সময়ের মধ্যে গুছিয়ে নেবো। যদি এর মধ্যে খোলা সম্ভব না হয়, সেজন্য অনলাইনে পরীক্ষার নীতিমালাও তৈরি করে রেখেছি।'
 
 
এদিকে গত ৭ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের সভাপতিত্বে বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানদের সাথে এক বিশেষ মিটিংয়ে আগামী ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে বিভিন্ন বর্ষের আটকে থাকা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। স্ব স্ব বিভাগের তত্বাবধানে পরীক্ষার রুটিন তৈরির নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

জামান / জামান

চবি মেডিকেলে প্যাথলজি বিভাগ উদ্বোধন, করানো যাবে ২১ ধরনের পরীক্ষা

ইবিতে (ইকসু)গঠনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

জাকসুতে শিবির ও বাগছাসের প্যানেল ঘোষণা, বিলম্ব ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের

জকসু নীতিমালা জমা আজ আগামী বুধবার বিশেষ সিন্ডিকেট সভা

চাঁদাবাজির ঘটনায় আলোচিত সেই আফ্রিদির বিরুদ্ধে মানহানীর অভিযোগ

জবি রোভার স্কাউটের বৃক্ষরোপণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

গকসু নির্বাচন: গঠনতন্ত্র ভেঙে ‘একক প্রার্থী বানানোর খেলা’, পণ্ড বৈঠক

১২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিটিসিএলের আড়াই কোটি টাকার বিল বকেয়া

ইবিতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা: ভিপি আবিদুল, জিএস হামিম, এজিএস মায়েদ

ইবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী ৬১জনকে শাস্তির সুপারিশ

ট্রান্সজেন্ডার কর্তৃক শিক্ষকদের হত্যার হুমকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ

জ্ঞানার্জন করো কিন্তু জ্ঞানপাপী হইও না: বাউবি উপাচার্য ড. ওবায়দুল ইসলাম