জবি শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আসবে কবে?

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৬ বছর হতে চললেও এখনো স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমার দাবি উঠলেও এখনো টনক নড়েনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। করোনা এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হওয়ায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে বিষয়টি নিয়ে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন লেবু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর পরে পরীক্ষা করে জানা যায় তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারেননি তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, লেবুর দুই ভাই ভ্যান চালায়। লেবু অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে টাকা চাইলে তার বাবা পরের দিন ঘুটা (গোবর শুকিয়ে তৈরি জ্বালানি) বিক্রি করে টাকা পাঠানোর আশ্বাস দেন। সেই অর্থে ডাক্তার দেখানোর আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময়টুকুও আর পাওয়া হয়নি তার। চিকিৎসার অভাবে তার আগেই পরোপারে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত ১১ জুন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী রাহাত আরা রিমি মারা যান। তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। তার সহপাঠী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রিমি প্রায় এক বছর আগে থেকেই শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এবং মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকে প্রচণ্ড জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় কিছুই খেতে পারছিলেন না।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ইমরান পাভেল নামে এক শিক্ষার্থীর টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যু হয় গতবছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। তার বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, টানা ৭ দিন ধরে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ছিলো সে। এছাড়াও আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিলো তার। টিউশনি করার জন্য করোনাকালীন সময়ে ঢাকায় চলে আসে সে। ঢাকায় থাকা অবস্থাতেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার।
শিক্ষার্থীদের দাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায় যেখানে আবাসন খরচ মেটানো কষ্টকর সেখানে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অনেকটাই দুঃসাধ্যের ব্যাপার। স্বাস্থ্ যবীমা থাকলে সহজেই চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন বলে দাবি তাদের।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপা বলেন, গতকাল আমার বিভাগের আল আমিন ভাই জ্বরে মারা গেল, টাকার অভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি কোনো আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা থাকত বা স্বাস্থ্য বীমা চালু থাকত তাহলে আল আমিন ভাইয়ের মতো সকল মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রতন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। আমাদের বাইরে মেসে থাকতে হয়। সেই খরচ জোগাতেই আমরা হিমশিম খাই। আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে টাইফয়েড, জন্ডিস এসব হওয়ার চান্স অনেক বেশি। তার ওপর এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ। কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা খরচ জোগান দেয়া আমাদের অধিকাংশ পরিবারের সম্ভব হয়ে ওঠে না। এসব দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্য বীমা চালু থাকা সবার জন্যই সুবিধাজনক।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, আমরা একবার আমাদের শিক্ষকদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম কিন্তু ইন্স্যুরেন্স যারা করে তারা নানা প্রতিবন্ধকতা দেখিয়েছিল। তাই সে সময়ে কাজটা এগোতে পারেনি। এটি তো একটি ব্যাপক বিষয়, কতজন বীমায় থাকবে না থাকবে সবকিছু স্টাডি করে এটা করা যেতে পারে।
কতজন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি তো নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এতদিন ছাত্রকল্যাণ ডিঅর্গানাইজড ছিল, তাই এটা বলা যাচ্ছে না। এখন আমি এসে এই পরিসংখ্যানটা তৈরি করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরই স্বাস্থ্য বীমা নেই। এগুলো চালু থাকা দরকার, এগুলো থাকলে বিপদের সময় কাজে লাগে। কিন্তু অনেকে আবার এসব বিষয়ে ইন্টারেস্টও দেখায় না। কবে ডাক্তার দেখাব, চিকিৎসা করাব, টাকা দেব মাসে মাসে? তবে ইন্স্যুরেন্স তো এভাবেই হয়। বিপদ তো আর বলে আসে না।
বর্তমানে স্বাস্থ্য বীমার বিষয়টি নিয়ে অনেক আক্ষেপ থাকলেও উপাচার্য শোনালেন আশার বাণী। তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছি। আমরা সাধারণ বীমা কর্মসূচি, প্রগতি এদের সাথে কথা বলতেছি। দেখব কাদের টা নিলে ভালো হয়, তবে চেষ্টা করব সবার জন্যই নেয়ার।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনতে ডিনস কিমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাথে স্বাস্থ্য বীমা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জামান / জামান

চবি মেডিকেলে প্যাথলজি বিভাগ উদ্বোধন, করানো যাবে ২১ ধরনের পরীক্ষা

ইবিতে (ইকসু)গঠনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

জাকসুতে শিবির ও বাগছাসের প্যানেল ঘোষণা, বিলম্ব ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের

জকসু নীতিমালা জমা আজ আগামী বুধবার বিশেষ সিন্ডিকেট সভা

চাঁদাবাজির ঘটনায় আলোচিত সেই আফ্রিদির বিরুদ্ধে মানহানীর অভিযোগ

জবি রোভার স্কাউটের বৃক্ষরোপণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

গকসু নির্বাচন: গঠনতন্ত্র ভেঙে ‘একক প্রার্থী বানানোর খেলা’, পণ্ড বৈঠক

১২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিটিসিএলের আড়াই কোটি টাকার বিল বকেয়া

ইবিতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা: ভিপি আবিদুল, জিএস হামিম, এজিএস মায়েদ

ইবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী ৬১জনকে শাস্তির সুপারিশ

ট্রান্সজেন্ডার কর্তৃক শিক্ষকদের হত্যার হুমকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ
