ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

নারকোটিক্সের প্রতিনিধি ছাড়া বারে অভিযান নিয়ে বিতর্কের সৃস্টি


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ২৮-৪-২০২৫ বিকাল ৫:১৬

রাজধানীর উত্তরায় ‘টাইগার বার’ রেস্টুরেন্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বৈধ অনুমতি নিয়ে উক্ত ব্যবসা পরিচালনা করা হলেও উক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের না জানিয়ে অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রতিনিধি বা অনুমতি ছাড়া দেশের অনুমোদিত বারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এককভাবে অভিযান পরিচালনার আইনগত বৈধতা নেই। তার পরও র‌্যাবের কতিপয় কর্মকর্তা ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই টাইগার বার ও রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও অসৎ উদ্দেশ্যে ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযানের নামে লুটপাট করা হচ্ছে বলে বার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে।
সংশ্লিস্ট সুত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ২০ থকে ২৩ ধারা পর্যন্ত বারে অভিযানের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। আর আইনের ২০ ধারায় বারে প্রবেশ ও ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালককে। এই ধারায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত বারে মহাপরিচালক বা তার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রবেশ, জব্দ ও তল্লাশি করতে পারবে। তবে অন্য কোনো বাহিনীর কথা উল্লেখ নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বারের অনুমোদন বা লাইসেন্স মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেয়। আর সেখানে বৈধ অবৈধ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরই তদারকী করে থাকেন। বারে কোনো সংস্থা বা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই মাদকের ডিজির অনুমোদন নিতে হবে এবং তার প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাখার বিধান রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও এখনো দুর্নীতিবাজ কতিপয় কর্মকর্তা বিভিন্ন সংস্থায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানা অজুহাতে বিভিন্ন বারে অভিযানের নামে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতো। আর কোথাও সুবিধা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নানা হয়রানী করা হতো। গত ২৩ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে টাইগার বারে অভিযান চালিয়ে বিপুল দেশি-বিদেশি মদসহ চারজনকে আটক করে র‌্যাব। অভিযানের পর র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে টাইগার বার নামে নিবন্ধিত কোনো দলিল পাওয়া যায়নি। রেস্টুরেন্টটি বেআইনিভাবে নামটি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
অপরাদিকে টাইগার রেস্টুরেন্ট এন্ড বারের ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম দাবি করে বলেছেন, তাদের বৈধ বার লাইসেন্স রয়েছে। যার লাইসেন্স নম্বর ০১/২০২১/২০২২। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে র‌্যাব অভিযান চালানোর সময় বারের লাইসেন্স দেখতে চায়নি। তারা কোনো কথা শুনতে চাননি। এমনকি বারে বৈধ ও অবৈধ এই দুই ধরনের মদ ও বিয়ারও শনাক্ত করেনি। তারা ঢালাওভাবে সব মদ ও বিয়ার জব্দ করে। এছাড়া অভিযান চালানোর সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তাও সঙ্গে আনেননি।
আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে কর্মকর্তা ডেপুটি ডাইরেক্টর মানজারুল ইসলাম বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ২০ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স বলে মাদকদ্রব্য বিক্রয়ের স্থানে প্রবেশ ও পরিদর্শন করার ক্ষমতা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক অথবা তাহার নিকট হইতে সাধারণ বা বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অফিসারকে দেয়া হইয়াছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এই ক্ষমতা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক পর্যন্ত অর্পণ করেছেন। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো বারে ভিন্ন কোনো সংস্থা অভিযান চালাতে গেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে অবশ্যই ইনফর্ম করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালাতে হবে।
বাংলাদেশ বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) জাহাঙ্গীর বলেছেন, র‌্যাব কিংবা ভিন্ন যেকোনো সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ছাড়া কোনো বৈধ কিংবা লাইসেন্সকৃত বারে এ ধরনের অভিযানে যেতে পারে না। এছাড়া এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টেও একটি রিট রয়েছে। এ ধরনের অভিযান না করতে আমাদের সংগঠন থেকেও র‌্যাব মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে টাইগার বারে র‌্যাবের অভিযান নিয়ে যতদূর জেনেছি, তাতে র‌্যাব এ অভিযানে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। তাদের অভিযানের পদ্ধতি সঠিক হয়নি। তাছাড়া তারা লকার পর্যন্ত ভেঙেছে। অনেক গরমিল রয়েছে। এ ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আজ শনিবার বৈঠক হবে। বৈঠকে সীদ্ধান্ত হলে এ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিকার পেতে আমরা আদালতের আশ্রয় নেবো। দেশে যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, এলসি নেই, নতুন করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না, শ্রমিক অসন্তোষসহ পরিবেশ না থাকায় অনেক ছোট-বড় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন। তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এভাবে অভিযান দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সঙ্কেত বলছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযান ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ বা কারো প্রতি বিদ্বেষের অংশ।
বার মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,বিভিন্ন সময়ে কিছু সদস্য ও সোর্স কয়েকটি বারে বিনামূল্যে অ্যালকোহল সেবন, পারসেল নেওয়ার পাশাপাশি মাসোহারা দাবি করেন। আর সেই মাসোহারা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর কয়েকটি বারে অভিযান চালানোর হুমকি দেয়। বিষয়টি বার মালিকরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বুধবার বারে র‌্যাবের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়, আর সেই অভিযানে সময় তারা প্রথমেই সিসিক্যামেরা ভেঙে ফেলেন।
বার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, র‌্যাব সদস্যরা টাইগার বার থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, চারটি ল্যাপটপ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাতটি মোবাইল ফোন,অফিসিয়াল ফাইল (লাইসেন্স, আমদানি, উত্তোলন সংক্রান্ত ও সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র),ক্রাউন ভেবারেজ থেকে উত্তোলনকৃত বৈধ বিয়ারের শতাধিক কেস, কেরু এ্যান্ড কোং-এর বৈধ প্রায় ৫০ কেস এবং ব্রান্ড রেজিস্ট্রেশন থাকা অ্যালকোহল জব্দ করে। এ সময় তারা বারের কর্মকর্তাদের মারপিট করে এবং ৪ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। তবে উত্তরার টাইগারসহ অন্যান্য বারে অভিযানের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাউকে র‌্যাব জানায়নি। আর র‌্যাবের মহাপরিচালকের কোনো প্রতিনিধিও ছিলেন না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ঢাকা উত্তরা জোন)শামীম আহমেদ বলেছেন, টাইগার বারে অভিযানের বিষয়ে অধিদফতর অবগত নয়। এছাড়া অন্যান্য বারে অভিযানের বিষয়েও তাদের জানানো হয়নি। এর আগে মহাখালীতে বেরন নামে একটি বারে অভিযান চালিয়ে নগদ টাকা ও অ্যালকোহল জব্দ করে নিয়ে যায় র‌্যাব সদস্যরা। একই মাসে বনানী ১১নম্বর সড়কের একটি বার এবং গুলশান আগোরা ভবনের চতুর্থ তলায় একটি বারে অভিযান চালায় সংস্থাটি। ওই বার তিনটির কর্তৃপক্ষ জানায়, নগদ টাকা ও জব্দ করে নিয়ে যাওয়া কোটি কোটি টাকার অ্যালকোহলের তালিকা তাদের দেওয়া হয়নি।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-তারা ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করলেও অভিযানের নামে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। গত ২০২১ সালের ১৮ মার্চ জুরাইনের আইরিস পাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে র‌্যাব ও কাস্টমস যৌথভাবে অভিযান চালায়। ওই অভিযান চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে বার মালিকপক্ষ উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিট মালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারা লঙ্ঘন করে তাদের বার অ্যাণ্ড রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরপর উচ্চ আদালত ওই অভিযানকে অবৈধ ঘোষণা করে এক নির্দেশনাও দেন।
তবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উক্ত অভিযানের বিষয়ে কেউ কোন প্রকার অভিযোগ করেনি। আর আইননের ব্যতিক্রম থাকলে তার উপযুক্ত প্রমাণ আলে তার সমাধান হয়ে যেত। আর র‌্যাব পরিচয়ে যারা বিনামূল্যে মদ খেতে যায় তাদের শনাক্ত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার আহবান জানানো হয়েছে।

এমএসএম / এমএসএম

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইন যেন শুধু খাতা কলমে