সাতকানিয়ায়-রেল আর এলজিইডির রেষারেষিতে হারাচ্ছে রেল স্টেশনের সৌন্দর্য, ভোগান্তিতে যাত্রী

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে সাতকানিয়ার যাত্রীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত স্টেশনে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়নি সংযোগ সড়ক। গ্রামীণ আলপথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যাত্রীরা। রেলে চড়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সাতকানিয়াবাসী বহুল কাঙ্খিত রেল পেলেও যাত্রীরা সংযোগ সড়কের কারণে প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন চরম ভোগান্তির। রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে কয়েক মাস আগে। কিন্তু কোন এলাকা থেকে রেলওয়ে স্টেশনের সাথে সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে তার কোন কার্যক্রম এখনও চোখে পড়ছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য এলজিইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা বলে চিহ্নিত করলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ যাত্রী সাধারনের সুবিধার্থে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রেলে যাতায়াতকারীরা। যাত্রীরা বলছেন, এ অব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রীরা যাতে রেলে যাতায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সে দিকে নজর দিতে হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০১৮ সালে সাতকানিয়া রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে এখনও নির্মাণ হয়নি সংযোগ সড়ক। রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা শুধুমাত্র প্রকল্পভুক্ত জায়গায় কাজ করে দায় সেরেছেন মাত্র। কবে নাগাদ সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে তাও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী বলেন, সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য স্টেশনের পূর্ব পাশে শিডিউল অনুযায়ী কয়েক ফুট জায়গায় কাজ করেছি। প্রকল্পের বাইরে কাজ করার সুযোগ আমাদের নাই। তবে যাত্রীদের রেলে যাতায়াতের সুবিধার্থে যাতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়, সেজন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে বলেন, সাতকানিয়া রেল স্টেশনে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য আমি কোন চিঠি পায়নি এবং এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে, যদি রেলের পাশ দিয়ে যাওয়া জায়গা যদি এলজিইডির অধীনে হয় এবং আমাদের অবগত করে তাহলে তা নির্মাণে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন বলেন, রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য যারা কাজ করেছে তারা এখনও আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেয়নি। তাই এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারছি না। সাতকানিয়া রেলওয়ে স্টেশন সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সাতকানিয়া রেল স্টেশনের
পূর্ব পাশে গ্রামীণ আলপথে সরকারের আগে থেকে অধিগ্রহণকৃত কয়েক ফুট জায়গায় পিচ ঢালা করে দেওয়া হয়েছে। সড়কের দুই পাশে দেওয়া হয়েছে গাইড ওয়াল। স্টেশনের পশ্চিম পাশে আলপথের চেয়ে সামান্য প্রশস্ত সড়কটি দিয়ে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করছে। যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সাথে লাগোয়া কয়েকটি সিঁড়ি। তবে সেই জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। স্টেশনের দুই পাশে আর কোন রাস্তা না থাকায় যাত্রীরা ওই দুই স্থান দিয়ে অনেক দূর কষ্ট করে যাতায়াত করে থাকে।
রেল স্টেশনের সাথে লোগোয়া সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিফা পাড়ার বাসিন্দা সংবাদ কর্মী ইকবাল মুন্না বলেন, স্টেশনের পশ্চিম পাশের জায়গাগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন। এখানে আমাদের পৈত্রিক জায়গাও রয়েছে। বর্তমানে যে সড়ক দিয়ে রেলের যাত্রীরা যাতায়াত করে তা হচ্ছে আলপথ। একটি রিক্সা কষ্ট করে চলাচল করতে পারলেও মালামাল পরিবহনে মিনি ট্রাক সমান কোন গাড়িও চলাচল করতে পারে না। স্টেশনের পূর্ব পাশে যে সড়ক তৈরি করা হচ্ছে তা সড়কের জন্য পর্যাপ্ত নয়। বর্ষাকালে বিলে পানি পূর্ণ থাকে। রেলে উঠা নামার ক্ষেত্রে কোন সড়ক না থাকায় বর্ষাকালে রেলে সাতকানিয়া লোক যাতায়াত করতে পারবে না। তাই সহসা জমি অধিগ্রহণ করে যাত্রীদের চলাচলের জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দিলে যাত্রীদের কষ্ট লাগব হবে।
সাতকানিয়া কেরানিহাট এলাকার ব্যবসায়ী মো.শাহেদ ও মোর্শেদ আলম বলেন, বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় রেললাইন নির্মিত হওয়ায় তারা খুব খুঁশি। সময় থাকলে ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রাম শহরে গেলে চেষ্টা করেন রেলে করে গ্রামে আসার জন্য। তবে, দেখা গেছে রেল স্টেশনে নামলে কোন গাড়ি পাওয়া যায় না। আলপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে অন্তত আধ কিলোমিটার জায়গা হেঁটে সাতকানিয়া-বাঁশখালী সড়কে গিয়ে গাড়িতে উঠে বাড়িতে আসতে হয়। যদি রেলে উঠা-নামার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকত তাহলে তারা দোকানের মালামাল আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে
বাসের পরিবর্তে রেলকে ব্যবহার করত। এতে খরচ ও সময় দু'টোই বেঁচে যেত। সাতকানিয়া পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ছিটুয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো.জাহেদুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়িক কাজে আমি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরে প্রায় সময় যাতায়াত করে থাকি। আমার বাড়ি থেকে সাতকানিয়া রেল স্টেশনের দূরত্ব পৌঁনে এক কিলোমিটার। কয়েকবার রেলে করে যাতায়াতও করেছি। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় রেল থেকে নেমে কোন গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটে কিছু দূর এসে গাড়িতে করে বাড়ি যেতে হয়। সড়ক যোগাযোগ ভালো থাকলে রেলে যাতায়াত করা আমাদের জন্য সহজ হবে।
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো.জসিম উদ্দিন বলেন, রেলের যাত্রীরা কষ্ট করে যাতায়াত করলেও কোন ধরনের মালামাল উঠা-নামা করা যাচ্ছে না। যার কারণে ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়ার ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রেল দিয়ে কোন মালামাল আনা নেওয়া করতে পারছেন না। যার কারণে দিন দিন রেলে যাতায়াতের আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সংযোগ সড়ক নির্মাণে অতি দ্রুত পদক্ষেপ মানুষের কষ্ট লাগবে সহায়ক হবে।
সাতকানিয়া রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাষ্টার মং ইউ মারমা বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার চারটি এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার লাইনের চারটিসহ দৈনিক আটটি ট্রেন আসা যাওয়া করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেনগুলো সাতকানিয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করে থাকে। দৈনিক গড়ে ৭০-৮০ জন যাত্রী যাতায়াত করে। তবে যাত্রীরা সড়ক না থাকায় কষ্ট করে বিলের মাঝখানে আলপথ দিয়ে যাতায়াত করে।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, স্টেশনের পূর্ব পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করেছেন। তবে এখনো জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়নি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, রেলের যাত্রীদের জন্য সংযোগ সড়ক থাকাটা প্রয়োজন এবং জরুরি। এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও এলজিইডির সাথে আলাপ করে অতিদ্রুত কিভাবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসএম / এমএসএম

কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যু

বেনাপোলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন

শার্শায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ নিবন্ধনে উদ্বুদ্ধকরণ

পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বাকেরগঞ্জ বাসী

সীমান্তে রোহিঙ্গা পারাপারে সক্রিয় পাচঁ পাচারকারী আটক

রিকশাচালকের ছেলে রতন স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

বিদ্যালয়ের মূল্যবান গাছ কম দামে বিক্রির অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে

গোমস্তাপুরে বিএনপি নেতা মাসুদের গণসংযোগ

টাঙ্গাইলে নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের ভাঙনে ৪০ পরিবার নিঃস্ব

কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদীতে ডুবে বৃদ্ধা নিখোঁজ

পাঁচবিবিতে কৃষকের বাড়ী ভস্মীভূত, শত্রুতার আগুন নাকি, শর্ট সার্কিট ?

ঝিনাইদহ সূর্যের হাসি ক্লিনিকে বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
