ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে অতি পরিচিত পাখি পেঁচা

একসময় গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে সবসময়ই যে পাখিটি চোখে পড়তো, সেই পাখিটিই আমাদের অতি পরিচিত পাখি পেঁচা। চোখ-মুখ দেখে পাখির মত মনে না হলেও পেঁচা পাখি জগতে অদ্বিতীয়। তবে মানুষের অত্যাচার ও ক্রমাগত পরিবেশ বিপর্যয়ে পেঁচা এখন বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির পাখি।
'হলুদ পাতার ভিড়ে ব'সে, শিশিরে পালক ঘ'ষে-ঘ'ষে; পাখার ছায়ায় শাখা ঢেকে, ঘুম আর ঘুমন্তের ছবি দেখে-দেখে; মেঠো চাঁদ আর মেঠো তারাদের সাথে; জাগে এক অঘ্রাণের রাতে সেই পাখি..' রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের 'ধূসর পাণ্ডুলিপি' কাব্যগ্রন্থের 'পেঁচা' কবিতার পুরো অংশ জুড়েই রয়েছে প্রকৃতির সাথে মায়াবী পাখি পেঁচার উপস্থিতি। ষড়ঋতুর বাংলায় হেমন্ত এলে বাংলার গ্রামীণ প্রান্তরের ফসলের মাঠ খালি হয়ে যায়। ফসলের ঘ্রাণ মাঠ থেকে চলে যায় চাষিদের বাড়ির আঙিনায়। প্রান্তরের ধুধু খোলা মাঠে অনুভব করা যায় শামুকের খোলসে লেগে থাকা শিশিরের নীরবতা। মেঠো ইঁদুরের গর্ত ও চলার পথগুলো দেখা যায়। রাতের আঁধারে খোলা মাঠে ইঁদুর ধরতে চলে আসে পেঁচার দল। তারা জেগে থাকে হেমন্তের মাঠে। জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় 'প্যাঁচা আর প্যাঁচানী' ছড়া কবিতায় লিখেছেন- 'প্যাঁচা কয় প্যাঁচানী, খাসা তোর চ্যাঁচানি; শুনে শুনে আনমন; নাচে মোর প্রাণমন!' একসময় সন্ধ্যা নামতেই শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলে হরহামেশা দেখা মিলতো পেঁচা। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেঁচার ভূমিকা অতুলনীয়। বৃক্ষ নিধন করে তাদের আবাসস্থল ধ্বংস, নগরায়ণের জেরে দিন দিন উধাও হচ্ছে পেঁচা।
সরেজমিনে বারহাট্টা উপজেলা সদরসহ, কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে ও বয়ষ্কদের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, আগের দিনে বসত বাড়ির আশেপাশে গাছের ডালে, ঝোপের আড়ালে দেখা যেতো ঘাপটি মেরে বসে আছে হুতুম পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচা। অন্ধকারে এই পাখিটি ভিন্ন ভিন্ন আওয়াজে ভয়ঙ্করভাবে ডাকাডাকি করতো। ছোটবেলায় আমরা পেঁচা দেখে, পেঁচার ভয়ংকর আওয়াজে ডাক শুনে ভয়ও পেতাম। কারণ বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য বা কান্না থামানোর জন্য বড়রা পেঁচার ভয় দেখাতো। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। দিন দিন আমাদের দেশে পেঁচার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখন সারাদিন খোঁজাখুজি করেও একটা পেঁচার সন্ধান পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ নানা কারণে বাংলার প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই পাখিটি।
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হকের কাছে পেঁচা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোট ১৭ প্রজাতির পেঁচা রয়েছে যার মধ্যে ১৫ প্রজাতি স্থায়ীভাবে আমাদের দেশে অবস্থান করে। বাকি দুটি প্রজাতি পরিযায়ী, যার অর্থ হলো এরা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করে না। বিভিন্ন সময়ে পরিবেশের কারণে অথবা খাবারের উৎসের কারণে বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করে। আমাদের দেশে কয়েক প্রজাতির পেঁচা চোখে পড়ে। এদের মধ্যে হুতুম পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচা, ভুতুম পেঁচা, নিমখোর পেঁচা ইত্যাদি। পেঁচা নির্জন স্থানে থাকতে ভালবাসে। লক্ষ্মী পেঁচা ছাড়া অন্য প্রজাতির পেঁচা লোকারণ্যে দেখা যায় না। বাংলাদেশে যেসকল পেঁচার দেখা পাওয়া যায় তাদেরকে দুটি গোত্রে ভাগ করা যায়। একটিকে বলা হয় সাধারণ পেঁচা যা 'স্ট্রিগিডি' বংশের অন্তর্গত, আরেকটি হলো লক্ষ্মীপেঁচা যা 'টাইটোনিডি' বংশের অন্তর্গত। বেশিরভাগ পেঁচা তথাকথিত সত্যিকারের পেঁচাদের দলভুক্ত, যাদের মাথা বড় এবং মুখ গোলাকার, লেজ ছোট এবং পালকযুক্ত নীরব আকৃতির। বাকি ডজনেরও বেশি প্রজাতি হল বার্ন পেঁচা, যাদের মুখ হৃদয় আকৃতির, পা শক্তিশালী নখের লম্বা এবং আকার মাঝারি। পেঁচার ঘাড়ের বৈশিষ্ট্য বিস্ময়কর। এদের ঘাড়ে ১৪টি অস্থিসন্ধি থাকে। মানুষের ঘাড়ে থাকে এর অর্ধেক।
তিনি আরও বলেন, পেঁচা পাখিদের দলের হলেও এরা অন্যান্য পাখিদের সাথে একত্রে থাকে না। এরা একাকী নির্জনে বাস করে। এরা নিশাচর পাখি। পেঁচা নিজে বাসা তৈরী করতে পারে না। তারা অন্যের তৈরী করা বাসায় এবং বড় গাছের কুটরি ও বনজঙ্গলে বসাস করে। নারী পেঁচারা আকৃতিতে পুরুষ পেঁচার চেয়ে বড়। পেঁচা সাধারণত এপ্রিল থেকে নভেম্বর মসের দিকে প্রজননক্ষম হয়ে থাকে। একটি স্ত্রী পেঁচা ২-৫টি ডিম দিয়ে থাকে। টানা ১২-১৪ দিনের মতো ডিমে তা দেয়ার পর ধীরে ধীরে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়। ৩০ দিনের মাথায় বাচ্চাগুলোর গায়ে পালক গজায়। আর পরবর্তী এক মাসের মধ্যে এরা উড়তে শেখা শুরু করে।
উপজেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক শামস উদ্দিন আহমেদ বাবুল বলেন, বাংলাদেশে পেঁচা চেনে না এমন মানুষের সংখ্যা কম। তবে শহরের মানুষ পেঁচার ডাকের সাথে তেমন সম্পৃক্ত নয় বললেই চলে। পেঁচাকে অনেকে কুসংস্কারবশত অশুভ পাখি মনে করে থাকে। বস্তুত পেঁচা একটি অতি উপকারী পাখি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পেঁচার ভূমিকা অতুলনীয়। এদের দিনের আলোতে খুব একটা বেশী দেখা যায় না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উঁচু মগডালে বা ঘনপাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। নিশাচর পাখি হওয়ায় শিকারের জন্য রাতের বেলায় স্বাধীনভাবে ঘুড়ে বেড়ায়। কীট-পতঙ্গ, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি পেঁচার খাদ্য। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেঁচার ভূমিকা অতুলনীয়। ফসলি জমিতে পোকা-মাকড় মারার জন্য অতিরিক্ত বিষ ব্যবহার, খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় দিন দিন আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পেঁচা। এইসব পক্ষীকূল যাতে হারিয়ে না যায় তা দেখা আমাদের দায়িত্ব।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম বলেন, পেঁচা একটি উপকারী পাখি। চাষিদের বন্ধু। পেঁচা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও খাদ্যশৃঙ্খলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিকভাবে বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য পেঁচার জুড়ি নাই। এদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদেরই কর্তব্য।
এমএসএম / এমএসএম

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চৌগাছায় শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মানববন্ধন

নাচোলে বিনামূল্যে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে রাসায়নিক সার ও বীজ বিতরণ

কাপ্তাই ১০ আরই ব্যাটালিয়ন কতৃক সহায়তা প্রদান

পটুয়াখালীর বাউফলে কেটে কেটে আ.লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

বাঁশখালীতে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণী উদ্বোধন

বাকেরগঞ্জ গৃহবধূ আসমার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিবকে কুপিয়ে জখম

গোপালগঞ্জে পলিথিন বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

টাঙ্গাইলে অর্ধকোটি টাকার লুন্ঠিত ৭৫ ড্রাম তেল'সহ ২ ডা/কা'ত গ্রেফতার

দাউদকান্দিতে মাইথারকান্দি খালের আবর্জনা অপসারণ উদ্বোধন

সীতাকুণ্ডে সরকারী জায়গা দখলকৃত শিপইয়ার্ড উচ্ছেদ করলো প্রশাসন

বারি’র “জাতীয় পরিবেশ পদক” অর্জন
